চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ভ্রমণ ডায়েরী-৭

যেমন দেখলাম সুইডেনের কর্মসংস্থান

মোহাম্মদ আজিজুল মওলা

২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ১২:১৪ পূর্বাহ্ণ

উন্নত দেশগুলোতে যেকোনো পেশাকে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখা হয়। হোক না একেবারে ছোট চাকরি। সুইডেনে এমএসসি করতে এসে এবিষয়টি আরো বেশি ভালো ভাবে উপলব্ধি করার সুযোগ হয়েছে।

সুইডেনে মালমো শহরে যে ফ্ল্যাটে আমি থাকতাম সেখানে সপ্তাহে একদিন হাউসকিপিং করতে দুইজন ভদ্রমহিলা আসতেন। ইউনিভার্সিটি থেকে একটি হাউসকিপিং কোম্পানির সাথে চুক্তির আওতায় প্রতিটি ফ্ল্যাটে সপ্তাহে একদিন করে তাদের কাজ। বাড়ি- ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে দিবে, চাদর তোয়ালে চেঞ্জ করে দিবে, ওয়াশরুম পরিষ্কার করে দিবে, ময়লা আবর্জনা থাকলে সেটাও নিয়ে যাবে তারা। সুইডেনের মানুষগুলো এমনিতেই সুন্দর, খুবই সুশ্রী, এবং রুচিশীল জামাকাপড় পরেন। তার উপর, উনাদের বেশভূষা চালচলন দেখে বোঝার উপায় নেই তারা হাউসকিপিং করতে এসেছেন। দুজনের দুটি গাড়ি ছিল একটি BMW অন্যটি mercedes-benz অথচ আমাদের দেশে এই বিলাসবহুল গাড়ি গুলো শুধু উচ্চবিত্তদের হাতেগোনা কিছু মানুষ নিয়মিতভাবে ব্যবহার করেন। যাহোক একদিন কৌতুহল এর বশীভূত হয়ে তাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম তাদের ফ্যামিলি সম্পর্কে। তাদের একজন বললেন, তিনি লুণ্ড ইউনিভার্সিটি, সুইডেন থেকে পাশ করেছেন তার স্বামী একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকুরীরত আছেন। একটু বলে রাখি, Lund University ওয়ার্ল্ড রাঙ্কিং এ ৯৭ তম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় আর সুইডেনের সবচেয়ে সেরা বিশ্ববিদ্যালয় এটি। গুগলে সার্চ করলে পাবেন। অন্যজনেরটা আমার মনে নেই। আসলে এখানে যে কোন কাজকে সম্মানের চোখে দেখা হয়। এই দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান খুবই উঁচু এবং মানুষের লাইফস্টাইলও প্রায় সকলেরই একই রকম। এজন্য তাদের মন-মানসিকতাও উন্নত, দেশটিও উন্নত।

জাপানে কম মানুষ দিয়ে বেশি কাজ করার অনেক কথা শুনেছেন। আর এখানে কম মানুষ দিয়ে বেশি কাজ নয় কিছু কিছু জায়গায় মানুষ ছাড়াই কাজ চলছে। আপনি গ্যাস পাম্পে যাবেন, কোন মানুষ নাই। আপনি নিজেই নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী জ্বালানি নিবেন এবং কার্ড দিয়ে পরিশোধ করে চলে যাবেন। রাস্তার ধারে মাঝে মাঝে দেখবেন, বিশেষ করে পার্কে এবং বড় বড় সুপারশপের পাশে কিছু পয়েন্ট দেওয়া আছে, আসলে ইলেক্ট্রিক্যাল সেটআপ। যাদের উন্নত প্রযুক্তির ইলেকট্রিক কার- টেসলা গাড়ি আছে, তারা সেখানে ইলেকট্রিক পয়েন্ট দিয়ে তাদের গাড়ি চার্জ করবেন, কার্ড দিয়ে নির্ধারিত সার্ভিস চার্জ পরিশোধ করবেন।

সুইডেনে আমার কাছে দুইটি চাকরি সেরা চাকরি মনে হয়েছে।
১) পুলিশের চাকরি ও ২) সিটি বাসের ড্রাইভার।
সুইডেনে অপরাধ নাই বললেই চলে। পুলিশের কোনো কাজ নেই। আপনার কাছে মনে হবে ওদেরকে বসে বসে সরকার টাকা দিচ্ছে। বিষয়টি আসলে তা নয়। এখানে দুইটি বিষয় থাকতে পারে এক, এখানকার মানুষগুলোর মূল্যবোধ এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত। তাই কারো কাছ থেকে চুরি করে ডাকাতি করে অথবা অবৈধ উপায় অবলম্বন করে সম্পদশালী হওয়ার দরকার নেই। এই কারণেই অপরাধ কম। আর যদি অপরাধ করেই তাকে কেউ পুলিশের কাছ থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো সিস্টেম নেই। মাঝে মাঝে কিছু পুলিশের গাড়ি দেখবেন- পেট্রোল করছে। আপনি গুগল ম্যাপে সার্চ না করে সারা দিন মালমো শহরে ঘুরলেও আপনি পুলিশ স্টেশন খুঁজে পাবেন না। কোনক্রমে আপনি ট্রাফিক রুল ভঙ্গ করলেন, এটা কন্টিনিউ করলেন। সর্বোচ্চ তিন থেকে চার মিনিট কন্টিনিউ করতে পারবেন, দেখবেন এই সময়ের মধ্যে আপনার সামনে পুলিশ এসে হাজির। এখানে মামা-চাচা খালা, ফুফু এমনকি নিজের পিতা নগরপিতা হলেও রক্ষা পাওয়ার সুযোগ নেই। এই দেশটিতে সর্বোচ্চ গণতন্ত্র ও আইনের শাসন দ্বারা পরিচালিত।

এবার আসি, সিটি বাসের ড্রাইভার এর জীবন যেভাবে আমি দেখেছি। মাত্র ৪ ঘণ্টা কাজ করে ২ ঘণ্টা রেস্ট করে ওরা। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে তাদের রেস্টহাউজ আছে। সেখানে তারা আলিশন ভাবে রেস্ট করে, খাওয়া দাওয়া করে। এখানে দিন রাত ২৪ ঘণ্টায় বাস চলে। সুনির্দিষ্ট নম্বরযুক্ত বাস যেখানে যে সময়ে থাকার কথা সেখানে সে সময়ে চলে আসবেই। বড়জোর সময়ের এক মিনিট এদিক ওদিক হতে পারে সেটাও আপনাকে টাইমিং দিয়ে জানিয়ে দিবে বাস স্টপেজ এ থাকা ডিজিটাল ঘড়িতে। সমস্ত স্টেপগুলো এ রয়েছে ফ্রী ওয়াইফাই, দু’এক মিনিট অপেক্ষা করলেও আপনার কাছে দেরি মনে হবেনা বসে বসে নেট ব্রাউজিং করুন, আপনার যা খুশি তা । বাসের যাত্রীরা সিটি বাসের ড্রাইভার দের খুব সম্মান করে তাদের প্রফেশনালিজম আর সুন্দর ব্যবহারের কারণে আর বাস ড্রাইভারদের ব্যবহার দেখলে আপনি সত্যিই তাদেরকে দিল থেকে দোয়া করবেন। অন্তত এই সিটি বাস আর ড্রাইভারদের অত্যন্ত ভদ্র ব্যবহার এর জন্য হলেও এই দেশটিতে আপনার থেকে যেতে ইচ্ছা করবে।

(চলবে)

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট