চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সংকটের মধ্যে ফটিকছড়ির চা বাগান

নিজস্ব সংবাদদাতা

১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১:২১ অপরাহ্ণ

বড় রকমের সংকটকাল অতিক্রান্ত করছে ফটিকছড়ির চা বাগানগুলো। এ অবস্থা চলতে থাকলে চা বাগানগুলো অচিরেই লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়ে যেতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন বাগান সংশ্লিষ্টরা। মোস্তফা গ্রুপের বাগান উদালিয়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ফটিকছড়িতে মোট চা বাগান রয়েছে ১৮টি। বাগানগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কর্ণফুলী চা বাগান, রামগড় চা বাগান, উদালিয়া চা বাগান, বারমাসিয়া চা বাগান, রাঙ্গাপানি চা বাগান, এলাহী নুর চা বাগান, ডলু কৈয়াছড়া চা বাগান, আছিয়া চা বাগান, হালদা ভ্যালি চা বাগান, পঞ্চবটী চা বাগান, মোহাম্মদ নগর চা বাগান, মা-জান চা বাগান, নিউ দাঁতমারা চা বাগান, নেপচুন চা বাগান, চৌধুরী টি এস্টেট, নাছেহা চা বাগান। এসব বাগানে মোট ৩৩ হাজার ৯শ একর জমিতে চা চাষ হয়। মোট ১৮টি বাগানে বর্তমানে প্রায় ২২হাজার শ্রমিক কর্মচারী রয়েছেন। তিনি ২০২১ সালের হিসাব দিয়ে বলেন (২২সালের হিসাব চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষে জানা যাবে) এসব চা বাগান থেকে মোট ১কোটি ৯লাখ কেজি চা সারা বছরে উৎপাদিত হয়েছে। কিন্তু তিনি এবং অন্যান্য বাগান ব্যবস্থাপক সূত্র জানিয়েছে, কিছুদিন আগে টন প্রতি কয়লার দাম ছিল সাড়ে ৮হাজার টাকা, বর্তমানে সেই কয়লার দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে টন প্রতি সাড়ে ২৮ হাজার টাকা থেকে ৩০হাজার টাকা। আগে ডিজেলের দাম ছিল লিটার প্রতি ৬৫ টাকা, বর্তমানে সেটি কিনতে হচ্ছে লিটার প্রতি ১শ ১৫ টাকায়। আগে শ্রমিকের মজুরি ছিল দৈনিক ১শ ২০ টাকা, বর্তমানে শ্রমিকের মজুরি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১শ ৭০টাকায়। বিপরীত দিকে প্রতি কেজি চা এর আগে দাম ছিল ২শ ২৫ থেকে ২শ ৩০ টাকা। বর্তমানেও তাই আছে।

কাজেই চা উৎপাদন খরচ আগের তুলনায় অনেক গুণ বেড়ে গেলেও চা পাতার দাম সেভাবে বাড়েনি। ফলে বাগানগুলো দিনে দিনে লোকসানী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে যাচ্ছে। সহসা এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া না হলে এ শিল্পটি দ্রুতই মুখ থুবড়ে পড়বে বলে আশংকা করছেন বাগান মালিক- ব্যবস্থাপকরা।
অপরদিকে ফটিকছড়ি সীমান্ত লাগোয়া নেপচুন চা বাগানের পাশে মানিকছড়ি উপজেলার সেমুতং গ্যাস ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করে পাইপলাইনের মাধ্যমে ফটিকছড়ির উপর দিয়েই উক্ত গ্যাস জাতীয় গ্িরডে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্ত ফটিকছড়ির একমাত্র নেপচুন চা বাগান ছাড়া আর কোন বাগানে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়নি। অথচ চা বাগানগুলোতে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার দাবি বাগান মালিকদের দীর্ঘ দিনের। এ ব্যাপারে বাগান কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে বহু আবেদন নিবেদনও করা হয়েছে বলে বাগান মালিক সূত্রে জানা গেছে।
ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম আরো জানান, বাংলাদেশে চা উৎপাদন হয় সিলেট এবং চট্টগ্রামে। কিন্ত সিলেটের অধিকাংশ বাগানে গ্যাস সংযোগ দেওয়া থাকলেও চট্টগ্রাম তথা ফটিকছড়িতে সে সুবিধা নেই। ফলে সিলেটের কাছে চট্টগ্রামের চা শিল্প মার খাচ্ছে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম জেলায় মোট ২২টি চা বাগান থাকলেও তার ১৮টিই হচ্ছে ফটিকছড়িতে। বাকি চারটি রাঙ্গুনিয়া ও বাঁশখালীতে অবস্থিত। কিন্তু চা উৎপাদনের বর্তমান অস্বাভাবিক ব্যয় বৃদ্ধি রুখা না গেলে এ শিল্পে বড় রকমের সংকট তৈরি হতে পারে বলে ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম জানান। সেই সাথে গ্যাস সংযোগ থাকার কারণে সিলেটের চা শিল্পের সাথে চট্টগ্রামের চা শিল্প প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানান। তিনি জ্বালানি হিসেবে কয়লা এবং ডিজেলের পরিবর্তে গ্যাসংযোগ দিলে এবং সেই সাথে স্বল্প সুদে (কৃষকদের সুদের হারের সমপরিমাণ) পর্যাপ্ত কৃষি ঋণ দিলে এ শিল্পকে রুগ্ন অবস্থা থেকে কাটিয়ে তোলা সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন।

লেখক : নিজস্ব সংবাদদাতা, ফটিকছড়ি

 

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট