চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ভাঙনরোধে ব্লক: পাল্টে গেছে নদীপাড়ের চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা

১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ

প্রতিবছর বর্ষা এলেই রাঙ্গুনিয়ার নদীপাড়ের মানুষের মাঝে দেখা যেতো দুঃশ্চিন্তা। ভাঙনের কবলে পড়ে নিশ্চিহ্ন হতো মানুষের ভিটে-মাটি। তবে রাঙ্গুনিয়ার সাংসদ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের হাত ধরে পাল্টে গেছে নদীপাড়ের চিত্র এবং মানুষের জীবন-জীবিকা। ব্লক স্থাপনে রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন নদীপাড় হয়ে ওঠেছে এক একটি পর্যটন-স্পট। এতে নদীপাড়ে উন্নত হচ্ছে সাধারণ মানুষের জীবন-মান।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ধমনী কর্ণফুলী নদীর দুই তীরেই ভাঙনপ্রবণ ছিল। দেশের প্রথম জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য নির্মিত কাপ্তাই বাঁধ সৃষ্টির পর থেকেই কর্ণফুলীতে ভাঙনের তীব্রতা বাড়তে থাকে। কাপ্তাই বাঁধের নিচে সবচেয়ে বেশি ভাঙনের শিকার হতো রাঙ্গুনিয়া। বিশেষ করে উপজেলার চন্দ্রঘোনা, মরিয়মনগর, সরফভাটা, শিলক, কোদালা, বেতাগী ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় দুই তীর থেকেই ভাঙতো কর্ণফুলী নদী। বর্ষা এলেই ভাঙন-আতঙ্কে দিন কাটাতো নদীপাড়ের মানুষের।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইপসার এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এ পর্যন্ত রাঙ্গুনিয়া ও কাপ্তাই উপজেলার কমপক্ষে ১০ হাজার পরিবার শুধু কর্ণফুলী নদীর ভাঙনের কারণে স্থানচ্যুত হয়েছে। তবে নদীপাড়ের এই চিত্র পাল্টে যেতে শুরু করে ২০০৮ সালে ড. হাছান মাহমুদ রাঙ্গুনিয়া থেকে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর। তাঁর নির্বাচনী এলাকার অংশে কর্ণফুলী নদী, ইছামতি নদী ও শিলক নদীর ভাঙন প্রতিরোধে ২০০৮ সালে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্লক বসানো হয়েছে। এরপর কর্ণফুলীর দুই তীরে রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর-খরণদ্বীপ অংশে ভাঙন রোধ এবং রাঙ্গুনিয়ার আরেক খরস্রোতা নদী ইছামতি ও শিলক নদীর ভাঙনের কবল থেকে নদী তীরবর্তী মানুষকে রক্ষা করতে এখন পর্যন্ত আরও অন্তত ৫শ’ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে ব্লক স্থাপন করা হয়েছে। ফলে কর্ণফুলী, ইছামতী ও শিলক নদীর দীর্ঘদিনের ভাঙনের চিরাচরিত চিত্র পাল্টে গেছে। বর্তমানে এসব নদীর শাখা-প্রশাখার ভাঙন ঠেকাতে আরও ৭৫ হাজার বøক বসানো হচ্ছে বলে জানান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের প্রকল্প প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ডাম্পিং ও সিসি ব্লক স্থাপনের পর পাল্টে গেছে নদীপাড়ের সার্বিক চিত্র। উপজেলার চন্দ্রঘোনা, বেতাগী, সরফভাটা, পোমরা, পৌরসভা, মরিয়মনগর, কোদালা ইউনিয়নসহ রাঙ্গুনিয়ার সংসদীয় এলাকা বোয়ালখালী উপজেলার আংশিক এলাকায় ডাম্পিং ও সিসি ব্লক স্থাপন হয়েছে। এছাড়া ইছামতী নদীর দুই পাড়েও ডাম্পিং ও সিসি ব্লক স্থাপন করা হয় এবং এই নদীসহ উপজেলার বিভিন্ন খালে বর্তমানেও ভাঙন প্রতিরোধে ব্লক স্থাপন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যেসব এলাকায় ব্লক স্থাপন হয়েছে সেখানে স্বচ্ছ জলরাশির সাথে নদীপাড়ের মানুষের গভীর সখ্যতা এখন চোখে পড়ার মতো। ব্লক স্থাপনের আওতায় আসা প্রতিটি এলাকা রূপ নিয়েছে একেকটি পর্যটন এলাকা হিসেবে। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ব্লকের ওপর বসে বিভিন্ন দূর-দূরান্তের মানুষ নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেখা যাচ্ছে।

স্থানীয়রা জানায়, স্থানীয় সাংসদ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ নদী ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়ায় নদীপাড়ের মানুষের ভাগ্য বদলে গেছে। যেখানে মানুষের ভিটেমাটি হারানোর হাহাকার ছিল প্রতিনিয়ত, সেই নদীর পাড় এখন মানুষের অবকাশ যাপনের উত্তম স্থানে পরিণত হয়েছে। এতে পাল্টে গেছে নদী পাড়ের মানুষের ভাগ্য।

মরিয়মনগর গ্রামের মো. নুরুল আলম বলেন, ‘চন্দ্রঘোনা, কোদালা থেকে শুরু করে রাঙ্গুনিয়ার শেষ সীমান্ত বেতাগী এবং রাঙ্গুনিয়ার সংসদীয় এলাকা বোয়ালখালীর আংশিক অংশ পর্যন্ত কর্ণফুলী নদীর দুই পাড় যেন এক অপরূপ প্রাকৃতিক পর্যটন স্পট।’

জামাল উদ্দিন নামে সরফভাটার এক বাসিন্দা বলেন, ‘এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক খুলতেই দেখা মেলে নদীপাড়ে সাধারণ মানুষের সময় কাটানোর চিত্র। যেই নদীর পাড়ে একসময় ভয় আর উৎকণ্ঠা নিয়ে মানুষ দিন কাটাতেন, সেখানে এখন মানুষ নিশ্চিন্তে অবকাশ যাপন করছেন।’

সরফভাটা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ চৌধুরী জানান, ‘শুধু নদী ভাঙনই নয়, সবদিক দিয়ে উন্নয়নে পাল্টেছে রাঙ্গুনিয়ার দৃশ্যপট। এসব কোন জাদুর ছোঁয়াতে নয়, রাঙ্গুনিয়ায় এসব সম্ভব হয়েছে রাঙ্গুনিয়ার ভূমিপুত্র ড. হাছান মাহমুদের কল্যাণে। নদী ভাঙন প্রতিরোধে ব্লক স্থাপনের পর বেঁচে যাওয়া ১০০ কোটি টাকা ফেরত যাচ্ছিল। কিন্তু তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এই বেঁচে যাওয়া টাকা দিয়ে ব্লক স্থাপনে নতুন আরও একটি প্রকল্প গ্রহণের ব্যবস্থা করেন। একজন জাতীয় রাজনীতিবিদ হয়েও তিনি যেভাবে রাঙ্গুনিয়া নিয়ে ভাবেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়।’

লেখক : নিজস্ব সংবাদদাতা, রাঙ্গুনিয়া

 

 

পূর্বকোণ/জেইউ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট