ইবরাহিম (আ:) এর সময়ে স্বেচ্ছাচারী শাসক নমরুদের শক্তি, ক্ষমতা ও দম্ভের প্রকাশ আকাশ ছুঁয়েছিল। নিজেকে খোদা দাবি করে আল্লাহর সাথে প্রতিদ্বন্ধিতায় নেমেছিলো নমরুদ।এমন মহাশক্তিদর সেই ব্যক্তি আল্লাহকে শিকার করতে চেয়েছিল!মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে হত্যা করার জন্য নমরুদ আকাশের দিকে ছুঁড়েছিল তীর।আল্লাহ তার তীরগুলো রক্তরঞ্জিত অবস্তায় মাটিতে পাঠিয়ে দেন। এতে নমরুদ আনন্দে আত্নহারা হয়ে উল্লাস করেন।দাবি করতে থাকেন তিনি আকাশের রবকে হত্যা করে ফেলেছেন!
ইবরাহিম (আ:)-কে প্রতিমা ভেঙ্গে ফেলার অপরাধে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করেছিল নমরুদ।কিন্তু আল্লাহর কৃপায় শীতল ও নিরাপদ হয় আগুন। ফলে অগ্নিকুণ্ড থেকে নিরাপদে বের হয়ে আসতে সক্ষম হন ইবরাহিম (আ:)। অগ্নিকুণ্ড থেকে নিরাপদে বের হয়ে আসায় চরম ক্ষুদ্ধ হন নমরুদ। নমরুদ, ইবরাহিম (আ:)-কে ডেকে বললেন, তোমার আল্লাহ্র যদি যথার্থ অস্তিত্ব থাকে,তবে তাকে আমার সাথে যুদ্ধ করার জন্য ডেকে আনো।আমি তোমার আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছি।
যেই কথা সেই কাজ।নমরুদ আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধকরার জন্য এক বিশাল বাহিনী গঠন করলো।এই বাহিনী নিয়ে ইবরাহিম(আ:)এর কাছে গিয়ে আল্লাহকে তার সাথে লড়াই করার জন্য আহবান জানায়। সে আকাশের দিকে তীর নিক্ষেপ করে এবং বলতে থাকে, কোথায় তুমি হে,ইবরাহিমের খোদা? এসো আমার সাথে যুদ্ধ করো।
নমরুদের বাহিনী চারদিকে লাফাচ্ছে। তা দেখছে ইব্রাহিম (আ)এর বাহিনী। নমরুদের বাহিনী ভাবছে তাদের যা শক্তি তা দিয়ে ইব্রাহিমের বাহিনীকে নিমিষে মাটিতে মিশিয়ে ফেলবে।ইব্রাহিমের বাহিনী তাদের দেখে সামনে না এগিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।ইব্রাহিম (আ)এর আল্লাহ যিনি তিনি সব পশু-পাখিসহ সব প্রাণীরও আল্লাহ।নমরুদের খোদা দাবিতে ইব্রাহিম (আ.) এর অনুসারীসহ সব পশু পাখির মনও বেজার।হাতি অনুমতি চায় নমরুদকে পায়ের তলায় চেপে মারার জন্য।হাতি দিয়ে তাকে মারলে ইতিহাস হবে না। ঘোড়া বলে, আমরা হাতির চেয়ে ছোট।আল্লাহ বলেন,আমি আরো ছোট প্রাণী চাই।
এবার একদল মশা আল্লাহর দরবারে হাজির হলো।আল্লাহ তাদের দেখে বললেন- তোমাদেরতো বেশি ছোট লাগছে,পারবে।পাল্টা প্রশ্ন,পারবো না মানে? আমরা জীবিত মানুষ থেকে রক্ত বের করে ফেলি। আমাদের অনুমতি দিয়ে দেখেন, তাকে সাদা করে ফেলবো। সব মশা আল্লাহর অনুমতি নিয়ে নমরুদের বাহিনীর দিকে রওয়ানা হলো। ওরা আল্লাহর অনুমতি নিয়ে বের হয়ে আসার সময় দেখা ল্যাংড়া মশার সাথে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আসায় তার দেরি হয়েছে।ল্যাংড়া মশার প্রশ্ন,তোদের কোন দায়ত্ব দিয়েছে কিনা বল।অন্য মশাদের থেকে জানলো নমরুদের বাহিনীকে শেষ করার দায়িত্ব পেয়েছে। ল্যাংড়া মশা ভিতরে গিয়ে আল্লাহকে বললেন,আমি কিছু করবো না। আল্লাহ বললেন, সবাইকে বন্টন করে দিয়েছি।তুমি ল্যাংড়া অনেক কষ্ট করে এসেছো তোমাকে একটি ভালো দায়িত্ব দেব।তুমি ধরবা বড়টারে।
এসময় দূর আকাশে কালো রঙের মেঘ দেখা যাচ্ছিল।যখন সেটা কাছে এলো লাখ লাখ মশার গুণ গুণ শব্দে ময়দান মুখরিত হলো। কিন্তু নমরুদ অবজ্ঞার সুরে বলল, এ তো মশা!তুচ্ছ প্রাণী,তাও আবার নিরস্ত্র।আল্লাহর হুকুমে ক্ষণিকের মধ্যে মশা যুদ্ধের ময়দানে নমরুদের প্রত্যেক সৈন্যের মাথার ওপর অবস্থান নিল।এক ঝাঁক মশা।নমরুদ বাহিনী বসা হাতি ও ঘোড়ার পিঠে।ঝাঁকে ঝাঁকে মশা নমরুদ বাহিনীকে ঘিরে ধরে,তাদের নাক দিয়ে মাথায় ঢুকে যায়।তাদের মধ্যে চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে তারা অন্ধের মতো তীর-তরবারি চালাতে থাকে।নিজেদের আঘাতে নিজেরাই ধ্বংস হতে থাকে। মশা তাদের কামড় দেয়ার সাথে সাথে পড়ে যাচ্ছে। ইব্রাহিম (আ:)তা দেখে বললেন,যুদ্ধের আগেই সব পড়ে যাচ্ছে কেন? সব শোয়ানো শেষ।
নিজের বাহিনীর অবস্থা দেখে নমরুদ পালিয়ে যাওয়ার চেস্টা করেন। ল্যাংড়া মশা সবশেষে জিজ্ঞেস করে নমরুদ কই? অন্যরা ইশার দিয়ে দেখিয়ে দেয় ওই বড়টা।ল্যাংড়া নমরুদের নাকের মুখে পজিশন নিয়ে বসে আছে। নাকের ভেতরে যাচ্ছে না,নমরুদ টান দিয়ে নেয়ারে জন্য।ভেতরে ইচ্ছে করে যাওয়ার কোন দরকার নেই্ নিজেই টেনে নেবে।নমরুদ যখন শ্বাস টানে তখন সহজেই ভেতরে ঢুকে গেল। পজিশন নিয়ে আস্তে করে সুঁই ঢুকিয়ে দেয়।ব্যাক্তিগত চিকিৎসক ডাকলেন নমরুদ। মাথায় থাপ্পর দিতে বললেন।ঘন ঘন থাপ্পর চলছে মাথায়।থাপ্পর দিতে দিতে রাজকর্মচারীদের সবার হাত ব্যাথা,কাহাতক আর পারা যায়।শেষে শুরু হলো জুতার বাড়ি।ঘন ঘন জুতার বাড়ি চলছে নমরুদের মাথায়। মাথায় জুতা দিয়ে আঘাত করলে তার যন্ত্রণা কমতো।
আল্লাহর সাথে খেলতে গিয়ে নমরুদের এই অবস্থা।তার বেতনভোগী কর্মচারী, জুতা তার,সেই জুতা দিয়ে আবার তার মাথায় পেটাচ্ছে।খেলা কার? আল্লাহর। দীর্ঘ ৪০বছর নমরুদ এই নরক যন্ত্রণা ভোগশেষে মাথার আঘাতের ব্যাথায় মারা যায়।নমরুদেকে জুতা দিয়ে পিটিয়ে,ফেরাউনকে পানিতে ছুঁবিয়ে, কারুনকে মাটি চাপা দিয়ে সমান করেছে আল্লাহ।
পৃথিবীর ৪ জন বড় শাসকের অন্যতম নমরুদের রাজত্ব ছিল প্রায় ৪০০ বছর।ইবরাহিম (আ:) যখন আল্লাহর একত্ববাদের দিকে আহবান করলেন,তখন বাদশাহ নমরুদ ইবরাহিম (আ:)কে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বললেন, সে কেমন প্রভূ? যার প্রতি মানুষকে আহবান করছ?আমাকে তাঁর কিছু বৈশিষ্ট শোনাও।
তখন ইবরাহিম (আ:)বললেন,জীবন-মরনের সব শক্তি তাঁরই হাতে।তিনি সমগ্র সৃষ্টির পালনকর্তা ও নিয়ন্ত্রণকর্তা।কারো সাধ্য নেই যে তার এ ক্ষমতার মধ্যে কোনরূপ হস্তক্ষেপ করবে।একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী শুধুই আল্লাহ।তারপরও নমরুদ নিজেকে জীবন-মৃত্যুর ক্ষমতার অধিকারী বলে দাবি করে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২জন কয়েদিকে ডেকে এনে একজনকে ফাঁসি আর একজনকে ক্ষমা করে মুক্তির নির্দেশ দেয়।আর বলে,আমি নিজেও মানুষকে জীবন দানি করি এবং মৃত্যু ঘটাই।
সঙ্গে সঙ্গে ইবরাহিম (আ:) বললেন,জীবন-মৃত্যুর বিষয়টি থাকুক।প্রকৃতির সাধারণ একটি ক্ষেত্রে তোমার শক্তি পরীক্ষা করে দেখাও।নমরুদ নিজেকে সূর্যদেবীর অবতার মনে করতো।সূর্যকে দেবতা মানার এই ভ্রান্ত আকিদার মূলে কুঠারাঘাত করতেই তিনি মরুদকে বললেন,আমার আল্লাহ পূর্বদিক থেকে সূর্য উদিত করেন।তুমি যদি সত্যিই নিজেকে সূর্যদেবীর অবতার হিসেবে দাবি কর তবে,একবারের জন্য হলেও পশ্চিম দিক থেকে সূর্যকে উদিত করে দেখাও।
ইবরাহিম (আ:)এর এ দাবির ফলে নমরুদ হতবুদ্ধি হয়ে যায়।তা করে দেখানোতো দূরের কথা ইবরাহিম (আ:)এর কথা শুনেই নমরুদ নির্বাক ও হতবম্ভ হয়ে যায়। এ বিষয়টি পবিত্র আল কোরআনে তুলে ধরা হয়েছে এভাবে- আপনি কি ওই ব্যাক্তিকে দেখেননি,যে ইবরাহীমের সাথে তাঁর রব সম্বন্ধে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিল,যেহেতু আল্লাহ তাকে রাজত্ব দিয়েছিলেন।যখন ইবরাহিম বললেন,আমার রব তিনিই জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান,সে বলল,আমিও তো জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটিই।ইবরাহিম বললেন,নিশ্চয়ই আল্লাহ সূর্যকে পূর্বদিক থেকে উদিত করান,তুমি সেটাকে পশ্চিমদিক থেকে উদয় করাওতো। তারপর যে কুফরী করেছিল সে হতবুদ্ধি হয়ে গেল।আর আল্লাহ জালিম সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না। (বাকারা:২৫৮)।#
লেখক : ব্যুরো প্রধান, বাংলাভিশন, চট্টগ্রাম
পূর্বকোণ/জুবাইর