চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বদলে যাওয়া এক জনপদ

মোহাম্মদ আলী  

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ২:৩৮ অপরাহ্ণ

দুই দশক আগেও ছিল অপবাদের তকমা। রাউজানকে বলা হতো শ্রীলংকার ‘জাফনা’ কিংবা লেবাননের ‘বৈরুত’। খুন, রাহাজানি ও সন্ত্রাসের কারণে রাউজানকে ‘সন্ত্রাসের জনপদ’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হতো। তখন স্বস্তিতে ছিল না রাউজানের সাধারণ মানুষ। রুদ্ধশ্বাস আতঙ্ক আর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছিল মানুষের নিত্যসঙ্গী।  খুন-খারাবির কারণে প্রত্যন্ত জনপদের সবুজ ঘাস হতো রক্তাক্ত। কিন্তু দুই দশকের ব্যবধানে রাউজানের সেই চিরচেনা চিত্র এখন আর নেই। সর্বত্র উন্নয়নের ছোঁয়ায় বদলে গেছে উপজেলার সামগ্রিক প্রেক্ষাপট। এখন বলা হয়ে থাকে ‘আধুনিক রাউজান’ কিংবা উন্নয়নের জনপদ। এই আধুনিক রাউজানের রূপকার হলেন রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি। ১৯৯৬ সাল থেকে আজ অবধি নিরন্তর পরিশ্রম করে তিনি রাউজানে ব্যাপক উন্নয়নকাজ করে যাচ্ছেন। এর মাধ্যমে রাউজানকে তিনি নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। তাঁর দূরদৃষ্টি ও সুপরিকল্পিত কর্মকা-ে এ উপজেলার যোগাযোগ, শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, মৎস্য, অবকাঠামো, আবাসন, বিদ্যুৎ, ক্রীড়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে। একই সাথে উন্নতি হয়েছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও।

 

যোগাযোগের ক্ষেত্রেও রাউজানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেছে। উপজেলার প্রায় প্রতিটি বড় সড়ককে করা হয়েছে আরও প্রশস্ত। দৃষ্টিনন্দন করে নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নতুন ভবন। উপজেলা পরিষদের সরকারি প্রতিটি ভবন নির্মাণে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। নির্মাণ করা হয়েছে থানা ভবন ও ফায়ার সার্ভিসের অফিস। পিছিয়ে নেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সও। সেখানেও হয়েছে ব্যাপক উন্নয়নকাজ। কৃষি, মৎস্য, অবকাঠামো ও ক্রীড়া ক্ষেত্রেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।

 

পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা তৈরিতেও পিছিয়ে নেই রাউজান। উত্তর ও দক্ষিণ পাশে তৈরি পিংকসিটি-১ ও পিংকসিটি-২ নামের দুই আবাসিকের প্লট হস্তান্তরের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। রাউজানের এমপি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর একক প্রচেষ্টায় এ দুই পিংকসিটি তৈরি করেছে জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত অধিদপ্তর। বর্তমানে দুই পিংকসিটির প্লট গ্রহীতাদের বাস্তব দখল বুঝিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

 

এমনিতে রাউজানকে বলা হয় জ্ঞানী-গুণী, পীর-আউলিয়ার পীঠস্থান। রাজনীতিতেও আঞ্চলিক ছাড়িয়ে জাতীয় পর্যায়ে রাউজানের মানুষের পদচারণা রয়েছে। কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ বিভিন্ন পেশায় রাউজানের অবস্থান অগ্রসরমান। শিক্ষা ক্ষেত্রেও রাউজানের ঈর্ষণীয় সফলতা রয়েছে। প্রকৌশল শিক্ষার অনন্য প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এর অবস্থান রাউজানে। কাপ্তাই সড়কের পাশে পাহাড়ের পাদদেশে মনোরম পরিবেশের মাঝে চুয়েট উচ্চশিক্ষা বিস্তারে অনন্য ভূমিকা পালন করে আসছে। এই চুয়েটেই বহুল প্রতীক্ষিত ও দেশের বিশ^বিদ্যালয় পর্যায়ে সর্বপ্রথম স্থাপিত হয়েছে ‘চুয়েট শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর’। পাশাপাশি শেখ জামাল ডরমিটরি ও রোজী জামাল ডরমিটরিরও উদ্বোধন করা হয়।

 

এ প্রসঙ্গে চুয়েটের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, ‘শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর প্রযুক্তি খাতে বৈপ্লবিক অবদান রাখবে। এটি ‘তথ্যপ্রযুক্তি খাতে গবেষণা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমকে আরও এগিয়ে নেবে।’

 

জানতে চাইলে রাউজান পৌরসভার মেয়র জমির উদ্দিন পারভেজ দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘রাউজান এক সময় অশান্তির জনপদ ছিল। একসময় রাউজানে প্রতিনিয়ত রক্ত ঝরতো। এ জনপদে তেমন উল্লেখযোগ্য উন্নয়নকাজ হয়নি সে সময়। এ অবস্থায় আধুনিক রাউজানের রূপকার এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি রাউজানের সার্বিক উন্নয়নে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেন। শুধু উন্নয়ন নয়, রাউজানে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে রাউজান এখন শান্তির জনপদে পরিণত হয়েছে। রাউজানে তিনি যেভাবে উন্নয়নকাজ করেছেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে অতীতের কোনো সংসদ সদস্য তা করতে পারেননি।’

 

রাউজানের ৯ নম্বর পাহাড়তলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘যোগাযোগ, শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, মৎস্য, অবকাঠামো, আবাসন, বিদ্যুৎ, ক্রীড়াসহ সর্বক্ষেত্রে রাউজানে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছেন এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি। তিনি রাউজানের প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে নতুন কমপ্লেক্স ও সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন নির্মাণ করেন। এছাড়া চুয়েটে নির্মাণ করেন শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেটর। চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের হাটহাজারী সদর থেকে রাউজান চারা বটতল পর্যন্ত চার লেনে রূপান্তরের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তাছাড়া চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে রাউজানের চুয়েট পর্যন্ত প্রশস্তকরণে ৩২০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। বর্তমানে এটি একনেকের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

 

রাউজানের ৮ নম্বর কদলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দীন আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘সর্বক্ষেত্রে উন্নয়নে রাউজানে আমূল পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে কদলপুর ইউনিয়নেও ব্যাপক উন্নয়নকাজ হয়েছে। ভবিষ্যতে এখানকার মানুষের কল্যাণে আরো কাজ করা হবে।’

 

এদিকে পর্যটন খাতে রাউজানের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। উপজেলার উত্তর-পূর্ব প্রান্তে হলদিয়া, ডাবুয়া, রাউজান, কদলপুর ও পাহাড়তলী ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকা এবং পশ্চিম ও দক্ষিণ প্রান্তে হালদা ও কর্ণফুলী নদীর পাড় ঘেঁষে পর্যটন এলাকা গড়ে তুললে পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়তো বহুগুণ। বিষয়টি নিয়ে  সংশ্লিষ্টরা ভাববেন – এটিই সময়ের দাবি।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট