চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

বসন্ত বাতাস ফুলের বাগানে

এম জাহেদ চৌধুরী

১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১:০৭ অপরাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়ার চাষীরা বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছে। গোলাপ, রজনিগন্ধা, গ্লাডিওলাসসহ নানা রঙের ফুল ও তার গন্ধে মাতোয়ারা চকরিয়ার বরইতলী ইউনিয়নের চারপাশ। বিয়ে, গায়ে হলুদ, বিভিন্ন সভা-সমাবেশসহ জাতীয় অনুষ্ঠানের সৌন্দর্য বাড়াতে প্রয়োজন হয় ফুলের। তাই বলতে গেলে সারা বছরই ফুলের চাহিদা থাকে। পুরো দেশের মধ্যে সাভার, যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জেলায় ফুল চাষ হলেও গত ১দশক ধরে দক্ষিণ চট্টগ্রামের চকরিয়ায় উৎপাদিত ফুল বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও রাজধানীর চাহিদা পূরণে অবদান রেখে আসছে।

 

জানা যায়, কক্সবাজারের চকরিয়া বরইতলী ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে যাওয়া কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দু’পাশ জুড়েই বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয় ফুলের। গ্রামীণ জনপথটিতে প্রায় সারা বছর গোলাপ চাষ হলেও মূলত শীতকালেই ফুলের আসল মৌসুম। এসময় গ্লাডিওলাসসহ গোলাপ ফুল পরিপূর্ণ যৌবন লাভ করে। বিকিকিনিতে হাসি ফুটে চাষিদের মুখে। কাপড় ও প্লাস্টিকের তৈরি কৃত্রিম ফুলের কারণে আসল ফুলের বাজার চাহিদা হ্রাস পেলেও কমেনি কদর। এবার সে কদর আকাশ চুম্বি হয়ে উঠেছে পরপর দুই দিনে তিনটি দিবসকে ঘিরে।

 

১৪ ফেব্রুয়ারি বসন্তবরণ, বিশ্ব ভালবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত হয়। এই দুটি দিবসে ফুল সরবরাহ করে অধিক মুনাফা অর্জনের লক্ষে বেশ ঘাম ঝরানো খাটুনি কাটছে ফুল চাষিরা। এক সপ্তাহের মধ্যে অন্তত অর্ধ কোটি টাকার ফুল বিক্রয়ের টার্গেট নিয়ে চকরিয়ার ফুল চাষি ও ফুলকন্যারা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। ১১ ফেব্রুয়ারি থেকেই চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফুল সরবরাহ বাড়িয়েছেন স্থানীয় চাষিরা।

 

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এক পাশে সবুজ ধান ও সবজির মাঠ, অন্য পাশে গাছ-গাছালিতে ভরপুর বনের পাহাড়। গ্রাম বাংলার এ রূপকে আরো বেশি সুরভিত করে তুলেছে গোলাপ ও গ্লাডিওলাসের বাগান।

 

মহাসড়ক লাগোয়া বরইতলী ইউনিয়নের সড়কের দু’পাশে একের পর এক ফুলের বাগান। পর্যটন জেলা কক্সবাজারমুখি পর্যটকদেরও নজর কাড়ে এ সুরভিত ফুল। বরইতলী ছাড়াও সাহারবিল, দুটিসহ পুরো উপজেলায় শতাধিক ব্যক্তির ফুলের বাগান রয়েছে। অন্তত ১’শ একর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে করা হয়েছে এ ফুল চাষ। মাঠে গেলে দেখা মিলে বেশ ক’জন নারী-পুরুষের। তাদের কেউ বাগান পরিচর্যা করছিলো। কেউ তুলছিলো ফুল। আবার কেউ বান্ডিল করে খামার বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছিল। সেখান থেকে রিক্সা ও ভ্যান গাড়িতে করে স্টেশনে নিয়ে পিকআপ বোঝাই করে বিক্রয়ের জন্য চট্টগ্রামসহ নানাস্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

 

চাষিদের ভাষ্য মতে, সুর্যের তাপ বাড়ার আগেই গ্লাডিওলাস তুলে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার আড়তে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ভোর থেকে প্রায় সারাদিন তোলা হয় ফুল।

 

স্থানীয় ফুল চাষি এনামুল হক প্রায় দুই একর জমিতে গোলাপ ও এক একর জমিতে গ্লাডিওলাস এবং চাষি আজাদ হোসেন তিন একর জমিতে গোলাপ ও ১ একর ৪০ শতক জমিতে গ্লাডিওলাসের চাষ করেছেন। দুইজনের ফুল বাগানেই ১০-১৫ জন করে শ্রমিক রয়েছে। শ্রমিকদের সিংহভাগই নারী। কম মজুরিতে নিরলস পরিশ্রম করতে পারাই ফুল বাগানের কাজে নারী শ্রমিকদের চাহিদাও বেশি।

 

আজাদ হোসেন ও এনামুল হক আরও বলেন, ‘একটি গ্লাডিওলাস উৎপাদনে খরচ হয় ৪-৫ টাকা আর বিক্রয় হয় ১২-১৩ টাকা। গোলাপ উৎপাদনে চল্লিশ থেকে পঞ্চশ পয়সা ফুল প্রতি খরচ হয়। বিক্রয় হয় ৬ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত। গত কয়েকদিন ধরে দৈনিক ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিকিকিনি হচ্ছে। সারা বছরই ফুলের চাহিদা আছে তবে উৎসবগুলোতে চাহিদা বেশি বড়ে গেলে লাভও বেশি হয়।’

 

বরইতলী ফুল বাগান মালিক সমিতির সাবেক আহবায়ক মঈনুল ইসলাম বলেন, ‘চকরিয়ায় শতাধিক ব্যক্তি অন্তত কয়েক’শ একর জমিতে ফুল চাষ করেছে এবার। দুই বছর পূর্বে তিন থেকে সাড়ে তিনশ একর জমিতে ফুল চাষ হলেও কৃত্রিম ফুলের কারণে চাষের পরিমাণ কমে গেছে। তাছাড়াও গত বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় অনেক বাগান নষ্ট হয়েছিল। এবার আবারও নতুন করে চারা রোপন করছে চাষিরা। তবে, এবছর বিভিন্ন দিবসের পাশাপাশি সারা বছরই ভালো ফুল বিক্রি হয়েছে। এবার চাষিরা ভালোই মুনাফা পাবে বলে আশা করছি।’

 

তিনি বলেন, ‘শুধু মাত্র শতাধিক চাষি নয়, চকরিয়ার ফুল বাগানে শ্রমজীবির কাজ করে ৩ থেকে ৪ হাজার শ্রমিক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে। অনেক শ্রমিক প্রথমে অন্যের জমিতে কাজ করলেও এখন নিজেরাও জমি বর্গা নিয়ে বাণিজ্যিক চাষ শুরু করেছে।’

 

চকরিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এসএম নাসির হোসেন বলেন, ‘চকরিয়ার সরকারি হিসেবে ১২০ একর জমিতে গোলাপ ও ৮৭ একর জমিতে গ্লাডিওলাস চাষ হয়েছে। এক কানি জমিতে বছরে গোলাপ উৎপাদন হয় প্রায় ৪৭ হাজার এবং গ্লাডিওলাস উৎপাদন হয় প্রায় ১০ হাজার করে। সরকারিভাবে ফুল চাষিদের সাহায্য করার উল্লেখযোগ্য কোন সুযোগ নেই। তাই তাদের সেরকম সহযোগিতা দিতে পারছি না। শুধুমাত্র ফুল চাষ নিয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকি আমরা।’

 

 

পূর্বকোণ/জেইউ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট