চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

১৯ মে পাক হানাদাররা বাঁশখালীর ৬২ নিরীহ লোককে হত্যা করে

অনুপম কুমার অভি, বাঁশখালী

১২ ডিসেম্বর, ২০২২ | ১১:৫৪ পূর্বাহ্ণ

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিমান বিধ্বংসী গোলন্দাজ বাহিনীর কর্মকর্তা খোন্দকার মো. ছমি উদ্দীনের স্থানীয় গ্রুপে সম্পৃক্ত হয়ে আমি মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি। আমাদের গ্রুপ কমান্ডার কে এম ছমি উদ্দীনের নেতৃত্বে পরিচালিত বিভিন্ন অপারেশনে আমি অংশগ্রহণ করেছিলাম।

 

আমাদের সাথে (ছমি উদ্দীন গ্রুপে) স্থানীয় ছাত্র যুবক এবং মুক্তিকামী প্রায় ৪০ জন সদস্য ছিল। বাণীগ্রাম লম্বাশিয়া পাহাড়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণে সাধনপুর ইউনিয়নের বাণীগ্রাম কুঞ্জু বিহারী চৌধুরীর ছেলে মুক্তিযুদ্ধা মুক্তিপদ চৌধুরী এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, বাঁশখালীতে ১৯৭১ সালের ১৯ মে পাকবাহিনী ও দেশীয় রাজাকার আলবদর বাহিনীর সদস্যরা প্রথম হানা দেয়। ঐদিন ১০টি সাজোয়া বহর নিয়ে বাণীগ্রাম এলাকায় আক্রমণ শুরু করে।

 

পুঁইছড়ির নাপোড়া এলাকা পর্যন্ত পাকবাহিনী নিরীহ মানুষদের উপর গুলি, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও স্থানীয় রাজাকাররা এলাকার লোকজনকে ধরে এনে বাঁশখালী ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন জঙ্গলে ৪০ জন ও বাণীগ্রাম মধ্য পাড়া পুকুর পাড়ে ২২ জন লোককে হত্যা করে গর্ত করে পুতে ফেলে।

 

তিনি আরো বলেন, ১৭ নভেম্বর বাণীগ্রাম ও পুকুরিয়া ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে পাকিস্তানি সৈন্য ও রাজাকারদের অবস্থান নেয়া সাধনপুর ইউনিয়ন পরিষদের রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমণ চালাই। এ সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকারদের হাতে তাঁদের সাথে থাকা বরিশালের বাসিন্দা সার্জেন্ট মহিউল আলম শহীদ হন।

 

এছাড়া গুনাগরী ওয়াপদা রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণের জন্য বাঁশখালীর পাঁচটি মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপের প্রায় শতাধিক সদস্য ১০ ডিসেম্বর রাতে অবস্থান নিয়ে ১১ ডিসেম্বর ভোরে গুনাগরী ওয়াপদা অফিস রাজাকার ক্যাম্পে সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হন। বিভিন্ন গ্রুপ ভাগ হয়ে রাজাকারদের উপর আক্রমণ শুরু করেন তারা। ওই সময় রাজাকার আলবদর সদস্যদের লক্ষ্য করে শত শত রাউন্ড গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে।

 

এক পর্যায়ে পাকিস্তানি দোসর রাজাকার আলবদর সদস্যরা আত্মসমর্পণ করে। ওই ক্যাম্প থেকে অর্ধশতাধিক রাজাকার আলবদর সদস্য এবং গোলাবারুদসহ তাদেরকে বাণীগ্রাম ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্মর বাঁশখালী পাকহানাদার মুক্ত হয়। ১৪ ডিসেম্বর বাঁশখালী থানার অস্ত্রাগার দখলে নেয়া হয়। সর্বোপরি ১৬ ডিসেম্বর পাক সেনাদের আত্মসমর্পণে, সুদীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে স্বাধীনতার উষ্ণ স্বাদ পেয়ে আনন্দিত হই।

 

তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের মানোন্নয়নে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বৃদ্ধি, বসতবাড়ি নির্মাণ, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চাকুরির ব্যবস্থা করায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তবে ২ ফুট জায়গার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের বসত বাড়ির নামের তালিকায় নাম আসার পরও প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর না পাওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি সন্তানের জন্য একটি ঘর দাবি করেছেন।

 

পূর্বকোণ/আর

 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট