চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

কম খরচে হোক বিয়ের আয়োজন

মুফতি আহসান শরিফ

৫ জানুয়ারি, ২০২০ | ৯:৪৬ অপরাহ্ণ

শীত আল্লাহর রহমতেরই একটি অংশ। শীত ভালো না গরম ভালো? এ রকমের প্রশ্ন আমরা প্রায়ই শুনি। কারও পছন্দ শীত। আবার কারও পছন্দ গরম। তবে দুটোই আল্লাহর রহমত। মানব জীবনে দুটি মৌসুমই কাজে আসে। শীতকালে ফল ফলাদি বেশি হয়। ঝড় বৃষ্টি হয় কম। এ জন্য এ মৌসুমকে অতিরিক্ত নেয়ামত ধরে নেন আমাদের দেশের আয়োজক গোষ্ঠী। তারা সাধারণত শীত মৌসুমেই বিয়ে শাদি, ওয়াজ মাহফিল কিংবা অন্য কোনো পার্টির আয়োজন করে থাকে। আজকের আলোচ্য বিষয় ‘বিয়ে’।

আমাদের দেশে আজকাল রেওয়াজ হয়ে গেছে, বিয়ে মানেই ঘটা করে বিশাল আয়োজন করা। লাল-নীল-হলুদ-সবুজ বাতির জমকালো চোখ ধাঁধানো আয়োজন। ঢোল-তবলা এবং সাউন্ড সিস্টেমের কান ফাটানো আওয়াজ। ডিজে পার্টির অসহনীয় যন্ত্রণা। বিশাল হলরুমে মোটা অঙ্কের বাজেটে বিরাট আয়োজন। অপচয় আর অপচয়। এতে বিয়ের আয়োজন হয় বরকতশূন্য এবং মানুষের ভোগান্তি ও দুর্ভোগের বড় কারণ। কেননা তাদের কাছে বিয়ে মানেই লাখ-কোটি টাকার আয়োজন। তাই তো মানবতার নবী মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কম খরচের বিয়েই অধিক বরকতময়।’ (মুসনাদে আহমাদ : ২৩৩৮৮)

আড়ম্বরহীন সাদাসিধে বিয়ে

দুনিয়াতে জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন এমন দশজনের একজন হলেন রাসুলের প্রিয় সাহাবি হজরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাদিআল্লাহু আনহু। তিনি একদিন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে হাজির হলেন। তার পোশাকে লাল দাগ দেখে নবীজি জিজ্ঞেস করলেন, লাল দাগ কীভাবে লেগেছে? সাহাবি উত্তরে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ, আমি বিবাহের সময় সুগন্ধি লাগিয়েছি। এ জন্য আমার জামায় লাল দাগ। নবীজি (সা.) বললেন, বারাকাল্লাহু লাকা ওয়ালাইকা। আল্লাহ তোমাকে বরকত দান করুন। এরপর বললেন, আউলিম ওয়ালাও বি-শাতিন। তথা একটি বকরি দিয়ে হলেও ওলিমা কর। (বুখারি
শরিফ : ১৯০৭)
হজরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ ছিলেন মুহাজির সাহাবি। নবীজির সঙ্গে ছিল তার দূর সম্পর্কের আত্মীয়তা। এরপরও নবীজি তার বিয়ের সংবাদ পেলেন না। কত অনাড়ম্বর বিয়ে হলে এমনটি সম্ভব। আর নবীজিও পরে জেনে কোনো রকম মন খারাপ করলেন না। কেননা, তিনি কম খরচের এবং আড়ম্বরহীন বিয়ের আয়োজনই পছন্দ করেন। তিনি বিয়ের দিন মেয়ে পক্ষের বড় আয়োজনের চেয়ে ছেলের পক্ষ থেকে ওলিমাকে গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, একটি বকরি দিয়ে হলেও যেন ওলিমা করা হয়।

তিন বিষয়ে বিলম্ব না করা

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তিন বিষয়ে বিলম্ব করা উচিত নয়।
১. যখন নামাজের মুস্তাহাব সময় শুরু হয়।
২. যখন জানাজা উপস্থিত হয়।
৩. অবিবাহিত মেয়ের উপযুক্ত স্বামী পাওয়া গেলে বিলম্ব করা উচিত নয়।
আজকাল অবিবাহিত মেয়ের উপযুক্ত স্বামী পাওয়ার পরও অনেক বিয়ে বিলম্ব হয় বিলাসিতা এবং বিবাহে মৃতব্যয়ী না হওয়ার কারণে। আর এর পরিণতি হচ্ছে সমাজে অপরাধ প্রবণতা এবং মানুষের অশান্তি বৃদ্ধি।

বিয়ের অনুষ্ঠান যেন হয় গুনাহমুক্ত

বিবাহ মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বড় ইবাদত। কেননা, এটি ইবাদতের মাহফিল। সুন্নতের মাহফিল। সওয়াবের মাহফিল। এতে আল্লাহর অজস্র রহমত বর্ষণ হয়। এ জন্য মহান এ ইবাদতকে গুনাহমুক্ত রাখা চাই। বর্তমানে বিয়ের অনুষ্ঠানকে আমরা গুনাহের মহড়ায় পরিণত করেছি। নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা। নারীদের সাজগোজ করে বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া। আরও কত রুসম রেওয়াজ! একদিকে ইবাদত অন্যদিকে অপরাধ। একই সঙ্গে সওয়াব এবং গুনাহ। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, গুনাহের সঙ্গে ইবাদত হয় না। গুনাহমুক্ত বিয়ের আয়োজন করতে না পারলে সে বিয়ে বরকতময় হবে কী করে? বরকত লাভের জন্য আল্লাহর হুকুম মানতে হবে। নবীজির শেখানো নিয়ম অনুসরণ করে সাদাসিধে আড়ম্বরহীন গুনাহমুক্ত বিয়ের আয়োজন করতে হবে। তখনই বরকতপূর্ণ বিয়ে হবে। দাম্পত্য জীবনে নেমে আসবে অনাবিল সুখ।

তাই আসুন না, বিয়ের মতো সুন্দর একটি ইবাদতের ক্ষেত্রে সবাই গুনাহমুক্ত হই। নবীজির ঘোষণা অবলম্বন করে সাদাসিধে, আড়ম্বরহীন বিয়ের আয়োজন করে বরকত লাভে ধন্য হই। সুখী ও সমৃদ্ধ পরিবার গড়ি। আল্লাহকে ভয় করি। প্রকৃত ঈমানদার এবং মুসলিমের পরিচয় দিই। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট