চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

তিন বাধা কাটলেই কৃষিতে বিপ্লব হবে

সীতাকুণ্ড সংবাদদাতা

১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ২:১৩ অপরাহ্ণ

সবজিভাণ্ডার সীতাকুণ্ডের কৃষি এখন তিন সমস্যায় জর্জরিত। সমস্যাসমূহ হচ্ছে- তীব্র পানি সংকট, উপকূলীয় এলাকায় লবণ পানি ও হিমাগারের অভাব। ফলে অনেক সময় চাষাবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে হতাশ হয়ে পড়েন কৃষকরা। তবে এত সমস্যার মধ্যেও এখানে বিপুল পরিমাণ সবজির আবাদ হচ্ছে। যা স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল এমনকি বিদেশেও রপ্তানি হয়। কৃষকরা মনে করেন এখানে কৃষিতে যেসব প্রতিবন্ধকতা আছে সেগুলো সমাধান করা গেলে এ এলাকার কৃষি দেশের অর্থনীতিতে আরো ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।

 

কৃষক ও কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সীতাকুণ্ডে মোট আবাদী জমির পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার হেক্টর। এই জমিতে মৌসুম ভেদে সারাবছর নানারকম সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। এখানে প্রায় ৩৭ হাজার কৃষক চাষাবাদ করছেন নিয়মিত। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে জমিগুলো নানা সবজিতে ছেয়ে থাকে।

 

এ এলাকার সবজি স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম, রাজধানী ঢাকাসহ রপ্তানি শেষে বিভিন্ন হাত ঘুরে রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। ফলে প্রতিবছর সবজি রপ্তানি থেকে লাখ লাখ ডলার আয় করছে দেশ। এতে কৃষকরাও লাভবান হয়ে ভাগ্য বদল করছেন। কিন্তু সবজি উৎপাদন করে লাভবান হলেও এখানে চাষাবাদে বেশ কিছু বড় সমস্যার মুখোমুখিও হন কৃষকরা। এসব সমস্যা সমাধান করা গেলে এ অঞ্চলের চাষীরা কৃষিতে বিপ্লব ঘটাতে পারবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

 

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কৃষক ও কৃষি বিভাগের সাথে কথা বলে কৃষির ব্যাপক সম্ভাবনার পাশাপাশি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাও চিহ্নিত করা গেছে।

 

পরিদর্শনকালে সংশ্লিষ্টরা জানান, সীতাকুণ্ডকে বলা হয় সবজিভাণ্ডার। এর কারণ, এ উপজেলার সর্বত্রই প্রচুর পরিমাণে সবজির আবাদ হয়ে থাকে। কৃষকরা জানান, সীতাকুণ্ডে সারাবছর সবজি উৎপাদন হয়। হরেকরকমের সবজিতে ছেয়ে থাকে এ উপজেলার ফসলি জমি। এখানে উৎপাদিত সবজির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শিম, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, মিষ্টি কুমড়ো, ঝিংগা, চিচিঙ্গা, বেগুন, বরবটি, করলা, কাঁকরোল, পেঁপে, সজিনা, ঢেরস প্রভৃতি।

 

উপজেলার মুরাদপুরের অন্যতম কৃষক মোহাম্মদ আলী ও আইয়ুব আলী জানান, সীতাকুণ্ডে বিপুল পরিমাণ সবজির আবাদ হয়। তারা দু’জনেই প্রচুর সবজি চাষ করেন। মৌসুম ভেদে কখনো শিম, টমেটো, লাউ, বরবটি, কাঁচা মরিচ, মিষ্টি কুমড়োসহ বিভিন্ন রকম সবজি চাষ করেন তারা। তাদের ক্ষেতে উৎপাদিত এ সবজি স্থানীয় বাজারে বিক্রয়ের পাশাপাশি পাইকারদের হাত ধরে চলে যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

 

কৃষক আইয়ুব আলী বলেন, আমরা বাপ-দাদার আমল থেকে বংশানুক্রমে কৃষক। কৃষি কাজ করেই সংসার চালাই। সীতাকুণ্ডের মাটি দারুণ উর্বর। এখানে কোন সবজি চাষ করলেই ভালো ফলন হয়। তাই আমরা প্রতিবছর লাখ লাখ টাকার সবজি উৎপাদন করে বিক্রি করি। কিন্তু এখানে চাষাবাদে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা বা সমস্যাও আছে। এসব সমস্যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পানি সংকট। শুকনো মৌসুমে পাহাড়ি ছরাগুলো শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। সবজি ক্ষেতে টিউবয়েল বসিয়েও পানি পাওয়া যায় না। ফলে তীব্র পানি সংকটে অনেক জমি অনাবাদী ফেলে রাখতে হয়। অথচ পানি পাওয়া গেলে সমগ্র উপজেলার এসব পতিত জমিতেও কোটি কোটি টাকার সবজি উৎপাদন হতো। আবার এ উপজেলায় নেই কোন হিমাগার। ফলে অতিরিক্ত সবজি সংরক্ষণ করারও কোন উপায় নেই। ফলে শীত মৌসুমে টমেটোসহ বিভিন্ন সবজির দাম কমে গেলে ফেলে দেয় কৃষক। যা সংরক্ষণ করা গেলে অবশ্যই কৃষি আরো সমৃদ্ধ হতো।

 

একই কথা বলেন, বারৈয়াঢালার কৃষক হুমায়ন কবিরও। তিনি বলেন, অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে আমাদেরকে চাষাবাদ করতে হয়। এখানে পানি সংকট আর একটি কোল্ড স্টোরেজ খুবই দরকার। এ দুটি জিনিস থাকলে আরো কোটি কোটি টাকার সবজি উৎপাদন হয়ে স্থানীয় কৃষকদের পাশাপাশি দেশও ব্যাপকভাবে লাভবান হতো। এছাড়া আরেকটি সমস্যা আছে উপকূলীয় এলাকা হওয়ায় অনেক জমিতে লোনা পানি প্রবেশ করে। ফলে সেসব স্থানে নিয়মিত সবজিগুলো উৎপাদন হয় না। যা উন্নতির পথে অন্তরায়।

 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাবীবুল্লাহ বলেন, ‘সীতাকুণ্ডের মাটি খুবই উর্বর। এ কারণে এখানে প্রচুর সবজি উৎপাদন হয়। এখানকার শিম-টমেটো দেশের বাইরে রপ্তানি হয়ে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে। তবে এখানকার কৃষিতে যে কিছু সমস্যা আছে তাও মিথ্যা নয়। এসব সমস্যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো এখানে পানি সংকট। এছাড়া সবজি সংরক্ষণের জন্য একটি কোল্ড স্টোরেজ নেই, ফলে অতিরিক্ত সবজি সংরক্ষণ করা যায় না। এছাড়া লবণাক্ততার জন্য উপকূলীয় এলাকায় চাষাবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’

 

তিনি বলেন, ‘যদি কৃষি জমিতে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা করা যায় তাহলে এখানে কৃষি আরো সমৃদ্ধ হতো। এখানে কোল্ড স্টোরেজ থাকলে প্রতিবছর অতিরিক্ত সবজি সংরক্ষণের মাধ্যমে আরো কোটি কোটি টাকার সবজি বিক্রি করা সম্ভব হতো। তবে এখনো কোল্ড স্টোরেজ স্থাপন বা পানির বিষয়ে কোন প্রকল্প আসেনি। আমরা চেষ্টা করছি।’

 

 

পূর্বকোণ/জেইউ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট