চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

পর্ব-২৯ঃ ব্যাংকক টু বাংলাদেশ

মো. ফারুক ইসলাম

১১ জুলাই, ২০২০ | ১২:২৮ অপরাহ্ণ

টিজি-৬২১ থাই বিমানটি ব্যাংককের উদ্দেশ্যে ছুটছে। মনে হচ্ছিল পুরো সপ্তাহের সব ক্লান্তি শরীরে ভর করেছে। চোখে ঘুম ঘুম ভাব। বিমানে উড্ডয়নের পর ভাত আর কোমল পানীয় খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করেছি। মাথায় অনেক কিছু ঘুরপাক খাচ্ছিল। গত এক সপ্তাহ যেন স্বপ্নের ঘোরে কেটে গেছে। মনে হচ্ছে স্বপ্নের ঘোর থেকে বেরিয়ে এলাম এইমাত্র। খুব মিস করবো সবাইকে যখন ঢাকা নেমে সবাই পৃথক হবো তখন থেকে। তবে আমাদের মধ্যে একটা বন্ডিং ছিলো। ফিলিপাইনে থাকাকালীন ফেসবুক মেসেঞ্জারে সবাই মিলে ফিলিপাইন ট্যুর ফাস্ট ব্যাচ-২০১৯ নামে একটা গ্রুপ খুলেছিলাম আমি। সে গ্রুপে সবাইকে যুক্তও করেছি। তাই বাংলাদেশের যেই প্রান্তে থাকি না কেন সবার সাথে যোগাযোগ অব্যাহত থাকবে সেটা এক প্রকার নিশ্চিত। বিমান ছুটছে ড্রাগন ফলের দেশ থাইল্যান্ডের দিকে। ফিলিপাইন থেকে থাইল্যান্ড যেতে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা লাগে। দীর্ঘ সময় জেগে থেকে জার্নি করা কষ্টসাধ্য। তাই শরীরের ক্লান্তি দূর করতে ঘুমিয়ে পড়লাম। আমরা যখন ব্যাংককের সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্টে পৌঁছলাম তখন প্রায় বিকাল ৪টা। বিমান থেকে নেমে এয়ারপোর্টে প্রবেশ করলাম। যাত্রা বিরতি প্রায় ৬ থেকে সাড়ে ৬ ঘণ্টা। এই দীর্ঘ সময় এয়ারপোর্টের ভেতরে কাটাতে হবে। তবে ফিলিপাইন যাবার সময় সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্ট দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। এবার ফিরতি পথে ভালো করে ঘুরে দেখার পালা। মনি আপা আর আমি হেঁটে হেঁটে দেখছিলাম এয়ারপোর্টের পরিবেশ।

