চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

সূর্যমুখী চাষে নবদিগন্তের সূচনা

নিজস্ব সংবাদদাতা

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ৪:২৪ অপরাহ্ণ

সূর্যমুখী ফুল চাষে বিপুল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে রাউজানে। গত কয়েক বছর ধরে এ চাষে আগ্রহ বেড়েছে এখানকার কৃষকদের মাঝে। ফলে প্রতিবছরই সূর্যমুখী ফুলের চাষাবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, সূর্যমুখী ফুলে ফোটা এক ধরনের শুকনো দানা (বিচি) থেকে উৎপাদিত হয় সান ফ্লাওয়ার তেল। যা ভেজালমুক্ত, স্বাস্থ্যসম্মত। যার চাহিদা সারাদেশে অনেক বেশি। এর দামও বেশ ভালো। পাশাপাশি সূর্যমুখী ফুলের উচ্ছিষ্ট থেকে বের হয় ‘খইল’ নামে এক ধরনের গো খাদ্য। বর্তমানে বাজারে ভোজ্য তেলের দাম উর্ধ্বমুখী হওয়ায় প্রান্তিক কৃষক এখন সম্পূর্ণ বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী চাষাবাদ শুরু করেছে। এ বাস্তবতায় রাউজানে কৃষকের মাঝে ‘সূর্যমুখী’র আবাদে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় লাভজনক হওয়ায় দিনদিন এ চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন উপজেলার অসংখ্য সাধারণ কৃষক। এ কারণে বিগত শীতকালীন মৌসুমে উপজেলায় আগের বছরের তুলনায় সূর্যমূখীর চাষাবাদ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে।

 

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, উপজেলায় গত মৌসুমে ৩২ হেক্টর জমিতে সান ফ্লাওয়ার তৈল উৎপাদনের জন্য সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। যা ২০২১ সালে ছিল ১৫ হেক্টর। চলতি মৌসুমে এ চাষাবাদ শত হেক্টর ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশা করছেন রাউজান কৃষি অফিস। কৃষি বিভাগের সার্বিক উদ্যোগ, সার, কীটনাশক প্রদান এবং সর্বোপরি কৃষকদের এ বিষয়ে সঠিকভাবে বুঝিয়ে উদ্বুদ্ধ করার কারণে এ চাষে আগ্রহ বাড়ছে বলে মনে করছেন অনেকে। গত মৌসুমে সূর্যমুখীর দানা (বিচি) মাড়াই করে তেল তৈরি করতে উপজেলায় কোন সূর্যমুখী ঘানি মেশিন না থাকলেও এবার স্থানীয় এমপি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর পক্ষ থেকে উপজেলায় মাড়াই মেশিন বরাদ্দ করা হয়েছে।

 

কৃষি অফিসের মতে, রাউজানে কয়েকবছর পরীক্ষামূলক হাইব্রিড জাতের সূর্যমুখী চাষে অধিক ফলন পাওয়ায় এ খাতে বিপুল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ফলে কৃষকরা ভবিষ্যতে আরো বেশি সূর্যমুখী চাষাবাদ করে উপজেলার ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হতে পারবেন।

 

রাউজান পৌরসভার ৮নম্বর ওয়ার্ডের ঢেউয়া হাজীপাড়া, ৭নম্বর ওয়ার্ড, পশ্চিম গুজরা, ৭নম্বর রাউজান সদর ইউনিয়নের নাতোয়ান বাগিচা, কদলপুর, পূর্ব গুজরা, ডাবুয়া, হিংগলা, চিকদাইরসহ ইত্যাদি এলাকায় গেল মৌসুমে সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে। খরচের তুলনায় দ্বিগুণ লাভের আশায় এ সূর্যমুখী চাষ করেছেন বলে অনেক কৃষক জানিয়েছেন।

 

গত মৌসুমে ঢেউয়া হাজীপাড়া গ্রামে ১৬ গন্ডা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন শরীফপাড়া গ্রামের আবু তৈয়ব। তিনি বলেন, ‘বর্গা নিয়ে গতবছর প্রথম ১৬ গন্ডা জমিতে কৃষি অফিস থেকে বীজ নিয়ে সূর্যমুখী চাষাবাদ করেছি। দেড়মাস শ্রমিক রেখে এবং নিজে প্রচুর খাটুনি করে প্রায় চারমাস পর সূর্যমুখী ফুল আসে। ফুল প্রক্রিয়াজাত করে তৈল রূপান্তর করি। তবে এ চাষে আমি আশাবাদী।’

 

নাতোয়ান বাগিচা এলাকার চাষী মো. মুছা বলেন, ‘বিগত মৌসুমে ৫ কানি জমি বর্গা নিয়ে এবং রাউজান কৃষি অফিস থেকে বীজ নিয়ে ২ মাস আগে এই প্রথম সূর্যমুখী চাষ করেছি। এ চাষে ৫০-৬০ হাজার টাকা খরচ করেছি।

 

রাউজান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, ‘অনেক কৃষক গতবছর পরীক্ষামূলকভাবে সূর্যমুখী চাষ করেছে। এটি লাভজনক হওয়ায় এ চাষ এখানে বিপুল সম্ভাবনা তৈরি করেছে।’

 

উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার কাজী আতিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘সরকারের দেয়া প্রণোদনা, বীজ, সারসহ যাবতীয় সমর্থন দেয়ায় রাউজানে সূর্যমুখী চাষ বেড়েছে। রাউজানে বারি-৩, স্থানীয়, হাইব্রিডসহ তিন জাতে সূর্যমুখী চাষ হয়। সরিষার ঘানি মেশিনে সূর্যমুখী দানা ভেঙে ভোজ্য তেল (সান ফ্লাওয়ার তৈল) তৈরি করতে হয়।’

 

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রতি হেক্টরে ৩ টন বা তিন হাজার কেজি সূর্যমুখীর দানা (বিচি) হয়। পাশাপাশি গরুর খাদ্য ‘খইল’ও পাওয়া যায় সূর্যমুখী থেকে। যা বিক্রি হয় ২০ টাকা কেজিতে। মোট কথা, এ চাষে কৃষকের প্রতি কানিতে ৩৫ হাজার বা তার বেশি লাভবান হয়। তাছাড়া সান ফ্লাওয়ার তৈল বাজারের অন্যান্য তৈল থেকে পিওর ও ভেজালমুক্ত।’

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট