চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ব্যাপক উন্নয়ন হলেও এখনো শংকিত জনগণ

মো. জহুরুল আলম, খাগড়াছড়ি

২ ডিসেম্বর, ২০২২ | ১২:০০ অপরাহ্ণ

পার্বত্য শান্তি চুক্তির ফলে পাহাড়ে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। তবে নিরসন হয়নি সংঘাত সংঘর্ষের। কাটেনি ভূমি জটিলতা, অব্যাহত রয়েছে খুন, গুম, অপহরণ, চাঁদাবাজি। আদিপত্য বিস্তার নিয়ে আঞ্চলিক দলগুলোর মধ্যে সংঘাত, হানাহানি এখনো বিদ্যমান। পার্বত্য শান্তি চুক্তির পরে নতুন নতুন আঞ্চলিক দল সৃষ্টি হয়ে বিভক্তি বেড়েছে। ফলে এখনো সাধারণ মানুষের মাঝে নানা শঙ্কা রয়ে গেছে।

 

পার্বত্য চুক্তির ফলে বদলে গেছে পাহাড়ের দৃশ্য। আজ ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৫তম বর্ষপূর্তি। ১৯৯৭ সালের এই দিনে সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে এই ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সরকারের পক্ষে আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ্ ও জনসংহতি সমিতি পক্ষে জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু লারমা) স্বাক্ষর করেন।

 

১৯৯৬ সালে সুদীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর পার্বত্য সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি এটিকে রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদকালে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে তিন পার্বত্য জেলায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসান ঘটে।

 

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও খাগড়াছড়ি রিজিয়ন প্রতিবছরের ন্যায় এবারও গুরুত্ব সহকারে দিনটি পালন করতে যাচ্ছে। ঐতিহাসিক এ দিবসটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও উৎসবমুখর পরিবেশে পালন শুরু করেছে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে।

 

দীর্ঘ প্রায় ২ দশকের সংঘাত বন্ধে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর থেকে পাহাড়ে শান্তির সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। চুক্তির ফলে স্বাভাবিকতা ফিরে আসায় দূর পাহাড়ের বুক চিরে রাতদিন ছুটছে যানবাহন। মানুষ নির্বিঘ্নে রাতদিন চলাচল করছে। এক সময় জেলার বাইরের অন্য জেলার সঙ্গে ৩টার পর যোগাযোগ করার মতো কোন ব্যবস্থা ছিল না। পাহাড়ের পর্যটন স্পট আলুটিলা, রিচাং ঝর্ণা, দেবতা পুকুর, সাজেকের যোগাযোগ ছিল বিচ্ছিন্ন।

 

চুক্তির ফলে এখন পর্যটন স্পটগুলো আজ পাহাড় ছেড়ে বাংলাদেশের সর্বত্র সুনাম ছড়িয়েছে। গড়ে উঠেছে বড় বড় হোটেল, রেস্তোরাঁ। প্রতিনিয়ত আসছে হাজার হাজার পর্যটক। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাহাড়ের যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দ্বার উন্মোচন করেছেন। ৪২টি বেইলি সেতুকে পাকা সেতুতে রূপান্তর করে এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থাকে তরান্বিত করেছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ নানাক্ষেত্রে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।

 

ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্ত্রমুক্ত, রক্ত ঝরানো বন্ধ করতে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তিচুক্তি হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম স্বাধীন বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আইন অনুযায়ী সব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে শক্ত হাতে দমন করা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। পার্বত্য শান্তি চুক্তির ধারাগুলো সরকার বাস্তবায়ন করছে।

 

পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু বলেছেন, শান্তি চুক্তির ফলে পার্বত্যাঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পাহাড়ের মানুষ উন্নয়নের সুফল ভোগ করছে। সহিংসতা দূর করতে হলে সংবিধানের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন এবং স্থানীয় সবশ্রেণির জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহসভাপতি বিভূ রঞ্জন চাকমা দীর্ঘ সময় পার হলেও চুক্তির বেশ কিছু গুরুত্বর্পূণ বিষয় এখনও বাস্তবায়ন হয়নি বলে দাবি করেন।

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট