চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

ফাইল ছবি

ঈদের দিনের ১০ বিশেষ আমল

অনলাইন ডেস্ক

১৩ মে, ২০২১ | ১:৩০ অপরাহ্ণ

বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহোৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে মান-অভিমান বিসর্জন দিয়ে একতা, সমদর্শিতা, ভ্রাতৃত্বতা ও সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনের দিন ঈদ।

ঈদের দিনটিকে আরও আনন্দ ও পবিত্রময় করে তুলবে মহানবী (সা.)-এর আদর্শিক কিছু চমকপ্রদ আয়োজন।

ঈদের দিনের আমল

এক. গোসল করা ও পবিত্রতা অর্জন করা

ঈদের নামাজের জন্য গোসল করা ও মিসওয়াক করা সুন্নাত। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে-

ইবনু আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- নবি (সা.) ঈদুল ফিতর ও আজহার দিন গোসল করতেন। (বোখারি : ১/১৩০,

মুয়াত্তা মালেকসহ অন্যান্য হাদিস গ্রন্থে সহিহ সূত্রে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রা.) ঈদুল ফিতরের দিন ইদগাহে যাওয়ার আগে গোসল করতেন। (মুয়াত্তা, হাদিস : ৪২)

নাফে হতে বর্ণিত আছে যে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) ঈদুল ফিতরের দিন ইদগাহে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন। (মুয়াত্তা মালেক, হাদিস : ৩৮৪)

আলবানি (রহ.) ‘ইরওয়াউল গালিল’ নামক গ্রন্থে ফারয়াবি সাঈদ ইবনুল মুসায়‌্যিব রাদ্বিয়াল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন- ঈদুল ফিতরের দিন তিনটি সুন্নাত। ১. পায়ে হেঁটে ইদগাহে গমন করা ২. ইদগাহে যাওয়ার পূর্বে কোনো কিছু খাওয়া। ৩. গোসল করা।

দুই. সুন্দর ও উত্তম পোষাক পরিধান করা

মুসলমানদের প্রধান দুই ধর্মীয় উৎসব তথা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন সুন্দর ও সাধ‌্যের ভেতর সবচেয়ে উত্তম পোষাক পরিধান করা সুন্নত।

ইবনুল কায়্যিম রহিমাল্লাহ বলেন- নবীজি দুই ইদের দিন সবচেয়ে সুন্দর ও উত্তম জামাটি পরিধান করতেন। তার একটা বিশেষ সুট ছিলো, যা তিনি দুই ঈদে ও জুমাতে পরিধান করতেন। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে-

জাফর ইবনু মুহাম্মদ তার পিতা থেকে, তার পিতা তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.) প্রতিটি ঈদে ডোরা-কাটা পোষাক পরিধান করতেন। (সুনানে বায়হাকি, হাদিস : ৬৩৬৩)

তিন. ঈদগাহে যাওয়ার আগে পানাহার করা

ঈদুল ফিতরের দিন ইদগাহে যাওয়ার পূর্বে সামান্য কিছু পানাহার করা সুন্নত। তবে ঈদুল আযহার দিন পানাহার ব্যতীত ঈদগাহে গমন করা ও নামাজের পর নিজের কুরবানির গোশত দিয়ে প্রথম খাবার গ্রহণ করা সুন্নাত।

আনাস (রা.) বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজি (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন সকালে কিছু খেজুর খেতেন। অন্য এক বর্ণনামতে, তিনি বেজোড় সংখ্যক খেজুর খেতেন। (বুখারি, হাদিস : ৯৫৩)

চার. ঈদগাহে যাতায়াতের সময় তাকবির বলা

ঈদের দিন বেশি বেশি তাকবির পাঠ করে আল্লাহকে ডাকার মধ্যেই প্রকৃত আনন্দ। তাই ঈদগাহে যাতায়াতের সময় ঈদুল ফিতরের দিন তুলনামূলক নিম্বস্বরে তাকবির বলা আর ঈদুল আজহার দিন উচ্চস্বরে তাকবির পাঠ করা সুন্নত।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘যাতে তোমরা গণনা পূরণ করো এবং তোমাদের হেদায়াত দান করার দরুণ আল্লাহ তাআলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

জুহরি থেকে বর্ণিত আছে যে, নবীজি (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন তাকবির পাঠ করতে করতে ঈদগাহের দিকে গমন করতেন এবং নামাজ পড়া অবধি এ তাকবির অব্যাহত রাখতেন। নামাজ শেষ হলে তাকবির পাঠ বন্ধ করে ফেলতেন। (সিলসিলাতুল আহাদিস আস সহিহাহ : ১৭১)

পাঁচ. ঈদগাহে আসা-যাওয়ার রাস্তা পরিবর্তন করা

ঈদগাহে যাতায়াতের রাস্তা পরিবর্তন করা সুন্নাত। যাওয়াত সময় এক রাস্তা দিয়ে গমন করা আর প্রস্তানের সময় অন্য রাস্তা ব্যবহার করা সুন্নত।

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- নবীজি (সা.) ঈদের দিন ঈদগাহে আসা-যাওয়ার রাস্তা পরিবর্তন করতেন। (বুখারি, হাদিস : ৯৮৬)

ছয়. পায়ে হেঁটে ঈদগাহে গমন

কোনো ধরনের অপারগতা না থাকলে, পায়ে হেঁটে ইদগাহে গমন করা সুন্নত। ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) পায়ে হেঁটে ঈদগাহে গমন করতেন এবং পায়ে হেঁটে ঈদগাহ থেকে প্রত্যাগমন করতেন। (তিরমিজি, হাদিস : ১২৯৫)

সাত. ঈদগাহে যেতে শিশুদের সঙ্গে নেওয়া

আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) দুই ঈদের দিন ঈদগাহে যাওয়ার সময় ফজল ইবনু আব্বাস, আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস, আব্বাস, আলি, জাফর, হাসান, হোসাইন, উসামা ইবনু জায়দ, জায়দ ইবনু হারিসা, আয়মান ইবনু উম্মু আয়মান (রা.)-কে সঙ্গে নিয়ে উচ্চস্বরে তাকবির ও তাহলিল পাঠ করতে করতে বের হতেন। অতঃপর তিনি কামারদের রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে উপস্থিত হতেন এবং প্রত্যাবর্তনের সময় মুচিদের রাস্তা দিয়ে ঘরে আসতেন। (সুনানে কুবরা বায়হাকি, হাদিস : ৬৩৪৯)

আট. ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা

ঈদের দিন একে অপরের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে শুভেচ্ছা বিনিময় করা সুন্নত। হাদিস শরিফে এসেছে- 

জুবাইর ইবনু নুফাইর (রা.) বর্ণিত, তিনি বলেন- নবীজী (সা.)-এর সাহাবোয়ে কেরাম ঈদের দিন পরস্পর সাক্ষাৎ হলে বলতেন ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়ামিন কুম’ আল্লাহ আমার এবং আপনার যাবতীয় ভাল কাজ কবুল করুক। (ফাতহুল কাদির, ২খন্ড, ৫১৭)

নয়. ঈদের খুতবা শ্রবণ করা

ঈদের নামাজ শেষে খুতবা মনোযোগ সহকারে শোনা। হাদিসে এসেছে-

আবদুল্লাহ ইবনু সায়িব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে আমি ঈদগাহে উপস্থিত হলাম। এরপর তিনি আমাদের নামাজ পড়িয়েছেন। অতঃপর তিনি বলেন: “আমরা নামাজ শেষ করেছি। যার ইচ্ছা সে খুতবা শুনার জন্যে বসবে, আর যার চলে যাওয়ার ইচ্ছা, সে চলে যাবে।’ (ইবনু মাজাহ, হাদিস : ১০৭৩)

দশ. ঈদগাহ থেকে ফিরে নফল আদায় করা

ঈদের নামাজের আগে-পরে ঈদের নামাজের স্থানে যেকোন ধরনের নফল নামাজ আদায় করা মাকরুহ। ঈদের নামাজের পরে ইদগাহ থেকে বাড়ি ফিরে দুই রাকাত নফল আদায় করা সুন্নত। হাদিসে এসেছে-

আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- নবী করিম (সা.) ঈদের নামাজের আগে কোনো নামাজ পড়তেন না। তবে নামাজের পর ঘরে ফিরে করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১২৯৩)

ঈদের দিনের এসব চমৎকার আমল ও আয়োজন আমাদের ঈদ আনন্দ বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সবাই তাওফিত দান করুক। আমিন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট