চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

লামায় দিগন্তজুড়ে শুধুই তামাক ক্ষেত

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা

২৬ জানুয়ারি, ২০২৩ | ১১:১৭ পূর্বাহ্ণ

বান্দরবানের ‘লামা উপজেলা’ তামাক চাষের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। প্রায় ৩২ বছর ধরে তামাক চাষ চলছে লামার সব ইউনিয়নে। পৃষ্ঠপোষকতা ও বিক্রয়ের নিশ্চয়তায় দিন দিন তামাকের আগ্রাসন বেড়েই চলেছে। চলতি মৌসুমে চারটি কোম্পানী ৩৭০০ কৃষকের মাধ্যমে ৮২০০ একর জমিতে তামাক চাষ করেছে। এয়াড়াও কোম্পানিগুলোর রেজিস্ট্রেশন বহির্ভূত তামাক চাষির সংখ্যাও প্রায় ৬ শতাধিক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরাও প্রায় ৮শ একর জমিতে এবার তামাক চাষ করেছে। সবমিলিয়ে প্রায় ৯ হাজার একর জমিতে তামাক চাষ করা হয়েছে। তামাক কোম্পানিগুলো তাদের রেজিস্ট্রেশনভুক্ত প্রায় তিন হাজার ৫শ চাষীকে ইতিমধ্যে বীজ, পলিথিন, কীটনাশক, সার ও ঋণ প্রদান করেছে।

 

 

কৃষি অফিসের হিসাব মতে, গত মৌসুমে প্রায় ৭১০ হেক্টর ও চলতি মৌসুমে কোম্পানিগুলো উপজেলায় ৮০০ হেক্টর অর্থাৎ ১ হাজার ৯৭৬ একর জমিতে তামাক চাষ করেছে। তবে কৃষি অফিসের পরিসংখ্যানটি সঠিক নয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ সরকার ও বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান ইক্ষু, তুলা, পেঁপে, ভুট্টা ও সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধকরণের ফলে প্রায় ৫ শতাধিক কৃষক তামাক চাষ থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। পৃষ্ঠপোষকতা, বিক্রয়ের নিশ্চয়তা ও বিকল্প কিছু পেলে চাষিরা এ চাষ ছাড়বেন বলে জানান তারা।

 

 

পৌরসভার সাবেক বিলছড়ি, ছাগলখাইয়া, হরিণঝিরি, কলিঙ্গাবিল, সদর ইউনিয়নের মেরাখোলা, মাতামুহুরী নদীর রাজবাড়ি পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থান সরজমিনে পরিদর্শনে দেখা গেছে, বাড়ি আঙ্গিনা থেকে শুরু করে সর্বত্রই তামাক চাষ করা হয়েছে। উপজেলা প্রতিটি বড় বিল, নদী-খাল-ঝিরির পাড়সহ আবাদি অধিকাংশ জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। যেদিকে চোখ যায় শুধু তামাক চাষ। নদী-খালের ৫০ ফুটের মধ্যে তামাক চাষে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও তা উপেক্ষা করে নদীর দু’পাড়ে তামাক চাষ করছে কৃষকরা। এক্ষেত্রে বিএটিবি’র চাষিরা আইনটি মেনে চললেও অন্য কোম্পানির চাষিরা তা মানছে না।

 

 

সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থানে সরকারি জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। সরকার তামাক চাষের বিরোধিতা করছে কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি অফিসের অব্যবস্থাপনা এবং অবহেলার কারণে চাষিরা তামাক চাষের মহোৎসবে মেতে উঠেছে। বেপরোয়া তামাক চাষের ফলে পরিবেশ ও সমাজের নানা ক্ষতি, সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যহানি ও নেশাগ্রস্থতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। তারপরেও সরকারি জমিতে ও বন বিভাগের রিজার্ভ এলাকায় কীভাবে তামাক চাষ হয় তা সচেতন মহল প্রশ্ন তুলেছেন।

 

 

পৌরসভার রাজবাড়ি গ্রামের সবজি চাষি সুলতান, শাহজাহানসহ অনেকে জানান, তামাক চাষিদের অগ্রিম লাগিয়তের কারণে সবজি চাষের জন্য জমি পাওয়া যায় না। তবে তামাক চাষ নিয়ে চাষিদের গল্প ভিন্ন। তারা বলেন, আমরা তামাক চাষ করেই স্বাবলম্বী হয়েছি।

 

 

এদিকে অর্ধশত তামাক চাষিদের উপর জরিপ চালিয়ে জানা যায়, ৪ কানি তথা ১৬০ শতক তামাক জমির তামাক পোড়ানো জন্য একটি তামাকচুল্লী প্রয়োজন হয়। প্রতি কানি ২ লোড (তামাক প্রক্রিয়া জাত) করে ৪ কানি জমি হতে উৎপাদিত তামাকে প্রায় ৮টি লোড হয়। প্রতি লোড তামাক পোড়াতে ৬ দিন সময় লাগে আর ৩০ থেকে ৩৩ মণ লাকড়ি প্রয়োজন হয়। এতে করে আটটি লোডের মাধ্যমে ৪ কানি জমির তামাক পোড়াতে একটি তামাকচুল্লীতে এক মৌসুমে ২৪০ মণ লাকড়ি লাগে। উপজেলার ৫ হাজার ৩শ তামাকচুল্লীতে এক মৌসুমে ১২ লক্ষ ৭২ হাজার মণ বনের লাকড়ি প্রয়োজন হয়। যাতে করে বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল ধ্বংস হচ্ছে।

 

 

লামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন চন্দ্র বর্মন বলেন, যেভাবে তামাক চাষের আবাদ বাড়ছে তা যথারীতি অত্র জনপদের জন্য হুমকি স্বরুপ। ধান ও শস্য চাষে কৃষকদের ফিরিয়ে আনতে সরকার কর্তৃক স্বল্প সুদে কৃষি ঋণ, কৃষি উপকরণ সহজলভ্যসহ নানান পদক্ষেপ সরকার ইতিমধ্যে গ্রহণ করেছে। সরকারিভাবে তামাক চাষ বন্ধে সুনির্দিষ্ট কোন আইন না থাকায় এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না।

পূর্বকোণ/আরএ

 

 

 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট