চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

সীতাকুণ্ডে নামছে পানির স্তর

সীতাকুণ্ড সংবাদদাতা

১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১:৪৬ অপরাহ্ণ

সীতাকুণ্ডের সর্বত্র পানির স্তর হু হু করে নামছে। এর ফলে বহু টিউবয়েল ও কুয়ো অকেজো হয়ে গেছে। এমনকি অনেক স্থানে গভীর নলকূপেও পানি উঠছে না। যা ভাবিয়ে তুলেছে সাধারণ মানুষকে।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিগত দুই দশক ধরে সীতাকুণ্ডে পানির স্তর ক্রমশ নেমে যাচ্ছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ফসলি জমি থেকে বসত বাড়ি পর্যন্ত সর্বত্রই। ইতোমধ্যেই এলাকার বহু টিউবয়েল অকেজো হয়ে পড়েছে। এমনকি যারা লাখ লাখ টাকা খরচ করে গভীর নলকূপ স্থাপন করছেন তাদের কলেও অনেক সময় পানি মিলছে না।

 

এলাকাবাসীরা জানান, উপজেলার সলিমপুর থেকে সৈয়দপুর পর্যন্ত সর্বত্রই এখন তীব্র পানি সংকট। এ পানি সংকটের নানামুখী সমস্যার কথা জানিয়েছেন ভুক্তভেীরা।

 

উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের ফকিরহাটের বাসিন্দা মো. মনজুর আলম বলেন, সলিমপুরে এখন টিউবয়েল স্থাপন করাই কঠিন হয়ে গেছে। মাটির অনেক গভীরে গিয়ে পানি মেলে না। ফলে আগে যেসব টিউবয়েল স্থাপন করা ছিলো সেগুলোর বেশিরভাগেই পানি উঠে না। আবার নতুন করে টিউবয়েল স্থাপন করতে গেলে মাটির অনেক গভীরে গিয়ে তবেই পানি পাওয়া যায়। এ জন্য যে বিশাল ব্যয় হয় তা করার ক্ষমতা বেশিরভাগ সাধারণ মানুষের নেই।

 

উপজেলা জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শুধুমাত্র পানি সংকটের কারণে উপজেলায় অসংখ্য নলকূপ অকেজো হয়ে আছে। এমনকি কুয়ো, গভীর নলকূপেও ঠিক মতো পানি মেলে না। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, সীতাকুণ্ডে পানির স্তর অনেক নিচে। চারটি ইউনিয়ন সৈয়দপুর, বারৈয়াঢালা, মুরাদপুর, বাড়বকু-ে কিছুটা কাছে। তাও সেখানে বহু নলকূপে পানি উঠে না।

 

এর কারণ, নলকূপগুলো যখন স্থাপন করা হয়েছিলো তখন ৫০-৬০ ফুট নিচে পানি পাওয়া যেত, এখন পানির স্তর নেমে গেছে ১০০ ফুটেরও নিচে। ফলে আগে স্থাপন করা অধিকাংশ কল এখন অনেকটা অকেজো। তবে পানির সবচেয়ে বেশি দুরবস্থা পৌরসভাসহ অন্যান্য ইউনিয়নগুলোতে। পৌরসভাতে এখন ১৫০ ফুটেরও বেশি নিচে পানির স্তর পাওয়া যায়। ফলে এখানেও টিউবয়েলগুলোতে শুকনো মৌসুমে পানি পাওয়া যায় না। সাব মার্সিবল টিউবয়েল কিংবা ৪-৫’শ ফুট গভীর নলকূপ স্থাপন করলেই পানি পাওয়া যায়। আশংকার কথা হলো এই স্তর এ বছর যতটুকু নিচে নামছে কয়েকবছর পর দেখা যায় আরো অনেক নিচে নেমে গেছে। এ কারণে সাধারণ মানুষ পানি সংকটে পড়েছে।

 

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী রাশেদুজ্জামান আরো বলেন, এখানে পানি সংকটের আরেকটি বড় কারণ এখানে বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান পানি তুলছে। তারা অনেক শক্তিশালী মোটর বসিয়ে মাটির গভীর থেকে বিপুল পরিমাণ পানি উত্তোলন করায় আশপাশের গ্রামগুলোতে পানি সংকট হয়। এদিকে প্রকৌশলী রাশেদুজ্জামানের কথার সত্যতা পাওয়া যায় এলাকাবাসীর কথাতেও।

 

সীতাকুণ্ড পৌরসদরের মহাদেবপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. আনোয়ার হক বলেন, পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আগে আমাদের বাড়িতে যে টিউবয়েলটি ছিলো এখন সেটিতে পানি উঠছে না। বাড়ির নারীরা দূরে অন্য একটি বাড়িতে গিয়ে পানি আনতে হয়। তাই এখন আবার একটি টিউবয়েল স্থাপন করতে গিয়ে দেখি ১২০ ফুট যাবার পরও পর্যাপ্ত পানি নেই! শেষে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ করে একটি মার্সিবল টিউবয়েল স্থাপন করেছি। কিন্তু যেভাবে পানির স্তর নামছে তাতে কতবছর এটি ব্যবহার করা যাবে তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

আশংকার কথা জানিয়েছেন কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোর্শেদুল আলম চৌধুরীও। তিনি বলেন, আমার বাড়ির টিউবয়েলেই এখন পানি উঠছে না। পুরো ইউনিয়নে পানির জন্য হাহাকার। তিনি বলেন, তার ইউনিয়নেই বেশ কয়েকটি বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে। এসব প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী যন্ত্র বসিয়ে ২ হাজার ফুট গভীরে গিয়ে বোরিং করে পানি তুলছে। এর ফলে চারিদিকে পানির জন্য হাহাকার। এ অবস্থা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে শুকনো মৌসুমে কোন পানি পাওয়া যাবে না। এখন ওয়াসার পানি সাপ্লাই সময়ের দাবি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

 

 

পূর্বকোণ/জেইউ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট