চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সিএনজি ট্যাক্সি কাপ্তাই সড়কের যন্ত্রণা

নিজস্ব সংবাদদাতা

১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে গণপরিবহন নেই বললেই চলে। যার ফলে রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিএনজিচালিত অটোরিক্সা এবং ব্যাটারি রিকশার দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে।

 

২০০৯ সালে যাত্রীবাহী লোকাল বাস চলাচল বন্ধের পর থেকে এমন পরিস্থিতি শুরু হয়েছে। একদিকে অবৈধ সিএনজি ও ব্যাটারি রিকশার দৌরাত্ম্য, অন্যদিকে অদক্ষ চালকের কারণে ৫২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই সড়কটিতে দিন দিন বাড়ছে যানজট, নিত্য ঘটছে দুর্ঘটনা। সড়কের উপর গড়ে ওঠা কয়েকটি বাজার এই রুটের যাত্রীদের দুর্ভোগের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

 

কাপ্তাই সড়কের যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে বহদ্দারহাট ও তৎসংলগ্ন বাস টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রাম-চন্দ্রঘোনা, চট্টগ্রাম-ধামাইর হাট ও চট্টগ্রাম-কাপ্তাই রুটে যাত্রীবাহী বিভিন্ন বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। এর আগে এই সড়কে লোকাল বাস চালু থাকলেও তা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে স্বল্প দূরত্বে চলাচল করা যাত্রীদের ভরসা সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যটারি রিকশা। এতে সড়কে দিন দিন বাড়ছে এসব পরিবহনের সংখ্যা।

 

এখন পর্যন্ত কাপ্তাই সড়কে অন্তত ১০ হাজারের অধিক সিএনজি অটোরিকশা এবং পাঁচ হাজারের বেশি ব্যাটারি রিকশা চলাচল করে। যার মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগই রেজিস্ট্রেশনবিহীন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালকরাই চালাচ্ছে এসব সিএনজি অটোরিকশা। আছে কমবয়সী শিশু চালকও।

 

রাঙ্গুনিয়া. রাউজান, হাটহাজারী, কাপ্তাই ও চান্দগাঁও থানার তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে গত এক বছরে অন্তত ৫০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে মারা গেছে ১৫ জন। আহত হয়েছেন শতাধিক যাত্রী। শুধুমাত্র গত তিন মাসে এ সড়কে ১০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে মারা গেছেন ৪ জন। আহত হয়েছেন ২০ জন।

 

সরেজমিন দেখা গেছে, স্বল্পদূরত্বের যাত্রীরা চলাচল করছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারি রিকশায়। সিএনজি ট্যাক্সিতে পেছনের আসনে ঠাসাঠাসি করে বসতে হচ্ছে তিনজনকে। চালকের পাশে অবৈধভাবে অতিরিক্ত আসন সংযোজন করে বসানো হচ্ছে দুই পাশে দু’জন। ফলে একটি অটোরিকশায় যাত্রী থাকে পাঁচজন। অনেক সময় অতিরিক্ত আরও একজন যাত্রীও বামপাশে ঝুলিয়ে নেওয়া হয়, সাথে পণ্যও পরিবহন করা হচ্ছে। অদক্ষ চালকরাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চালাচ্ছে এসব গাড়ি।

 

অন্যদিকে সড়কের বিভিন্ন অলিগলিতে যাতায়াতের জন্য মূল সড়কে এলোমেলোভাবে দাঁড়িয়ে থাকে ব্যাটারি রিকশাা। অবৈধ এই ব্যাটারি রিকশায় পেছনের আসনে দুইজন এমনকি চালকের দুই পাশে আরও দুইজনকে ঝুলিয়ে নিতেও দেখা যায়। গতির তুলনায় নিয়ন্ত্রণের অভাবে প্রায়শই দেখা যায় সড়কে এসব গাড়ি উল্টে আহত হচ্ছেন যাত্রীরা। এছাড়া অদক্ষ এসব গাড়ির চালকরা সড়কের যত্রতত্র গাড়ি রাখা ও চালানোর ফলে দিন দিন সড়কে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

রাঙ্গুনিয়ার রোয়াজারহাটের ওষুধের দোকানদার খোকন দে জানান, সড়কে একসময় বাস চলাচল ছিল। তখন সড়কে এতো গাড়ির চাপ ছিলো না। চন্দ্রঘোনার কদমতলী গ্রামের বাসিন্দা মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘নানা কাজে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়, এতে সড়কে সিএনজি অটোরিকশাই একমাত্র ভরসা। আগে লোকাল বাস, টেম্পোসহ অনেক ধরনের গণপরিবহন ছিলো। এতে ভাড়াও ছিল কম, চলাচলও ছিল নিরাপদ।’ সালাহউদ্দিন নামে এক ব্যাংকার বলেন, ‘কাপ্তাই সড়কে গণপরিবহন না থাকায় সিএনজি অটোরিকশায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এসব গাড়ির বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চালায় অদক্ষ চালকরা। তারা কে কার আগে যাবে, কে কাকে অতিক্রম করবে, এই প্রতিযোগিতায় দুর্ঘটনা সৃষ্টি হয়।’

 

রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা থেকে চট্টগ্রাম শহরে নিয়মিত যাতায়াত করা ব্যাংকার জসিম উদ্দিন জানান, ‘সিএনজি ও ব্যাটারি রিকশাগুলো সড়ক দখল করে যেভাবে দাঁড়িয়ে থাকে, এতে সড়কের অর্ধেক তারাই দখল করে রাখে। কিছু বললে তারা উল্টো দু’লাইন কথা শুনিয়ে দেয়। এদের নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরি।’

 

এই প্রসঙ্গে রাঙ্গুনিয়ার রোয়াজারহাট অটোরিক্সা সমবায় সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলাম মনু বলেন, ‘গাড়ির স্টিয়ারিং ধরতে পারলেই সে রাতারাতি চালক হয়ে যায়। প্রশিক্ষিত চালক ও বৈধ গাড়ি নিশ্চিত করা গেলে এই সড়কে দুর্ঘটনা কমবে। এক্ষেত্রে প্রশাসন উদ্যোগ নিলে আমরা সাহায্য করবো।’

 

এদিকে লোকাল বাস সার্ভিস বন্ধ করা প্রসঙ্গে জেলা পরিবহন বাস ও মিনিবাস ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, ‘২০০৮ সাল থেকেই লোকাল বাসে যাত্রী কমতে থাকে। তখন হাতেগোনা কয়েকজন যাত্রী পাওয়া যেত। দিনদিন লোকসান বাড়ায় মালিকরা লোকাল বাস চলাচল বন্ধ করে দেন। এখন এবি ট্রাভেলস ও শাহ আমানত নামে দুটি স্পেশাল সার্ভিসের পাশাপাশি বিরতিহীন বাস চলছে কাপ্তাই সড়কে।’

 

এ ব্যাপারে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউল গণি ওসমানি বলেন, ‘স্বল্পদূরত্বে চলাচলের জন্য বাস না থাকায় বিপাকে পড়ছেন সাধারণ যাত্রীরা। ফলে বেড়েছে সিএনজি ও ব্যাটারি রিকশা এবং অদক্ষ চালকের সংখ্যা। তবে এসবের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া লোকাল বাস আবার চালুর ব্যাপারে পরিবহন সংগঠনগুলো উদ্যোগ নিলে আমরা সহায়তা করবো। নিজের জীবনের নিরাপত্তা বিধানে কোন যানবাহন নিরাপদ সেক্ষেত্রে যাত্রীদেরও সচেতন হতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

 

 

পূর্বকোণ/জেইউ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট