চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

তিন বছরেও খোঁজ মিলেনি রোহিঙ্গা শরণার্থী অহিদার

নাজিম মুহাম্মদ

৪ জানুয়ারি, ২০২৩ | ১১:২৬ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশি নাগরিক পরিচয়ে পাঁচলাইশ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে নিজের পাসপোর্ট তৈরি করতে এসেছিলেন রোহিঙ্গা শরণার্থী অহিদা। নগরীর চাক্তাইয়ের বাসিন্দা জনৈক সিরাজুল ইসলাম অহিদাকে নিয়ে এসেছিলেন পাসপোর্ট তৈরি করে দিতে। শরণার্থী তালিকার ডাটাবেজে আঙুলের ছাপ মিলে যাওয়ায় অহিদা ও সিরাজকে আটক করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেন পাসপোর্ট কর্মকর্তারা। পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক বাদী হয়ে এ ব্যাপারে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলাও দায়ের করেন।

 

মামলা দায়েরের তিন মাসের মাথায় জামিন পান অহিদা। এরপর আত্মগোপনে চলে যান তিনি। তিন বছরের বেশি সময় পার হলেও অহিদার খোঁজ মিলেনি। চাক্তাইয়ের যে ঠিকানায় অহিদা জন্মনিবন্ধন নিয়েছিলেন সেখানেও এখন আর কেউ থাকে না। চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালীর বাসিন্দা জাহেদ হাসান নামের একব্যক্তি অহিদার জামিন নামায় স্বাক্ষর করেছিলেন। পুলিশ তদন্তে গিয়ে জানতে পারে জাহেদ নামের কোন ব্যক্তি সেখানে থাকে না। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনেভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

 

পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের মামলা ছাড়াও ২০২১ সালের ১৪ জুন একই ঘটনায় আরো একটি মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় অহিদাকে জন্মনিবন্ধন সনদ দেওয়া পাথরঘাটা ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর মো. ইসমাইল, কাউন্সিলর অফিসের জন্মনিবন্ধনকারী সুবর্ণ দত্ত, দালাল সিরাজুল ইসলাম, অহিদা, অহিদার বাবা মোহাম্মদ ইসমাইল ও মা মেহের জানকে আসামি করা হয়। দুদকের কর্মকর্তা (চাকরিচ্যুত) মো. শরীফ উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, অহিদার বাবা ইসমাইল সৌদি আরবে থাকেন। ২০১২ সালে মহেশখালীর মাতারবাড়ির ঠিকানায় পাসপোর্ট তৈরি করে সৌদি আরব চলে যান তিনি। ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ এবং ২০২১ সালের ৩০ মে দুই দফায় তিনি পাসপোর্ট নবায়ন করেন। এখনও তিনি সৌদি আরব আছেন। মহেশখালীর মাতারবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এনামুল হক চৌধুরী রোহিঙ্গা শরণার্থী ইসমাইলকে জন্মসনদ দেন। পরবর্তীতে নগরীর পাথরঘাটার ২৬৮ আশরাফ আলী রোডের সুজা কাঠগড়ের ঠিকানায় অহিদার বাবা ইসমাইল ও মা মেহের জান জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি করেন। আর মা, বাবার জাতীয় পরিচয় পত্র ব্যবহার করে অহিদা জন্মনিবন্ধন নেন পাথারঘাটা ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিস থেকে। মূলত সৌদি আরবে বাবার কাছে চলে যেতে পাসপোর্ট তৈরি করতে এসেছিলেন অহিদা। মহেশখালী থেকে নগরীর পাথরঘাটায় রোহিঙ্গা শরণার্থী ইসমাইল কীভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেছেন তার উত্তর মেলেনি এখনো।

 

এজাহারে যা বলা হয়েছে : ২০১৯ সালের ২০ নভেম্বর অহিদা ও সিরাজুল ইসলামকে আসামি করে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক আইয়ুব আলী। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা শরণার্থী অহিদার বয়স ২৫ বছর। তার বাবার নাম মো. ইসমাইল, মা মেহের জান। ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর পাঁচলাইশ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট তৈরি করতে আসেন তিনি।

 

আবেদনপত্র ও পাসপোর্ট আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় দলিলপত্রাদি যাচাইকালে সন্দেহ হয়। পরে রোহিঙ্গা শরাণার্থীর তালিকা সম্বলিত সফটওয়্যারে যাচাই করলে অহিদার আঙুলের ছাপ মিলে যায়। পরবর্তীতে নিজেকে মিয়ানমারের নাগরিক বলে স্বীকার করেন অহিদা। সিরাজুল ইসলাম নামে এক দালালের মাধ্যমে তিনি পাসপোর্ট তৈরি করতে আসেন বলে জানান।

 

অহিদা ও সিরাজকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হলে বিজ্ঞ আদালত তাদের কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন। গ্রেপ্তারের তিন মাসের মাথায় ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি অহিদা এবং ১৪ অক্টোবর সিরাজুল ইসলাম জামিনে কারাগার থেকে বের হন। জামিন পাওয়ার পর আত্মগোপনে চলে যান অহিদা এবং দুই মাসের মাথায় মারা যান সিরাজ ।

 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র পরিদর্শক ইলিয়াছ খান জানান, জামিন পাওয়ার পর দালাল সিরাজুল ইসলাম মারা যান। অহিদা আত্মগোপনে চলে যান। পাথারঘাটার যে ঠিকানায় অহিদা জন্মনিবন্ধন নিয়েছিলেন সেখানেও এখন কেউ থাকে না। জাহেদ হাসান নামে ফাঁসিয়াখালীর যে ব্যক্তি অহিদার জামিননামা স্বাক্ষর করেছেন ওই ঠিকানা এ নামে কেউ থাকে না। তারপরও আমরা অহিদাকে খুঁজে বের করতে চেষ্টা করছি।

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট