চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

শেষ হল শিল্পকলায় আরিফ রহমানের প্রদর্শনী

মুগ্ধতা ২০ প্রজাতির বনসাইয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক

৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১১:১৮ অপরাহ্ণ

টবের মধ্যে সাজানো গাছগুলো দেখে মনে হয় এক একটি গাছের বয়স ৫০ কিংবা তারও বেশি। একটি গাছকে বনসাই রূপ দিতে অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ পাঁচ বছরেরও বেশি সময়। দীর্ঘ পরিশ্রমের পরেই সাধারণ একটি চারা রূপ নেয় বনসাই বৃক্ষে। শিল্পকলার জয়নুল গ্যালারিতে দুইদিনের এক বনসাই প্রদর্শনীর আয়োজন করেন নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ আরিফ রহমান। শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ছিল প্রদর্শনীর শেষ দিন।

বৃক্ষ প্রকৃতির অন্যতম সেরা উপাদান। অক্সিজেন, ফুল, ফল আর সবুজ আবরণ দিয়ে প্রাণিজগতের পরম বন্ধু এই বৃক্ষ। সৃষ্টির আদিকাল থেকেই বৃক্ষ ও মানুষের মধ্যে আছে পারস্পরিক নির্ভরতার এক নিবিড় সম্পর্ক। মানুষ প্রকৃতিকে ভালোবেসে প্রকৃতির মাঝেই বেড়ে উঠে। আবার সেই মানুষই নিজের লোভ লালসার কারণে প্রকৃতিকে ধ্বংস করে। সেখানে এখনো কিছু মানুষ আছে যারা তাদের অকৃত্রিম ভালোবাসা দিয়ে সবসময়ই প্রকৃতি রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। তেমনি একজন মানুষ শিক্ষক মোহাম্মদ আরিফ রহমান। গাছপালার প্রতি তার রয়েছে হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা। সেই ভালোবাসায় উৎসাহিত হয়ে ২০১৪ সালে নিজের ছাদেই শুরু করেন বনসাইয়ের বাগান। তার সখের সেই বনসাই নিয়েই শিল্পকলার জয়নুল গ্যালারিতে দুইদিনের এক বনসাই প্রদর্শনীর আয়োজন করেন শুক্রবার। গত শুক্রবার দুইদিনের বনসাই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার। সকাল থেকেই পুরো গ্যালারি বৃক্ষ প্রেমিদের পদচারণায় ছিল মুখর । কিন্তু বিকেল চারটার পরে আরো জমে উঠে মেলা। বৃক্ষ প্রেমীরা ঘুরে ঘুরে দেখছেন নানা জাতের বনসাইয়ের চারা।

তার এ প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে ২০ প্রজাতির ১শ টি বনসাই। এই গাছগুলোর মধ্যে চায়না বট, বারবাডোজ চেরী, আম বট, প্রেমনা, কামিনী, তেঁতুল, যজ্ঞডুমুর, গার্ডেন শেকড়া, পাকুড়সহ নানা প্রজাতির বনসাই গাছ। মেলায় একটি বনসাই চারার সর্বনি¤œ দাম ৮’শ টাকা।  চায়না বট গাছের দাম এক লাখ টাকা । এক একটি বনসাইয়ের সাইজ মাত্র দুই থেকে আড়াই ফুট হয়ে থাকে। আবার প্রতিটি গাছের সাথে আছে বেশ বড় বড় শিকড়ও। মেলায় আলাপ হয় রাঙামাটির স্থায়ী বাসিন্দা বৃক্ষ প্রেমী রোজানা মিনহাজের সাথে। তিনি বলেন, বনসাই সত্যি খুব সুন্দর বৃক্ষ।

দেখে মনে হয় ৭০ থেকে ৮০ বছরের এক একটি গাছ। কিন্তু সাইজে দুই থেকে আড়াই ফুট। বিশাল বৃক্ষরাজীর ক্ষুদ্র প্রদর্শনী। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন আমাদের গ্রামের বাড়িতে এমন অনেক গাছ ছিল যেগুলো আমার দাদা বড়দাদাদেরও আগের গাছ। যেগুলো এখন আর দেখা যায় না। আসলে সেই গাছগুলো কেটে তৈরি করা হয়েছে ঘর-বাড়ি ও ফানির্চার। বনসাইয়ের এ মেলায় এসে আমার মনে পড়ে যায় ছোট বেলার সেই স্মৃতি। দেখতে ছোট কিন্তু কি আদরে গাছগুলো।

প্রদর্শনীর আয়োজক মোহাম্মদ আরিফ রহমান বলেন, আমি ২০১৪ সালে সখের বসেই শুরু করি বনসাই চর্চা। বনসাই চর্চা নিয়ে আমার প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষা নেই। তবে বেশ কয়েকজন বনসাই শিল্পীদের সাথে কাজ করে বনসাই সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করি। মূলত বনসাই একটি শিল্প। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের সন্তানকে বড় বৃক্ষরাজীর স্বাদ দিতে পারি। এখনতো আগের মত আর সেই বড় বড় বৃক্ষরাজী দেখা যায় না। কিন্তু তাই বলে কি আমাদের সন্তানরা সেই স্বাদ পাবে না। মূলত সেটাই আমার মূল লক্ষ্য। যেখানে দ্রুত নগরায়ণের কারণে সবুজ শ্যামল বৃক্ষ বিপন্ন প্রায়। সেখানে আমরা বনসাইয়ের চর্চা করতে পারি নিজের ছাদে কিংবা ব্যালকনিতে।

 

পূর্বকোণ/ মুন্নী-এস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট