চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মোখা কি সিডরের চেয়ে শক্তিশালী রূপ নিতে পারে?

অনলাইন ডেস্ক

১২ মে, ২০২৩ | ১:৫০ অপরাহ্ণ

ঘূর্ণিঝড় মোখা এখন অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে বলে বলছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। একইসাথে এর কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগও বাড়ছে।

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলো থেকে ১১০০ কিলোমিটারের কম দূরত্বে অবস্থান করতে থাকা এই ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে।

আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রকাশিত দশ নম্বর বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় যে ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১০০ কিলোমিটারের কম দূরত্বে অবস্থান করছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১২০ কিলেমিটার, যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘন্টায় ১৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এছাড়া ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকার সাগর ‘খুবই বিক্ষ্বুদ্ধ’ রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান আজ এক সংবাদ সম্মেলনে আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে এটি উপকূলের কাছে যখন আসবে তখন এর কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ আরো বাড়তে পারে।

তিনি বলেন, “এটির তীব্রতা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এটির প্যাটার্ন আগে ছিল সিডিইউ, এখন এটি ব্যান্ড প্যাটার্নে রূপ নিয়েছে।”

এই ধরণ পরিবর্তনের কারণে ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের বেগ বেড়ে যায় এবং বৃষ্টিপাতের তীব্রতাও বেড়ে যায় বলে জানান মি. রহমান।

পাশাপাশি বজ্রপাতের পরিমাণও বাড়ার কথা উল্লেখ করেন মি. রহমান।

এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তরের নয় নম্বর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল যে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, আর সেটি দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রাম, মোংলা, পায়রা ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থান করা সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

নৌকা ও ট্রলারগুলো যেন গভীর সাগরে না যায়, সেই উপদেশও দেয়া হয়েছে।

মোখা কি সিডরের মত সুপার সাইক্লোন হতে পারে?

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ উমর ফারুক বিবিসিকে জানান যে এটি এখনো অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় অবস্থায় রয়েছে। তবে সিডরের মত সুপার সাইক্লোনে পরিণত হবে কিনা, তা এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।

আবহাওয়াবিদ উমর ফারুক বলেন, “সিডর ছিল সুপার সাইক্লোন। মোখা এখনো অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়। যদিও এর কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ বাড়ছে, কিন্তু এটি সুপার সাইক্লোনে পরিণত হতে পারে কিনা, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।”

ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ যদি ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটারের মধ্যে থাকে, তাহলে সেটিকে স্বাভাবিক ঘূর্ণিঝড় বলা হয়। কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটারের মধ্যে হলে সেটি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আর বাতাসের গতিবেগ ১১৮ থেকে ২২০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে সেটিকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

আর বাতাসের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটারের বেশি হয়ে থাকে তাহলে সেটিকে সুপার সাইক্লোন বলা হয়।

দুই হাজার সাত সালে হওয়া সিডর ছিল সুপার সাইক্লোন। ঐ বছরের নভেম্বরে হওয়া ঐ ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের বেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ২৬০ কিলোমিটার।

এর আগে বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার।

আজ সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে জানান যে এটি সুপার সাইক্লোনে পরিণত হবে, সূচক বিশ্লেষণ করে এখনো সেরকম কিছু বলা যাবে না।

তবে এটিকে সুপার সাইক্লোনে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তিনি।

মি. রহমান বলেন, “এটি সুপার সাইক্লোনে পরিণত হবে বা হবে না, এখনই এটি বলা যাচ্ছে না। এই ঘূর্ণিঝড়টির ক্ষেত্রে কেন্দ্রের ব্যাস, কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ সবই বাড়ছে। তবে এটি উপকূলের কাছে আসতে এখনও ৪৮ ঘণ্টার মত বাকি। এই সময়ের মধ্যে এটি দুর্বলও হতে পারে।”

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক চট্টগ্রাম অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষকে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান জানান।

পাশাপাশি আগামীকাল সন্ধ্যা নাগাদ উপকূলীয় চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশালের মত উপকূল সংলগ্ন অঞ্চলগুলোতে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে বলেও জানান তিনি।

গতিপথ কোনদিকে

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বর্তমান গতি প্রকৃতি অনুযায়ী এগোলে বা দিক না পাল্টালে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোখা ১৪ই মে বাংলাদেশের কক্সবাজার এবং মিয়ানমারের কিয়াকপিউয়ের মধ্যবর্তী এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালকও বলেন যে গত ৫০ বছরের ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে ঐতিহাসিকভাবে মে মাসের ঘূর্ণিঝড় উত্তর উত্তর-পূর্ব দিকেই ধাবিত হয়েছে।

বিভিন্ন গ্লোবাল মডেল বিশ্লেষণ করে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ মোস্তফা কামাল পলাশ বলছেন “ঘূর্ণিঝড় মোখার অগ্রভাগ ১৪ ই মে সকাল ৬ টার পর থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলে আঘাত করার আশঙ্কা রয়েছে। ঘুর্ণিঝড় কেন্দ্র দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ও পিছনের অংশ সন্ধ্যা থেকে ১৫ইমে সোমবার ভোর পর্যন্ত উপকূল অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে”।

এছাড়া ভূমিধসের আশঙ্কাও প্রকাশ করছেন এই আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ।

অন্যদিকে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ ড. সমরেন্দ্র কর্মকার বলছেন, এখন যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে যে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে আসছে ঘূর্ণিঝড়টি।

“বাংলাদেশে কক্সবাজার অঞ্চলে কিছু প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে এটা টেকনাফের ওপর দিয়ে যাবে মনে হচ্ছে। এই মুহূর্তে যে গতিপথ দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়ের মূল অংশটা টেকনাফ ছূঁয়ে যাবে। হয়তো টেকনাফের একটু দক্ষিণ দিক অতিক্রম করে মিয়ানমারের দিকে চলে যেতে পারে” বলছিলেন মি. কর্মকার।

সূত্র: বিবিসি

পূর্বকাণ/এ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট