চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

লেবু শ্রমিকদের মারধর লুট, মুক্তিপণ আদায়

২৭ মে, ২০২২ | ১:২৪ অপরাহ্ণ

সেকান্দর আলম বাবর 

উপজেলার কড়লডেঙ্গার পটিয়া রাঙ্গুনিয়ার বর্ডার সেলান পাহাড়ি এলাকায় গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকালে কাজ করতে যান কড়লডেঙ্গার চম্পা তালুকদারপাড়া, মৌলভীবাজার ও পটিয়া এলাকার প্রায় ৭০/৮০ জন লেবু শ্রমিক। ওই শ্রমিকদের জিম্মি ও মারধর করে নগদ টাকা, মোবাইল লুট ও মুক্তিপণ আদায় করে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা।
এদের মধ্যে থাকা রোহিঙ্গা শ্রমিকদের ছেড়ে দিলেও স্থানীয় ৮/১০জনকে আটকে রাখে তারা। এ ঘটনায় পুলিশি অভিযান চালানো হলেও দিনভর কুলকিনারা করা যায়নি। সন্ধ্যায় চম্পা তালুকদারপাড়ার ৫ জনের কাছ থেকে প্রায় ৬০ হাজার টাকা মুত্তিপণ আদায় করে ছেড়ে দেয় সন্ত্রাসীরা। তবে মৌলভীবাজার তালুকদার পাড়ার বাদশা, অশোক কুমার, লতিফের এখনও হদিস মিলেনি বলে দাবি পরিবার ও স্থানীয়দের। অন্যদিক মো. হাসান ইমনসহ পটিয়ার তিনজনকে মুক্তিপণ না দেয়ায় জিম্মি করে রাখে অপহরণকারীরা।
উপজেলার চম্পা তালুকদারপাড়ার মুক্তিপণ দিয়ে ছাড় পাওয়া ৫ জন হলেন আবুল ফয়েজ (৫০), জাহেদুল ইসলাম মানিক (৩২), মোহাম্মদ হাছান (২০), আবুল কালাম (৩৭) ও শেখ জামাল (৩৬)। তারা মুক্তিপণের কথা স্বীকার করলেও ঘটনার ব্যাপারে মুখ খুলতে নারাজ। তাদের ভাষ্য ওই সন্ত্রাসী গ্রুপে পটিয়া, দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার পাশাপাশি স্থানীয় কড়লডেঙ্গারও কয়েকজন ছিল।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, পাহাড়ে লেবু শ্রমিকদের আটক করে মারধর ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়া নতুন কিছু নয়। এর আগে বিছিন্নভাবে এ ঘটনা ঘটলেও গতকাল (বৃহস্পতিবার) একযোগে একাধিকজন আটকে মারধর, জিম্মি, মোবাইল টাকা ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। তারা জানান, চম্পা তালুকদার পাড়া থেকে সেলান পাহাড় ১ ঘণ্টার পথ প্রায় ৪ কিলোমিটার। এ স্থানের লেবু বাগানে স্থানীয়সহ রোহিঙ্গারা কাজ করেন। স্থানীয়দের মধ্যে পটিয়ার শ্রমিকও আছেন।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা আব্দুল হান্নান পূর্বকোণকে জানান, সন্ত্রাসীদের দুইজন মুখবাঁধা, বাকি ৫/৬জন মুখ খোলা ছিল। তাদের চেহারা চাকমাদের মতো। সাথে অস্ত্র ছিল। হঠাৎ তারা উপস্থিত হয়ে প্রথমে আমাদের নড়াচড়া করতে নিষেধ করে। কয়েকজনকে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে। একে একে সবার কাছ থেকে নগদ টাকা, মোবাইল হাতিয়ে নেয়। এরপর পরিচয় জানতে চায় । রোহিঙ্গা যারা ছিল, তা নিশ্চিত হয়ে হালকা মারধর করে ছেড়ে দেয়। সর্বশেষ স্থানীয় তালুকদারপাড়া, মৌলভীবাজারের ৮/১০ জনকে আটকে রাখে। তাদের বেঁধে রাখা হয়। আমরা চলে আসি, ওদের কি হয়েছে তা আর জানি না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কড়লডেঙ্গার ৩নং ওয়ার্ডের স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. শহিদ জানান, বিষয়টি নিয়ে দিনভর পুলিশি অভিযানে সহযোগিতা করেছি। বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি, আটক করার পর শ্রমিকদের হালকা মারধর করলেও মোবাইল ও টাকা হাতিয়ে নেয়া ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য।
স্থানীয় চেয়ারম্যান হামিদুল হক মান্নান ওমরাতে অবস্থান করায় তার চাচাতো ভাই মুহিদুল আলম জিকু চেয়ারম্যানের মোবাইল ফোন থেকে পূর্বকোণকে জানান, একাধিকবার এসব ঘটনা হলেও আইনি একশন দুর্বল হওয়াতে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা সাহস পাচ্ছে। তিনি দাবি করেন, সবাই কোনো না কোনোভাবে চলে আসলেও তালুকদারপাড়ার বাদশা, অশোক কুমার, লতিফের এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হদিস মিলেনি।
বোয়ালখালী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবদুল করিম বলেন, খবর পেয়ে পটিয়া, রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালীর যৌথ অভিযান হয়েছে। কাউকে আটক করা যায়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। যেহেতু বডারিং এলাকার ঘটনা- ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সামনে বড় ধরণের যৌথ অভিযানের প্রস্তুতি চলছে। পাহাড়ে সন্ত্রাস বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য, কড়লডেঙ্গা পাহাড়ে এর আগে ১২ এপ্রিল লেবু বাগান থেকে ৩২ বাগান মালিক ও লেবুচাষি, ১৩ মে জ্যৈষ্টপুরা থেকে ৩ জনকে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা ঘটেছিল।

পূর্বকোণ/এস 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট