বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তে গত বুধবার (১৮ জানুয়ারি) থেকে টানা তিনদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গোলাগুলিতে সীমান্তে বসবাসরত লোকজনের মাঝে উৎকন্ঠা বিরাজ করছে।
শনিবার (২১ জানুয়ারি) ভোর সকালে থেমে থেমে সকাল ৮টা পর্যন্ত গোলাগুলির শব্দ শুনা গেছে বলে দাবি করছেন এলাকাবাসী। তবে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এ বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়াতে কোন বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে না।
স্থানীয় চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, সীমান্তের গোলাগুলি গত বছর ২০২২ সাল থেকে শুরু হয়েছে। তখন ঘটনা ঘটেছিল মিয়ানমার ভূখণ্ডে। এখন সীমান্তের গা ঘেঁষে জিরো পয়েন্টে গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। তাও মিয়ানমারের দুই বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের মধ্যে। তবে খবর পাওয়া যাচ্ছে মিয়ানমারের ইয়াবা আর গরুর চোরাচালান নিয়ে চাঁদা আদায়ের আধিপত্য বিস্তারে এসব গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে।
আমার জানা তথ্যগুলি আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে জানানোর চেষ্টা করি।
জানা যায়, গত বুধবার (১৮ জানুয়ারি) থেকে মিয়ানমারের আরাকানের স্বাধীনতাকামী সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন ও বিচ্ছিন্নতাবাদী আরকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির মধ্যে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গোলাগুলি চলছিল। এসব গোলাগুলিতে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে আরও জানা যায়, বুধবার (১৮ জানুয়ারি) ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত গোলাগুলি চলছিল। উভয় পক্ষের সংঘর্ষে তিনজন নিহত আর দুইজন গুলিবিদ্ধের খবর পেলেও তবে দায়িত্বশীল উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কোন রকম বক্তব্য নেওয়া যায়নি। তবে আহতরা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ঘটনার দ্বিতীয় দিন ১৯ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যার দিকে জিরো লাইনের রোহিঙ্গা শিবিরে মিয়ানমারের দুই রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের পর দুর্বৃত্তরা জিরো লাইনে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের ঝুপড়িগুলো পুড়িয়ে দেওয়ার পর সেখানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিলো।
নিরাপত্তায় সীমান্তে অতিরিক্ত সতর্কে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া সেখানে র্যাব মোতায়েন করা হয়েছিল।
আর এদিকে চলমান ঘটনায় গত শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) রাত ৮টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত ফের গোলাগুলি শুনতে পায় সীমান্তের লোকজন। এসময় গোলাগুলির শব্দে নির্ঘুম রাত পার করে দেয় সীমান্তবাসী।
রোহিঙ্গা শিবিরে আগুন আর দফায় দফায় গোলাগুলির ঘটনায় আতঙ্কে সাহস্রাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তুমব্রু স্কুল ও আশেপাশে আশ্রয় নিয়েছে। এসব জায়গাতেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তবে দ্রুতগতিতে দায়িত্বশীল কর্মকর্তরা এসব রোহিঙ্গাদের নতুন করে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়ার আশা করছে এলাকাবাসী। কারণ শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ব্যাঘাত ঘটতে পারে বেশীদিন সময় নিলে।
স্থানীয়দের কথা মতে জ্বলিয়ে দেয়া আগুনে জিরো লাইনের রোহিঙ্গা শিবিরে প্রায় ৮৫ শতাংশ ঝুপড়িঘর পুড়ে গেছে বলে জানা যায়।
উল্লেখ্য, বুধবার সকালে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মিয়ানমারের দুই বিচ্ছিন্নতাবাদী রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মধ্যে সংঘর্ষে হামিদ উল্লাহ নামে এক রোহিঙ্গা যুবক নিহত এবং মোহিদ উল্লাহ ও ১২ বছরের এক শিশু আহত হয়। এ ঘটনায় রোহিঙ্গা শিবিরে আগুনে প্রায় ৮৫ শতাংশ ঝুপড়িঘর পুড়ে যায়।
পূর্বকোণ/শামীম/মামুন/পারভেজ