একটু পর আপা বললেন, ওনার খিদে পেয়েছে। কিছু খেতে হবে। আমাকে নিয়ে এয়ারপোর্টের একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলেন। মেন্যু থেকে খাবার পছন্দ করে অর্ডার করলেন। অল্প পরিমাণ ভাত সাথে চিংড়ি মাছ। দাম ছিলো অনেক। থাই মুদ্রায় ৯০০ বাথ। আমি হাসছিলাম। মনি আপা বললেন, কি হাসছিস কেন? উত্তরে বললাম, ৯০০ বাথ দিয়ে বাংলাদেশে কমপক্ষে ১০ জন মানুষ পেট ভরে ভালো কোন খাবার হোটেলে খেতে পারতো। আসলে এয়ারপোর্টে জিনিসপত্রের দাম একটু বেশি। খাওয়া শেষে ফ্রি ওয়াই-ফাই জোনের কোড এক্টিভ করে অনলাইনে বাড়ির সবার সাথে কথা বললাম। সে সাথে কয়েকজনের মোবাইলেও ওয়াই-ফাই চালু করে দিলাম। মোবাইলে একদম চার্জ ছিলো না। তাই মোবাইলে চার্জে লাগানোর কর্নারে গিয়ে চার্জে লাগালাম। আমাদের পাশেই বসা ছিলেন ইন্ডিয়ান কিছু নাগরিক। তাদের সাথে পরিচিত হয়ে আলাপ জুড়ে দিলাম। ওনারা থাই বিমানে অস্ট্রেলিয়া যাবেন। যাত্রা বিরতিতে বসে আছেন আমাদের মতো। ওইদিন বাংলাদেশ আর ইন্ডিয়ার মধ্যে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ম্যাচ চলছিল। ছোট্ট এক ইন্ডিয়ান ছেলে তার মায়ের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে ক্রিকেট ম্যাচ দেখছিল। ইন্ডিয়ান ক্রিকেটাররা চার ছক্কা হাঁকালে তার কি আনন্দ। কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম, এতো খুশি কেন। সে বললো, ইন্ডিয়ান ক্রিকেটাররা ভালো ব্যাটিং করছে তাই। আমি মজা করে বললাম, দেখো আমার বাংলাদেশই জিতবে। তোমার ইন্ডিয়া আজ হেরে যাবে। সে তো আরো বেশি আশাবাদী! বললো ইন্ডিয়াই জিতবে। মোবাইলে চার্জ দেয়া শেষ হলে সবাই ঘুরতে লাগলাম এয়ারপোর্টে। অনেক সুন্দর রাতের সুবর্ণভূমি। অসাধারণ সব দোকানপাট। মনে হচ্ছে কোন দেশের ভেতরকার মার্কেটে ঘুরছি। ব্যস্ততম বিমান বন্দর হওয়ায় জনসমাগম বেশি ছিলো। যেখানেই যাচ্ছি ছবি তুলে স্মৃতি ধরে রাখার চেষ্টা করছি। রাত সাড়ে দশটার কাছাকাছি সবাই এক জায়গায় জড়ো হলাম। এবার বাংলাদেশগামী বিমান ধরার পালা। বিগত ৬ ঘণ্টা অনেক ঘুরলাম সুবর্ণভূমি বিমান বন্দরে। এবার হাঁটতে লাগলাম বাংলাদেশগামী থাইএয়ারওয়েজের টিজি-৩৩৯ বিমান বন্দরের টার্মিনালে। সোয়া ১১টায় আমাদের ফ্লাইট। এগারোটার দিকে যখন বিমানে উঠছিলাম থাইল্যান্ডে তখন বৃষ্টি হচ্ছিল। প্রথমবার বিমানের সিঁড়ি বেয়ে উঠলাম বিমানে। ভেতরে প্রবেশ করে নির্ধারিত আসনে বসে পড়লাম। সিল্ট বেল্ট বেধে এবার অপেক্ষা প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে যাত্রার। সোয়া ১১টায় টিজি-৩৩৯ বিমানটি সুবর্ণভূমির রানওয়েতে চলতে লাগলো। এক সময় দ্রুত গতিতে রানওয়ে ছেড়ে থাইল্যান্ডের আকাশে উড়াল দিলো। বিমানে রাতের খাবার খেয়ে সিটের সামনের মনিটরের ম্যাপে বিমানের গতিপথ দেখছিলাম। ছোটবেলায় বিমান আকাশে উড়তে দেখলে অনেক কিছুই চিন্তা করতাম। আকাশে তো সমতলের মতো রাস্তা নেই। তাহলে বিমান চলে কেমনে। আর একটার সাথে আরেকটার ধাক্কা লাগে না কেন! আজগুবি সব ছেলে মানুষী চিন্তা যাকে বলে। কিন্তু যখন বুঝতে শিখলাম তখন এসব মনে করে হাসতাম। আজও সব মনে করে হাসি পাচ্ছিল। আমাদের দলের সুইচিং মারমা দাদা অসুস্থ ছিলেন। ওনার লুজ মোশন চলছিল। বেচারা নাকি বার বার বিমানের টয়লেটে আসা-যাওয়া করছিলেন। মনি আপাকে নাকি ঘুমাতেই দেননি। বিমান মায়ানমায়ের আকাশে প্রবেশ করার পর মন বলছিল আর বেশি দূরত্ব নাই বাংলাদেশের। ঘণ্টাখানেক পর বাংলার জমিনে নামবো। মায়ানমারে আকাশসীমা পার হয়ে বিমান যখন বাংলাদেশের আকাশসীমায় প্রবেশ করছিল তখন রাত প্রায় একটা। আমরা দেড়টার দিকে ঢাকার শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমান বন্দরে পৌঁছলাম।-(চলবে)
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট