চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বন্ধ হলো ঐতিহ্যবাহী ৫২৫ বছরের পশুবলির রীতি

অনলাইন ডেস্ক

৮ অক্টোবর, ২০১৯ | ৬:১৬ অপরাহ্ণ

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে দুর্গাপূজা উপলক্ষে ৫২৫ বছর ধরে চলে আসা পশুবলির রীতি বন্ধ হয়ে গেল এবার। সোমবার ত্রিপুরা হাইকোর্টের রায় মেনে মহানবমীর দিন দেয়া হয়নি ত্রিপুরার রাজবাড়ির ঐতিহ্যবাহী দুর্গামন্দিরে পশুবলি।

ভারতের ত্রিপুরার হাইকোর্ট গত ২৭ সেপ্টেম্বর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন রাজ্যের বিভিন্ন মন্দিরে পশুবলির ওপর। ত্রিপুরা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জয় করোল ও বিচারপতি অরিন্দম লোধের সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। তারা জানান, আর পশু বা পাখি বলি দেয়া যাবে না রাজ্যের কোনো মন্দিরে।

৫২৫ বছর ধরে চলে আসছে বাঙালি অধ্যুষিত রাজ্য ত্রিপুরার রাজবাড়ির ঐতিহ্যবাহী দুর্গামন্দিরে পশুবলি। তবে গতকাল দুর্গামন্দিরে নোটিশ লাগিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়, ত্রিপুরা হাইকোর্টের নির্দেশে বন্ধ রয়েছে এবার পশুবলি। মন্দিরের দেবার্চন বিভাগের আধিকারিক নান্টুরঞ্জন দাস জানান, ‘আমরা হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে পশুবলি বন্ধ করেছি। তবে দাস এই পশুবলি নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে যাচ্ছেন রাজ্যের আইনমন্ত্রী রতন লাল।’

বছর কয়েক আগে ত্রিপুরার রাজবাড়িতে দুর্গাপূজা দেখতে গিয়েছিলেন রাজ্যের এক অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ সুভাষ ভট্টাচার্য। তিনি নবমী পুজোর দিন দুর্গামন্দিরে মহিষ বলি দেখে বিচলিত হয়ে পড়েন। এরপর তিনি তিন বছর ধরে হিন্দুশাস্ত্রের নানা দিক খতিয়ে দেখেন। তারপরই তিনি জনস্বার্থে একটি মামলা করেন পশুবলি বন্ধের দাবিতে ত্রিপুরা হাইকোর্টে। এরপর আদালত তিন দিন ধরে একটানা এই মামলার শুনানি চলার পর  ২৭ সেপ্টেম্বর ওই রায় দেন।

তবে সরকারের পক্ষে রাজ্যের এডভোকেট জেনারেল অরুণ কান্তি ভৌমিক পশুবলি বন্ধের আবেদনের বিরোধিতা করে বলেন, এই প্রথা শত শত বছর ধরে চলে আসছে। তা ছাড়া ১৯৪৯ সালে ভারত ভাগের পর ত্রিপুরার রাজারা যখন ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে শামিল হন, তখন থেকে ত্রিপুরার সব মন্দিরের পূজা এবং বলির খরচ ত্রিপুরা সরকার বহন করার চুক্তি হয়। একই সঙ্গে চলে আসছে অতীতের এই প্রথা।

পাশাপাশি আবেদনকারী যুক্তি পেশ করে বলেন, বেদ-উপনিষদ কোথাও লেখা নেই যে, পশুবলি বন্ধ হলে হিন্দু ধর্ম পালনে বাধা তৈরি হবে। তাছাড়া রাজন্য আমলের মন্দিরগুলোতে সরকারি খরচে বলি দিতে হবে—এই দাবির সপক্ষে কোনো দলিলপত্র পেশ করতে পারেনি সরকার পক্ষ।

ডিভিশন বেঞ্চ সরকারের যুক্তি খারিজ করে জানিয়ে দেয়,  সংবিধানের ২৫ ধারা অনুযায়ী ধর্মের অধিকারের আওতায় পশুবলির অধিকার আসে না। এরপরই ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেন, রাজ্যের সব মন্দিরে সরকার বা কোনো ব্যক্তি, কেউই দিতে পারবেন না পশু বা পাখি বলি। এর জেরেই এবার ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপূজায় পশু ও পাখি বলি বন্ধ হয়ে গেল ত্রিপুরা রাজ্যে।

পূর্বকোণ/রাশেদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট