চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নামের মিল থাকায় ৯ দিন ধরে সাজা খাটছেন ব্যবসায়ী লিটন

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুণ্ড

১৮ ডিসেম্বর, ২০২২ | ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ

সীতাকুণ্ডে নামের মিল থাকায় এক যুবকের সাজা খাটছেন চল্লিশোর্ধ্ব এক ওয়াকসপ ব্যবসায়ী। গত নয়দিন ধরে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে সীতাকুণ্ড থানার একটি ডাকাতি প্রস্তুতির মামলায় সাজা খাটছেন মোহাম্মদ লিটন (৪০) নামের সেই ব্যবসায়ী। কিন্তু মামলার প্রকৃত আসামি লিটন (২০) গ্রেপ্তার এড়াতে পলাতক রয়েছে। দু’জনের পিতার নাম মোহাম্মদ এসহাক এবং দু’জনেরই বাড়ি সীতাকুণ্ড উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নে। তবে দু’জনের মাতা ও এলাকায় ভিন্নতা রয়েছে।

 

লিটনের পারিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের সীতাকুণ্ড থানার একটি ডাকাতির প্রস্তুতি মামলার এক সাজাপ্রাপ্ত আসামি সীতাকুণ্ড উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের মিয়াজী পাড়া এলাকার মো. এসহাকের ছেলে লিটন। গত ৯ ডিসেম্বর সাজাপ্রাপ্ত আসামি লিটনকে গ্রেপ্তারে সোর্স নুরুজ্জামানের সহায়তা নেন সীতাকুণ্ড থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোতাব্বির হোসেন।

 

তিনি মুঠোফোনে বাড়বকুণ্ডের ভায়েরখীল এলাকার ওয়ার্কসপ ব্যবসায়ী লিটনকে আলমারি বানানোর কথা বলেন এবং তাকে সীতাকুণ্ড থানায় আসতে বলেন। ফোন পেয়ে লিটন থানায় গেলে উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোতাব্বির হোসেন তার বিরুদ্ধে ডাকাতির মামলা রয়েছে জানিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তারের ঘণ্টা খানেকের মধ্যে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। এরপর থেকে লিটন কারাগারে রয়েছেন। বয়স, মাতার নাম ও গ্রামের মিল না থাকার পরও শুধু নিজের ও পিতার নামের মিল থাকায় লিটনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

 

লিটনের ছেলে নুর উদ্দিন রাব্বি বলেন, আলমারি বানানোর নাম করে ডেকে নিয়ে উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোতাব্বির হোসেন আমার বাবাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের সময় আমার বাবা বলেছিল তার নামে কোনো মামলা নেই। আমি থানায় ছুটে গেলেও বাবাকে দেখতে পাইনি। আমরা যাওয়ার আগে বাবাকে চালান করে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। এরপর বাবার মুঠোফোন ও মানিব্যাগ ফেরত চাইলে তিনি আসামি গ্রেপ্তার বাবদ তার চার হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান। ওই টাকা ছাড়া মোবাইল ও মানিব্যাগ ফেরত দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানান তিনি। অনেক অনুনয়ের পর দুই হাজার টাকা দিয়ে তার কাছ থেকে বাবার মুঠোফোন ও মানিব্যাগ ফেরত আনি। তিনি জানান, বাবা জেলে থাকায় তাদের দিন কাটছে অনাহারে। কিস্তির টাকা দিতে পারছেন না।

 

চট্টগ্রাম আদালতের পিপি এডভোকেট ভবতোষ নাথ জানান, বিনা অপরাধে জেলহাজতে থাকা লিটনের জামিনের জন্য মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আদালত বৃস্পতিবার সীতাকুণ্ড থানা পুলিশকে ঘটনার সত্যতা যাচাই-বাছাই করে আগামী তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী সোমবার প্রতিবেদনের জন্য দিন ধার্য রেখেছেন। প্রকৃত আসামিকে না ধরে নিরীহ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের বিষয়টিতে জড়িত পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আবেদন করা হবে ওই দিন।

 

বাড়বকুণ্ড ইউপি চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্লাহ মিয়াজী বলেন, মামলার প্রকৃত আসামির বাড়ি মিয়াজীপাড়া এলাকায়। সে বর্তমানে বিদেশে রয়েছে। কিন্তু নামের মিল থাকায় তার স্থলে জেল খাটছে ভায়েরখিল এলাকার লিটন নামে এক ওয়ার্কশপ দোকানি।

 

সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ বলেন, নামের মিল থাকায় অনিচ্ছাকৃতভাবে লিটনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে বিষয়টি তিনি জানতেন না। এখন লিটনকে ছেড়ে দেয়ার জন্য তারা আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবেন। পাশাপাশি লিটনকে মুক্ত করা পর্যন্ত পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান তিনি। অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য এসআই মোতাব্বির হোসেন দুঃখ প্রকাশ করেছেন বলেও জানান তিনি।

 

পূর্বকোণ/আর

 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট