চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বাঁশখালী পাবলিক লাইব্রেরি

১০ বই থেকে সাড়ে চার হাজার বইয়ের ভাণ্ডার

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১২:২২ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৬৩ কিলোমিটার দূরের এক জনপথ বাঁশখালীর ছনুয়া ইউনিয়নের এক অজ গাঁ খুদুকখালী। বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চায় অনগ্রসর ও রক্ষণশীল জনপদ। সকল ধরনের কূপমণ্ডুকতা ঝেড়ে এই জনপথে আলো জ্বালাচ্ছে উপকূলীয় পাবলিক লাইব্রেরি।

১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল সাগরতীরের এই জনপথ। ভয়াল সেই ২৯ এপ্রিলকে সামনে রেখে ২০১০ সালে এই অন্ধকার এ জনপদে ছোট একটি কক্ষে যাত্রা শুরু করে এই উপকূলীয় পাবলিক লাইব্রেরি। ১০টি বই, একটি টেবিল আর চারটি চেয়ার নিয়ে যাত্রা করা সেই গণপাঠাগারটি এখন মহিরুহে রূপ নিয়েছে। বর্তমানে ২২ শতক জমির ওপর নির্মাণ করা হয়েছে আধুনিকমানের পাঠাগার।

২০১৭ সালে পাঠারগারটি জাতীয় গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত সনদ পায়। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র থেকে বই ও উপহার পেয়েছে কয়েকবার। বর্তমানে এই পাঠাগারের বইয়ের সংখ্যা সাড়ে ৪ হাজার।

‘অন্ধকারে আলোর প্রদীপ’ এই স্লোগানকে ধারণ করে যাত্রা করা পাঠাগারটি সত্যিকারে আলো জ্বালাচ্ছে এক অন্ধকারাচ্ছন্ন জনপদে। বই পড়া আর সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চার স্বপ্ন-সারথি প্রান্তিক জনপদের শত শত শিক্ষার্থী ও তরুণ-যুবক। দেশ-বিদেশের নানা লেখকের বইয়ের সোঁদা-স্বাদ নিচ্ছেন তারা। পাঠাগারের সদস্য সংখ্যা তিন শতাধিক। তিনজন নারী সদস্য পাঠাগার দেখভাল করেন। শতাধিক নারী সদস্য লাইব্রেরি থেকে নিয়মিত বই ধার নিয়ে ঘরে পড়েন। ১৫ দিনের জন্য বই ধার নিয়ে পড়ার সুযোগ পান সদস্যরা।

ছোট আকারের পাঠাগারে এসেছে নান্দনিকতা। চেয়ার, টেবিল আর বইয়ের শেল্ফ ও মনীষীদের উপদেশ-উদ্দীপনামূলক বাণী সাজানো রয়েছে দেয়ালে দেয়ালে। বিকেল হলেই বই পড়ুয়াদের আনাগোনা আর কোলাহলে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। নিরিবিলি ও স্বাচ্ছন্দ্যে বই পড়া ছাড়াও সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চা, আড্ডা ও অনুষ্ঠানাদির জন্য রয়েছে বড় আকারের হল রুম।

পাঠাগারের সদস্য কলি আকতার জানান, ‘এখান থেকে শিক্ষাসামগ্রী উপহার পাই। এতে বই পড়ায় উৎসাহ-আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। আমরা বই ধার নিয়ে বাড়িতে পড়ে নির্দিষ্ট সময়ে আবার ফেরত দেই।’

তাহমিনা আকতার নামে আরেক পাঠক বলেন, ‘তিন বছর ধরে নিয়মিত এই পাঠাগারে বই পড়তে আসি। আমাকে অনেকেই বইয়ের পোকা বলে।’

কানিছ ফাতেমা বলেন, ‘হাজার হাজার বই। বইয়ের পাতায় চোখ বুলাতেই আনন্দ পাই। বই এখন আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু।’

লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম মোহাম্মদ হাবিব জানান, ‘সুবিধাবঞ্চিত পিছিয়ে পড়া এলাকা এখন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও বইপ্রেমী মানুষের কোলাহলে পরিপূর্ণ থাকে। বইয়ের দুনিয়ায় মেতে ওঠেন তারা।’

লাইব্রেরিতে বই ছাড়াও নিয়মিত জাতীয়-স্থানীয় তিন পত্রিকা পড়ার সুযোগ পান পাঠকেরা। দেশ-বিদেশের খবরাখবর পান তারা। এছাড়াও নিয়মিত কবিতা আবৃতি, সাহিত্য চর্চা-সাহিত্য সভা ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সেমিনার-আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। প্রতিমাসে শতাধিক শিক্ষার্থীকে শিক্ষাসামগ্রী প্রদান করা হয়।

গ্রন্থাগারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সাঈফী আনোয়ারুল আজিম বলেন, ২০১০ সালে একটি সাইক্লোন শেল্টারে চারটি চেয়ার, একটি টেবিল আর একটি বুক সেলফ নিয়ে লাইব্রেরির যাত্রা শুরু হয়। এক বছর পর স্থায়ী রূপদান করা হয়। ২০১৫ সালে লাইব্রেরির নামে ২২ শতক জমি কেনা হয়। অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে এই গ্রন্থাগারকে স্থায়ী প্রতিষ্ঠানে রূপদান করা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছাস ও দুর্যোগপূর্ণ উপকূলীয় অঞ্চলে আবহাওয়ার বিপদ সংকেত পেলেই বিপুল পরিমাণ বই, চেয়ার, টেবিল ও স্থাপনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষ। পাকা ভবন স্থাপনের দাবি এলাকাবাসীর।

বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সারাদেশের এক হাজার গ্রন্থাগারে স্থাপন করেছে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার। প্রান্তিক এই গণপাঠাগারেও স্থাপন করা হয় বঙ্গবন্ধু ও মুজিব কর্নার। এর ফলে হাজারো শিক্ষার্থী খুব সহজে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার সুযোগ লাভ করেছে। এই উপলক্ষে ‘পড়ি বঙ্গবন্ধুর বই সোনার মানুষ হই’ শীর্ষক কর্মসূচিতে চট্টগ্রাম বিভাগে প্রথম স্থান লাভের সম্মানা পায় এই লাইব্রেরি।

পূর্বকোণ/ জেইউ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট