চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

শেষ পর্বঃ ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা

মো. ফারুক ইসলাম

১৩ জুলাই, ২০২০ | ১:৩৬ অপরাহ্ণ

প্রত্যেক দেশে শিক্ষা নিয়ে সেদেশের সরকারের কিছু পরিকল্পনা থাকে। কারণ শিক্ষিত জাতি ছাড়া একটি দেশের উন্নয়ন কখনো সম্ভব নয়। ফিলিপাইনেও এর ব্যতিক্রম নেই। ফিলিপাইনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গিয়ে জানতে পারলাম তাদের শিক্ষাক্ষেত্রে কোন লক্ষ্য নেই। তারা সাধারণত বিষয় এবং ক্লাসরুম সেটআপের উপর বেশি জোর দেন। তাদের শিক্ষার স্তরও বাংলাদেশ থেকে ভিন্ন। আমাদের দেশে সাধারণত ১ম থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার স্তর হিসেবে গণ্য করা হয়। ফিলিপাইনে ক্লাস ওয়ান থেকে সিক্স পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার স্তর হিসেবে ধরা হয়। সেদেশে ৫ বছর বয়স থেকে প্রাইমারি শুরু হয় আর ১০ বছর বয়সে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ হয়। ক্লাস সেভেন থেকে টেন পর্যন্ত জুনিয়র হাইস্কুল। একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সিনিয়র হাইস্কুল হিসেবে পাঠদান করা হয়। গ্রেড টুয়েলভ পাশ করলেই একজন শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। আবার শিক্ষাদানের ক্ষেত্রেও রয়েছে ভিন্নতা। যারা মাস্টার্স পাশ করেন তারা শুধুমাত্র উচ্চ মাধ্যমিক লেভেলে পাঠদান করতে পারেন। ডিগ্রি থেকে শুরু করে অনার্স, মাস্টার্সে মানে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে হলে একজন শিক্ষককে অবশ্যই পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে মাস্টার্স পাশ করে অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পাঠদানের সুযোগ পায়। তাছাড়া বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সরকারি কলেজে লেকচারার হিসেবে যোগদান করতে পারেন। এতে বুঝা যাচ্ছে, আমাদের দেশে সুযোগ সুবিধা ফিলিপাইনের চেয়ে বেশি। এবার আসা যাক প্রশিক্ষণের ব্যাপারে, আমরা যারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছি তাদের সরকারি খরচে দেড় বছর মেয়াদি ডিপিএড প্রশিক্ষণ, বিএড, এমএড প্রশিক্ষণের সুযোগ রয়েছে।

তাছাড়া পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য রয়েছে বিষয় ভিত্তিক ছয়দিনের প্রশিক্ষণ। যেসব প্রশিক্ষণে ডেপুটেশনে আসলে আমরা বেতনের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ভাতা পেয়ে থাকি। কিন্তু ফিলিপাইনে এসব সুযোগ সুবিধা নেই। সেদেশে একজন শিক্ষককে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নিজের টাকায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোন প্রকার ভাতা প্রদান করা হয় না। যেসব শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রদান করেন তাদের প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য ৩ বছরের লাইসেন্স প্রদান করা হয়। তিন বছর পর পর ওই লাইসেন্স নবায়ন করতে হয় পরীক্ষার মাধ্যমে। ফিলিপাইনে শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মাস্টার্স কোর্স চালু আছে। আমাদের দেশে শতভাগ শিক্ষার্থী বর্তমানে উপবৃত্তির আওতায়। ফিলিপাইনে শিক্ষার্থীদের জন্য কোন উপবৃত্তির সুবিধা চালু নেই। সেদেশে সাধারণত শ্রেণিতে মেধা তালিকার প্রথম ১০ জনকে বৃত্তি প্রদান করা হয়। আমাদের দেশে মিড ডে মিল চালু আছে, কিন্তু ফিলিপাইনে মিড ডে মিল চালু নেই। ফিলিপাইন ট্যুরে গিয়ে যতটা দেখলাম তাতে মনে হলো, ফিলিপাইনের চেয়ে আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য অনেক সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান। ফিলিপাইনে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাব্যবস্থার ব্যয় বহন করে স্থানীয় সরকার। মানে জেলা ও উপজেলা ভিত্তিক ব্যয়টা নির্বাহ করা হয়। সেখানে শিক্ষার্থী আর শিক্ষকের অনুপাতটা আমাদের দেশের মতো বেশি না। ৫০ জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে ২ জন শিক্ষক। প্রতিটি ক্ষেত্রে আইসিটি সম্পৃক্ত। শিক্ষকরাও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষাব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের কাছে কাজ মানে দায়বদ্ধতা, সময়নিষ্ঠা, পারস্পরিক মিথষ্ক্রিয়া আর নিজের কাজের প্রতি শ্রদ্ধাবোধটাই বেশি। মানে যে যে কাজেই সম্পৃক্ত আছেন সে কাজকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করেন। কাজের প্রতি হতাশ না। বরং নিজের পেশার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আছেই বলেই তাদের দায়বদ্ধতা বেশি। আমি মনে করি আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে আমাদেরও অনেক বেশি দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হবে। নিজের পেশাকে যথেষ্ট সম্মান করতে হবে। যতক্ষণ এই পেশায় আছি, ততক্ষণ সর্বোচ্চটা দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। সে সাথে আমাদের স্কুলগুলোতেও শিক্ষার্থীর অনুপাতে শিক্ষক নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলগুলোতে প্রায় সময় শিক্ষক স্বল্পতা লেগে থাকে। তাই নতুন শিক্ষক নিয়োগদানের ক্ষেত্রে প্রত্যন্ত এলাকার পিছিয়ে পড়া স্কুলগুলোর প্রতি বেশি নজর দিতে হবে। আইসিটি শিক্ষাকে অনেক বেশি জোরদার করার পাশাপাশি সকল শিক্ষককে আইসিটি জ্ঞানে দক্ষ করে তুলতে হবে। এক কথায়, সমসাময়িক বিষয় সম্পর্কে শিক্ষকদের অধিকতর ধারণা থাকতে হবে। কারণ ভবিষ্যৎ শিক্ষা কার্যক্রম আইসিটি জ্ঞান ব্যতীত কল্পনা করা যাবে না। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে আইসিটি জ্ঞানে দক্ষ শিক্ষকের বিকল্প নেই। আমাদের দেশের সরকার প্রত্যেক নাগরিকের শতভাগ শিক্ষা নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমি আশাবাদী, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সকল শিক্ষক হবেন আইসিটি জ্ঞানে দক্ষ। একেকজন শিক্ষক হবেন আইসিটির রোল মডেল। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা হবে পৃথিবীর কাছে রোল মডেল।
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট