চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মিলল দেশের সমুদ্র উপকূল ও মোহনায়

১৭৭ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল শনাক্ত

ইফতেখারুল ইসলাম

১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১১:২৩ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের ১৯টি উপকূলীয় জেলার সমুদ্র উপকূল ও মোহনায় ১৭৭ ধরনের সি-উইড বা সামুদ্রিক শৈবালের প্রজাতি শনাক্ত হয়েছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপ ছাড়াও টেকনাফ, বাকখালি, ইনানী, কুয়াকাটা ও সুন্দরবনে সি-উইড পাওয়া যায়। বর্তমানে বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলের অর্থায়নে বাংলাদেশ মেরিন ফিসারিজ এসোসিয়েশন কক্সবাজারের রেজুখালে শৈবাল চাষের একটি পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করছে বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট।

 

প্রকল্প পরিচালক (শৈবাল চাষ) মো. শিমুল ভূঁইয়া বলেন, ‘সি-উইড বা সামুদ্রিক শৈবাল সমুদ্রের অগভীর অংশে জন্মে। এরা পাথর, বালি, খোলস, পরিত্যক্ত জাল ও অন্যান্য গাছে জন্মায়। ১৬৭০ সালে সর্বপ্রথম জাপানে সামুদ্রিক শৈবাল চাষ শুরু হয়। বাণিজ্যিকভাবে শৈবাল চাষ শুরু হয় ১৯৪০ সালে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী সামুদ্রিক শৈবালের চাহিদা হল ২৬ মিলিয়ন টন। ২৬ মিলিয়ন টন সামুদ্রিক শৈবালের বর্তমান বাজার মূল্য ৬.৫ বিলিয়ন ইউ এস ডলার। বর্তমান চাহিদার ৮০ ভাগ সামুদ্রিক শৈবাল উৎপাদন করে এশিয়ার দেশসমূহ (চীন, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, জাপান, দক্ষিণ ও উত্তর কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড)। শুধুমাত্র চীন একাই ৪০ ভাগ সামুদ্রিক শৈবাল উৎপাদন করে। সামুদ্রিক শৈবালের বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে।

 

বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সমুদ্র বিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর বলেন, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সকাল বেলা দাঁত ব্রাশের পেস্ট থেকে শুরু করে ওষুধ, খাদ্য ও কসমেটিক্স শিল্পে সি-উইড ব্যবহৃত হয়। অ্যাগার ও ক্যারাজিনান এর মত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সামুদ্রিক শৈবাল থেকে পাওয়া যায়। ভালো মানের ১ কেজি অ্যাগারের দাম ৫০০০ ইউএস ডলার। অ্যাগার প্রধানত গ্রেসিলারিয়া ও জেলেডিয়াম থেকে পাওয়া যায়। আর্জেন্টিনা, কানাডা, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া এবং জাপান প্রধান অ্যাগার উৎপাদনকারী দেশ। ক্যারাজিনান সর্বপ্রথম আয়ারল্যান্ডে উৎপাদিত হয়। কনদ্রাস ক্রিসপাস, ইউকিহেমা, কাপ্পা ফাইকাস থেকে ক্যারাজিনান পাওয়া যায়। আমেরিকা, ডেনমার্ক ও ফিলিপাইন বিশ্বে প্রধান ক্যারাজিনান প্রসেসিং এর দেশ। খাদ্য হিসেবে সি-উইড চীন, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ডসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বেশ জনপ্রিয়। জাপানে ফরফাইরা নোরি, লেমিনারিয়া ও সেক্কাহরিনা কম্বু, উনডারিয়া পিন্নাটিফিডা ও পালমারিয়া পালমাটা ওকামি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

 

তিনি বলেন, আমাদের দেশে সারগাসাম, হিপনিয়া, হেলিমেনিয়া, কিউলারপা, হাইড্রোক্ল্যাথরাস, অ্যাম্ফিওরা প্রজাতি সাধারণত বেশি পরিমাণ লক্ষ্য করা যায়। বর্তমানে কক্সবাজারের নুনিয়ারছড়া ও মহেশখালী চ্যানেলে সি-উইড চাষ করা হয়। ১৫ দিন অন্তর অন্তর সি-উইড সংগ্রহ করা হয়। একজন কৃষক মাত্র ১২০০ টাকা ব্যয় করে প্রতি মৌসুমে ১২০০০ থেকে ১৪০০০ টাকা আয় করতে পারে। প্রতিমণ শুকনো সি-উইড এর দাম ছয় হাজার থেকে সাত হাজার টাকা । রাখাইন সম্প্রদায় সি-উইড ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে যুগ যুগ ধরে।

 

প্রকল্প পরিচালক মো. শিমুল ভূঁইয়া বলেন, ব্লু-ইকোনমির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো সি-উইড। এদেশের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ ও উচ্চ বাজারদরের কারণে সি-উইড নিয়ে ব্যাপক গবেষণা এখন সময়ের দাবি। সি-উইড গবেষণাই পারে ব্লু-ইকোনমির স্বপ্নকে একধাপ এগিয়ে নিতে এবং দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে।

 

পূর্বকোণ/জেইউ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট