চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

প্যারালাল খাল: সুবিধা পাচ্ছেন না কৃষকরা

খোরশেদ আলম শিমুল

১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ

হাটহাজারী উপজেলার হালদা নদীর ৮ নম্বর মেখল ইউনিয়নের রহিমপুর এলাকায় আশির দশকে ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে খনন করা হয়েছিল হালদা প্যারালাল (সমান্তরাল) খাল।

 

শুষ্ক মৌসুমে হালদা তীরবর্তী হাটহাজারীর ৬টি ইউনিয়নের অনাবাদি অবস্থায় পড়ে থাকা শত শত হেক্টর জমিকে চাষাবাদের আওতায় এনে এলাকাগুলোকে শস্যভাণ্ডারে পরিণত করাই ছিল এ সেচ প্রকল্পের উদ্দেশ্য। প্রকল্পের আওতায় হালদা নদীর সমান্তারালে খনন করা হয়েছিল প্রায় ১৭ কিলোমিটার নতুন খাল, নির্মাণ করা হয়েছিল ২৮টি স্লুইস গেট এবং স্থাপন করা হয়েছিল উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি পাওয়ার হাউস। প্যারালাল খালটি শুষ্ক মৌসুমে চালু হলেও এর থেকে সুফল পাচ্ছে না ১০ কিলোমিটার এলাকার মির্জাপুর, ধলই ও ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের শতশত কৃষক। ফলে এই খালে পানি নেই, মরিচা ধরেছে স্লুইস গেটগুলোতে। অকেজো হয়ে রয়েছে দুটি পাওয়ার হাউসের ৩৭৫ অশ্বশক্তিসম্পন্ন ছয়টি সেচ পাম্পও। প্রকল্পটি পুরোদমে চালু হলে প্রাণ ফিরে পাবে হালদা প্যারালাল খাল। ফলবে শস্য, ফুটবে কৃষকের মুখে হাসি।

 

প্যারালাল খাল তথা হালদা সম্প্রসারণ সেচ প্রকল্প পুরোদমে চালু করলে ১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমি কৃষিকাজের পাশাপশি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের দেড় লাখ মানুষ এ প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন এলাকার কৃষকরা। হাটহাজারীর উত্তর এলাকায় শুস্ক মৌসুমে ইরি চাষ, মৌসুমী সবজি ও ফুল চাষ এবং বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলের পানি দ্রুত নিষ্কাশনের জন্য ১৯৮৮ সালে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি হাতে নেয়।

 

হালদা নদীর মেখল ইউনিয়নের রহিমপুর পাম্প হাউস থেকে ৩ নম্বর মির্জাপুর ইউনিয়নের চারিয়া মুরাদপুর পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার লো-লেবেল ক্যানেল। মির্জাপুর ইউনিয়ন থেকে উত্তরে ১ নম্বর ফরহাদাবাদ ইউনিয়ন পর্যন্ত দীর্ঘ ১১ কিলোমিটার হাই-লেবেল ক্যানেল। বর্তমানে শুষ্ক মৌসুমে পানি পান লো-লেভেল ক্যানেল (নিম্ন স্তরের খাল) এলাকার আওতাধীন হাটহাজারী উপজেলার মেখল রহিমপুর, মোজাফ্ফরপুর, ভাগিরঘোনা, জাফরাবাদ, চাঁদগাজী, পৌরসভার মোহাম্মদপুর, ফটিকা, মীরেরখিল, পূর্ব ও পশ্চিম আলমপুর, খীল্লাপাড়া, মির্জাপুর এলাকার মুরাদপুর, কাজীপাড়া ও পশ্চিম চারিয়ার কৃষকরা।

 

অন্যদিকে প্যারালাল খাল থেকে সুফল পাচ্ছে না ১০ কিলোমিটার এলাকার হাই লেভেল ক্যানেলের (উচ্চস্তর খাল) আওতাধীন এলাকা। এগুলো হচ্ছে উত্তর হাটহাজারীর মির্জাপুর ইউনিয়নের কালাবাদশাহ পাড়া, পূর্ব চারিয়া, সন্দ্বীপপাড়া, ওবাইদুল্লাহ নগর, খীলাপাড়া, পাহাড়তলী, হাসিমনগর, মাহমুদাবাদ, মোহছেনাপাড়া, শফিনগর, এনায়েতপুর, ধলই, বাসুয়ার ঢালা, উদালিয়া ও ছোট কাঞ্চনপুর। এসব এলাকার কৃষকরা অবশ্য প্রকল্প শুরুর পর থেকে কখনও পানি পাননি। অথচ ধান ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি ফসলের জন্য উপযুক্ত স্থান হিসেবে পরিচিত এসব এলাকা। প্রয়োজনীয় সংস্কার না হওয়ায় ভরাট হয়ে গেছে প্যারালাল খালের পাঁচ কিলোমিটার লো-লেভেল খাল। একই দশা ১১ কিলোমিটার হাই লেভেল খালের বড় একটি অংশেরও। বিভিন্ন স্থানে ভেঙে পড়েছে খালের পাড়।

 

১৯৮৭-৮৮ অর্থবছরে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহয়তায় পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। হালদা নদীর বোয়ালিয়া স্লুইস গেট সংযোগ পুল থেকে পশ্চিম ও উত্তরে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এল আকৃতির প্রকল্পের কৃত্রিম খালকে দু’টি অংশে বিভক্ত করা হয়। সেচ সহজ করার জন্য প্রকল্পের মোহনায় স্থাপন করা হয় রিভার পাম্পিং প্ল্যান্ট এবং ৬ কিলোমিটার দূরে স্থাপন করা হয় হাই লেভেল পাম্পিং প্ল্যান্ট।

 

১৯৯৪ সালে পরীক্ষামূলকভাবে প্রকল্পটি চালু করা হয়। প্রকল্পটি নির্মাণের ব্যাপক অনিয়ম হওয়ায় দেখা দেয় নানা ত্রুটি। এরপর ১৯৯৭-৯৮ অর্থ বছরে প্রকল্পের কিছু সেকেন্ডারি কাজ শুরু হয়। ১৯৯৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে তৎকালীন পানিসম্পদমন্ত্রী প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনের সময় পরীক্ষামূলকভাবে সুইচ অন করেন। সে সময় নানা অনিয়মের কারণে কয়েক ঘণ্টা চলার পর আবার বন্ধ হয়ে যায় প্রকল্পের কাজ। এরপর মন্ত্রী আবার প্রকল্পটির কাজ শেষ করার নির্দেশ দিলেও ৩/৪ বছর পরেও বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। এরপর প্রকল্পের মেখল থেকে চারিয়া মির্জাপুরের অংশের তৃতীয় দফা কাজ শেষ করে গত ২০১৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি হাটহাজারীর সাংসদ তৎকালীন পানি সম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন। এর ফলে এসব এলাকার কৃষক শুল্ক মৌসুমে প্যারালাল খাল থেকে সুবিধা পাচ্ছেন। এছাড়া চারিয়া ইজতেমার সময় খালের পানি ব্যবহার করেন বিভিন্ন স্থান থেকে আসা হাজার হাজার মুসল্লি।

 

চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব), হাটহাজারী পওর উপ-বিভাগ মোহাম্মদ আরিফুর রহমান বলেন, ‘হালদা সেচ প্রকল্পটি এলাকার মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রকল্পটি পুরো সংস্কার করে চালু করার জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ে অর্থ বরাদ্দের জন্য একটি আবেদন করেছি। অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলে খালটি চালু করা যাবে।’

 

সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি বলেন, ‘হাটহাজারী এলাকার কৃষকদের কথা চিন্তা করে হালদা প্যারালাল খালটি করা হয়। ২০১৭ সালে খালটির উদ্বোধন করার পর বর্তমানে কৃষকরা এই খাল থেকে সুবিধা ভোগ করছেন। হাটহাজারী আলমপুর এলাকা থেকে উত্তরের খালটি দ্রুত যেন চালু করা যায় সে ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে দ্রুত ব্যবস্থা করা হবে।’

 

 

পূর্বকোণ/জেইউ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট