চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ইন্টারনেট যখন ছিল না কেমন ছিল জীবন

২৩ মার্চ, ২০২৩ | ২:৩৫ পূর্বাহ্ণ

জন্ম সেই ১৯৬০’র দশকে হলেও ১৯৮৯-এ-ই এটা সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। তবে ১৯৯০- এর দশক থেকেই মূলতঃ পশ্চিমা বিশ্বে এর ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়। সেই থেকে এর জনপ্রিয়তা আজ অতুলনীয়। এটি ছাড়া প্রাত্যহিক জীবনই যেন আজ অচল। এটি আমাদের অনেক কিছুই দিয়েছে, দিচ্ছে বটে, তবে অনেককিছুই আবার আমাদের থেকে কেড়েও নিয়েছে। আজ একটু পেছন ফিরে দেখা যাক ’৯০-এর আগে ইন্টারনেট-বিহীন সময়ে আমাদের যাপিত জীবন কেমন ছিল।

 

যোগাযোগ :
এ সময়ে দূরের কারো সাথে যোগাযোগের সহজ মাধ্যম হিসেবে ছিল ‘ল্যান্ডফোন’। তবে এটা সহজলভ্য ছিল না। ভাগ্যবানরাই কেবল এর এক একটি সেটের মালিক হতে পেরেছেন। পরে পরে পাবলিক বুথ থেকে সাধারণ মানুষও এর সুবিধা নিতে পেরেছেন বটে। তবে লং ডিসটেন্স কলগুলো ছিল বেশ খরুচে। এছাড়া চিঠির মাধ্যমে আত্মীয়-পরিজনদের সাথে যোগাযোগ রক্ষার সিস্টেমটা জনপ্রিয়তা পেলেও, এটা ছিল বেশ সময় সাপেক্ষ। তাছাড়া জরুরি বার্তা হিসেবে টেলিগ্রামও প্রচলিত ছিল বেশ।

 

তথ্য :
এখনকার মতো ‘গুগল’ ছিলনা যে কিছু একটা জানতে সেটাতে ভিজিট করবো। তখন তথ্যাদির জন্য যে কাউকে ছুটতে হয়েছে পাবলিক লাইব্রেরিগুলোতে। ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে যে কোনোও পেশার মানুষকে তাদের কাক্সিক্ষত তথ্যাদি জানতে যেতে হয়েছে ওই লাইব্রেরিতেই। ঘাঁটতে হয়েছে কাগজে বাঁধাই করা অনেক অনেক বই-পুস্তক। বলাবাহুল্য এ-ও এক সময় সাপেক্ষ ব্যাপারই ছিল।

 

মিউজিক :
রেকর্ড, ক্যাসেট, সিডি ইত্যাদির অ্যালবাম কিনে তখন শুনতে হয়েছে প্রিয় গানগুলো। তবে এক্ষেত্রেও ঘরে প্লেয়ারটি থাকলে তবেই তা সম্ভব হয়েছে। নিজস্ব পছন্দের প্রিয় গানগুলোর সংকলন (অ্যালবাম) তৈরির জন্যও তখন ছুটতে হয়েছে স্টুডিওগুলোতে। রেডিও ছিল (এখনো আছে) বটে, তবে প্রিয় গানটি সেখানে কখন বাজবে তার জন্য থাকতে হয়েছে অপেক্ষায়।

 

টিভি :
তখনো অতোটা ব্যাপকতা পায়নি। ছবি, অনুষ্ঠানাদিও সংখ্যায় তেমন ছিল না। তাই নির্দিষ্ট কিছু অনুষ্ঠান কিংবা ছবিই কেবল এতে দেখা যেতো। নির্দিষ্ট দিন অনেকের সাথে বসে প্রিয় অনুষ্ঠানটি দেখতে হয়েছে। তবে এই একসাথে বসে কোনেও কিছু উপভোগ করার একটা আলাদা মজাই ছিল। অনেকেই আজ সেটা আমরা মিস করছি। খুব প্রিয় অনুষ্ঠানটি যদি কখনো মিস হয়েছে তো পরে সেটা ভিসিপি কিংবা ভিসিআর-এ দেখে নেয়া গেছে।

 

শপিং :
একমাত্র পিজা ডেলিভারি ছাড়া হোম ডেলিভারি প্রথা তখনো গড়ে ওঠেনি। মল-মার্কেটের এতোটা ভিড় তখনো ছিলনা। প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো সশরীরে গিয়েই বরাবর সংগ্রহ করতে হয়েছে।

 

ভ্রমণ :
ইন্টারনেটের সুবিধা ছিলনা, তাই ব্রোশিয়ার বা কোনোও পত্রিকা বা ম্যগাজিন ইত্যাদি ঘেঁটে জানতে হয়েছে কাক্সিক্ষত ভ্রমণস্থলটি সম্পর্কে। ম্যাপ কিনে তখন দেখতে হয়েছে সেটার লোকেশন। দূর দেশে যারা ভ্রমণে গিয়েছেন, তাদের জন্য ট্রাভেল এজেন্টরাই ছির মূল ভরসা।

 

গেমস :
বোর্ড গেমগুলোই ছিল তখন ইনডোর গেমস হিসেবে প্রধান আকর্ষণ। যেহেতু ভখনো অনলাইন গেমিং নেই। পাড়ায় পাড়ায় ভিডিও গেমস-শপ চালু হয় পরে। পয়সার বিনিময়ে ছেলে-বুড়ো অনেককেই দেখা যেতো সেখানে ভিড় করতে।

 

মুভি দেখা :
ছবির ট্রেলার বলতে তখনো পোস্টারই ভরসা। কোনোও নতুন ছবি রিলিজ হলে ওই পোস্টার দেখেই ডিসিশন নিতে হতো ছবিটা দেখবো কিনা। থিয়েটার/ সিনেমা হলে গিয়ে পপকর্ন/বাদাম কিংবা ড্রিংকস সহ এক জায়গায় বসে ক’টা ঘণ্টা অনায়াসে কাটিয়ে দেয়া গেছে। খুব প্রিয় ছবিটি ক’জন মিলে পরে ভিসিপি বা ভিসিআর-এ-ও দেখা গেছে।

 

কুকিং বা রান্না :
আজকাল ইন্টারনেট সার্চ করলেই অনায়াসে মিলছে রেসিপির ঝাঁপি। কিন্তু সেসময় রান্ন্ নিয়ে হতো ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা। লোকেরা একে অপরের সাথে রেসিপি শেয়ার করতো। শুধু তাই নয়, প্রায়ই দেখা যেতো সমমনাদের সাথে একসাথে বসে নতুন রান্নাটির মজা নিতে।

 

নিউজ :
আগে লোকেদের নির্দিষ্ট সময়ের সংবাদটির জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। এখনকার মতো ২৪ ঘণ্টাই খবরাখবর জানার সুযোগ ছিলনা বিধায় লোকেরা বিভিন্ন নিউজ-স্ট্যান্ডে গিয়ে সংবাদ পত্র/বুলেটিন ইত্যাদি ঘাঁটতো। একদিন আগের খবরাখবরই ছিল তখন ‘টাটকা’। কোনোও ব্রেকিং নিউজ ছিল তখন খুবই দুর্লভ।

 

ক্যামেরা :
স্মৃতি ধরে রাখার জন্য আজকের মতো ডিজিটাল ক্যামেরা তখন ছিলনা। তখন ছিল ‘ফিল্ম’ নির্ভর ক্যামেরা। নির্দিষ্ট কিছু ছবি তোলার পর ফিল্ম বা রিল শেষ হয়ে গেলে সেটার জন্য ছুটতে হতো স্টোরে। ছবি ডেভেলপ, প্রিন্ট ইত্যাদিতে অনেকটা সময় ও অর্থ ব্যয় হয়ে যেতো। লোকেরা ছবি সংরক্ষণের জন্য নানা রকম ফটো-অ্যালবাম ব্যবহার করতো।

 

টাইপ রাইটার :
হাতে লেখা চিঠি কিংবা মুখোমুখি বসে আলাপ একসময় ‘ম্যাসেজিং’ এসে থামিয়ে দিল। কিন্তু এ সময়ে একটা লেখন যন্ত্র-টাইপ রাইটার-এর বেশ দাপট ছিল। কতে যে চিঠি, দরখাস্ত, দলিলাদি এর সাহায্যে লেখা হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। তবে এর বড় একটা ঘাটতি এই ছিল যে, কোনোও ভুলভাল পরে ধরা পড়লে তা মুছে ফেলা যেতো না। তখন ওই ভুল অংশটি ‘ফ্লুইড’ দিয়ে ঢেকে তার ওপর ফের টাইপ করা হতো।
আসলে ইন্টারনেট-পূর্ব জীবন ছিল অনেক আন্তরিকতায় ভরা, মজার ও রোমাঞ্চপূর্ণ। মুখোমুখি কথা, একজন অপরজনের সাথে সশরীরে গিয়ে দেখা করা, আত্মীয়-পরিজনের খবর নেয়া-এ সবই ছিল তখন স্বাভাবিক। কিন্তু অতি আধুনিকতার এ সময়ে এসে জীবন ‘গতি’ পেয়েছে ঠিক, কিন্তু ‘সৌহার্দ্য’ যেন বিলীন হয়ে গেছে কোনোও সুদূরে।

[সূত্র : ইন্টারনেট]

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট