চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

৩ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ নেই

এস.এম মোরশেদ মুন্না

১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১:২৮ অপরাহ্ণ

ফটিকছড়ি উপজেলায় পতিত জমির পরিমাণ ৩ হাজার ১ শত ৪ হেক্টর অর্থাৎ ১৯ হাজার ১ শত ৬৭ ‘কানি’। যার মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আঙিনা) ৫শত ৫৮ হেক্টর অর্থাৎ ৩হাজার ৪শত ৪৬ কানি এবং উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অন্যান্য পতিত জমির পরিমাণ ২হাজার ৫শত ৪৬ হেক্টর অর্থাৎ ১৫হাজার ৭শত ২১ কানি জমি।
চাষাবাদের আওতায় আনা হলে উক্ত পতিত জমিতে শাকসবজি, সরিষা, চিনাবাদাম, সয়াবিন, ভুট্টা, মুগডাল, সূর্যমুখী, ডাল জাতীয় পণ্য ও মিষ্টিআলুর চাষাবাদ করা যাবে।
ফটিকছড়ি উপজেলায় মোট ফসলি জমির পরিমাণ ৩৫হাজার ৯শত ৭৩ হেক্টর। যার মধ্যে একফসলি জমির পরিমাণ ২২হাজার ৪শত ৮৬ হেক্টর, দুইফসলি ৫হাজার ৫শত ৩ ও তিনফসলি জমির পরিমাণ ৮শত ২৭ হেক্টর। উপজেলাতে মোট ফসলি জমির ৩০ভাগ মৌসুমী পতিত জমি রয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র মতে, উক্ত পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আনা গেলে বছরে আনুমানিক কোটি টাকা সমপরিমাণ খাদ্যশস্য উৎপাদন হবে। যা খাদ্য সংকট মোকাবিলায় জোগান হিসাবে কাজ করবে।
জানাগেছে, অধিকাংশ জমিকে পতিত করেছে বর্গাচাষারা। কেননা, জমি মালিক’কে ভাগ দিয়ে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে চাষারা বিস্তীর্ণ জমি পতিত করেছে। মৌসুমী জমি পতিত হয় মূলতঃ চাষাদের গাফিলতি এবং পানির সংকটের কারণে। এছাড়া উপজেলার পাহাড়ি ও টিলাময় জায়গাতে পানির অভাবে জমি পতিত হচ্ছে। শ্রমিক সমস্যা অর্থাৎ শ্রমিকের মজুরি বাড়তি হওয়াতে খরচ পোষানো যাচ্ছে না বলে জমি চাষাবাদে চাষাদের অনাগ্রহে জমি পতিত হওয়ার অন্যতম কারণ। তবে, উপকরণ সহায়তা দিলে অর্থাৎ কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ সার দিয়ে সহায়তা করা হলে, উদ্বুদ্ধকরণ অর্থাৎ সভা, সেমিনারের মাধ্যমে কৃষকদের পতিত জমির বিভিন্ন ইতিবাচক দিক তুলে ধরে চাষাবাদে আগ্রহী করতে পারলে পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আনা সম্ভব। এছাড়া পতিত জমি এগ্রো ফার্মের আওতায় আনা গেলে পতিত জমি হ্রাস পাবে, উৎপাদন বাড়বে, বেকারদের কর্মসংস্থান সুযোগ হবে। এরজন্য উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে, এগিয়ে আসার সুযোগ করে দিতে হবে এবং উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
ফটিকছড়ি উপজেলাতে ৬০হাজার ৫শত ৩০ কৃষক পরিবার রয়েছে। যারমধ্যে বড় চাষা (যাদের ১৯ খানির উপর জমি চাষ রয়েছে) এমন পরিবারের সংখ্যা ১হাজার ৪শত ৮৭। মাঝারি (যাদের ৬-১৯ কানি পর্যন্ত জমি চাষ রয়েছে) এমন পরিবার ১৫হাজার ৬শত ৮জন। ক্ষুদ্র (যাদের ১-৬কানি পর্যন্ত চাষ রয়েছে) এমন পরিবারের সংখ্যা ১৫হাজার ৮শত ৬৫। প্রান্তিক (যাদের ১কানি পর্যন্ত চাষ রয়েছে) এমন পরিবারের সংখ্যা ১৯হাজার ৮শত ৮০ এবং ভূমিহীন (৫ শতকের নিচে) এমন পরিবারের সংখ্যা রয়েছে ৭হাজার ৬শত ৯০।
ফটিকছড়ির খিরাম ইউনিয়নের প্রেমপুর গ্রামের বাসিন্দা শাহাআলম জানান, শুধু প্রেমপুর নই খিরামের বিস্তীর্ণ এলাকায় আমন মৌসুম ছাড়া পানির অভাবে অন্যান্য মৌসুমে চাষ হয় না। ফলে এসময় খিরামের বিস্তীর্ণ জমি পতিত থাকে। সরকারি উদ্যেগে গভীর নলকূপের ব্যবস্থা করা হলে চাষের আওতায় আসবে উক্ত পতিত জমি।
নারায়নহাট ইউনিয়নের ধামারখিল এলাকার বাসিন্দা নোয়া মিয়া জানান, আমার টিলাময় উঁচু, নিচু অনেক জায়গা পতিত অবস্থায় রয়েছে। পানির অভাবে চাষের আওতায় আনা যাচ্ছে না। এগ্রো ফার্মের যথেষ্ট সুযোগ থাকার পরও টাকার অভাবে পারছি না।
বাগান বাজার ইউনিয়নের ইসলামপুর এলাকার আমীর আলী জানান, আমাদের এলাকায় বেশিরভাগই এক ফসলি জমি অর্থাৎ বছরে একবার চাষ হয়। অন্য সময়ে পতিত থাকে। আমাদের এলাকায় উঁচু টিলাময় জায়গাগুলো সরাবছরই পতিত থাকে। পানির অভাবে চাষ হয় না। কোন উদ্যেক্তা এগিয়ে আসলে পতিত জায়গায় গুলো এগ্রো ফার্মের আওতায় আনা যেতো।
উপজেলা কৃষি অফিসার মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, উপজেলার পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে পারলে খাদ্যশস্য স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে অন্যত্রেও সরবারহ করা যাবে। সেই সাথে খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলায় যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে। আমরা প্রথম পর্যায়ে মোট পতিত জমির অর্ধেক চাষাবাদের আওতায় আনতে কাজ করছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাব্বির রহমান সানি পূর্বকোণকে বলেন, উপজেলার কয়েকটি সমস্যার মধ্যে পতিত জমি একটি বিরাট সমস্যা। পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে পারলে বিভিন্ন দিক হতে উপজেলাবাসী উপকৃত হবেন। ইতোমধ্যে আমরা পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে কাজ শুরু করেছি। জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে কয়েকটি বৈঠকও হয়েছে। আশাকরি সফল হবো।

 

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট