চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

অতিথি পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল রাউজান

নিজস্ব সংবাদদাতা

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ৪:৪৬ অপরাহ্ণ

অতিথি পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল যেন রাউজান। শীত মৌসুম আসলেই সুদূর সাইবেরিয়া, এন্টার্টিকাসহ বিভিন্নস্থান থেকে রাউজানের বিভিন্ন দিঘিতে ছুটে আসে হাজার হাজার পাখি। এসব পাখিদের মধ্যে পরীযায়ী পাখিসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি রয়েছে। শীতের শুরুতে রাউজানের বিভিন্ন দিঘিতে ভিড় করে। থাকে মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত। পাখিদের উড়াউড়ি, কিচির মিচির শব্দে মন কাড়ে উৎসুক মানুষের।

 

উপজেলায় সবচেয়ে বেশি অতিথি পাখির দেখা মেলে রাউজানে ঐতিহাসিক কদলপুর ইউনিয়নের লস্কর উজির দিঘিতে। এই দিঘির অতিথি পাখি দেখতে ছুটে আসেন রাউজান ছাড়াও পার্শ্ববর্তী এলাকার উৎসুক পর্যটকরা। একসময় এই দিঘিতে অতিথি পাখি আসার ব্যাপক প্রচার ছিল। তবে এখন শুধু লস্কর উজির দিঘিতেই নয়, অতিথি পাখিদের মিলনমেলা হয় উপজেলার নোয়াজিষপুরের ঈশা খাঁ’র দিঘি, নশরত বাদশার দিঘি, কদলপুরের মানছি পুকুর, জল পাইন্যার দিঘি, নোয়াপাড়ার জালোয়ার দিঘিসহ আরো বিভিন্ন দিঘিতে। এখানকার দিঘিগুলোতে শীতের আমেজ যতই বাড়ে, ততই বাড়ে অতিখি পাখির আগমন। এসব দিঘির আশপাশ সারাদিনই কিচির মিচির ডাকে মুখরিত হয়ে ওঠে।

 

কদলপুর লস্কর উজির দিঘিতে বছরে অধিকাংশ সময় অতিথি পাখি অবস্থান করে এবং সারাবছরই দিঘিতে দেশি পাখি দেখা যায়। তবে শীতকালে এর সংখ্যা বহুগুণে বাড়ে।

 

স্থানীয়রা জানান, অপরূপ সৌর্ন্দযের লীলাভূমি কদলপুর গ্রামের ঐতিহাসিক লস্কর উজির দিঘির রয়েছে এক বাদশাহের ইতিহাস। ৬০ একর আয়তনের এই বিশাল দিঘির পশ্চিম পাড়ে রয়েছে নাম করা এক অলির মাজার। এছাড়াও ওই দিঘির পূর্ব পাড়ে রয়েছে সুন্দর একটি মসজিদ। দিঘির পাড়ের রয়েছে দেখার মতো অসংখ্য সবুজ গাছের বাগান। মোগল ও ব্রিটিশ আমলে রাউজানে প্রভাবশালী উজির নাজির ছিল এই নাম করা লস্কর জমিদার। এই নিয়ে রয়েছে নানা রূপ কথা।

 

বহু বছর ধরে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে শুরু হয় পরিযায়ীসহ বিভিন্ন পাখির কিচির-মিচির ডাক। চলতে থাকে সারাদিন। রাতেও দল বেঁধে ছুটে বেড়ান স্থানীয় এলাকা জুড়ে। দেখা যায়, মাঝে মধ্যে আকাশের বুকে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়তে থাকা অতিথি পাখির দল। এসব পাখির কিচির-মিচির ডাকে মুখরিত হয়ে ওঠে স্থানীয় এলাকার চারিদিক। আবার কখনো দল বেঁধে উড়ে বেড়ায় দিঘির পানির ওপর দিয়ে। হাজার হাজার অতিথি পাখির কোলাহলে পুরো এলাকা এখন মুখরিত।

 

স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল্লাহ আনছারী বলেন, ‘ঝাঁকে ঝাঁকে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আসতে শুরু করে লস্কর উজির দিঘিতে। এসব ভিনদেশি অতিথি পাখিগুলো হয়ে ওঠেছে রাউজানসহ স্থানীয় এলাকার মানুষের কাছে বিনোদনের অন্যতম এক মাধ্যম। তবে এবার কদলপুরের মানছি পুকুরেও বেশ অতিথি পাখির আগমন ঘটেছে।’

 

নোয়াপাড়ার জালোয়ার দিঘি এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘প্রতিদিন বেলা ১১-১২টার মধ্যে এই দিঘিতে অতিথি পাখিসহ হাজার হাজার পাখি অবস্থান করে।

 

পাখিদের উড়াউড়ি স্থানীয়দের আনন্দ দেয়। অনেকে ঢিল মেরে পাখির নাচন দেখতে চায়। সন্ধ্যায় এসব পাখি চলে যায় অন্য অজানা স্থানে।’

নোয়াজিষপুর ইউপি চেয়ারম্যান এম. সরোয়ার্দী সিকদার বলেন, ‘নান্দনিক নোয়াজিষপুর ইউনিয়ন পরিষদ গড়ে ওঠেছে বিশাল ও ঐতিহ্যবাহী ঈশা খাঁ’র দিঘিকে ঘিরে। সেই দিঘিতে অতিথি পাখিদের ব্যাপক পদচারণায় পর্যটন স্পটে পরিণত হচ্ছে। স্থানীয় সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীও এই দিঘির পাখির দৃশ্যে দেখে আনন্দিত হয়েছেন।’

 

স্থানীয় সাংসদ, রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, ‘রাউজান সকল মানুষের নিরাপদ আবাস্থল। পাখিরাও রাউজানকে নিরাপদ মনে করে। অতিথি পাখিদের যেন কেউ ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য স্ব স্ব এলাকার চেয়ারমান ও প্রশাসনকে সজাগ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

 

অনেকে জানিয়েছেন শীত মৌসুমে রাউজানের বিভিন্ন দিঘিতে আসা অতিথি পাখিদের মধ্যে রয়েছে খুরুলে, কুনচুষী, শাবাজ, জলপিপি, হরিয়াল, টুনটুনি, রাজশকুন, লালবন মোরগ, রামঘুঘু, জঙ্গী বটের, কুলাউ, রাজহাঁস, পানি মোরগ, সরালি, পাতি হাঁসসহ ইত্যাদি। এসব পাখি অতিরিক্ত শীত থেকে বাঁচতে হাজার হাজার মাইলের দেশ সাইবেরিয়া, এন্টার্টিকা থেকে ছুটে আসে রাউজানসহ বাংলাদেশের বিভিন্নস্থানে।

লেখক : নিজস্ব সংবাদদাতা, রাউজান।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট