চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পর্ব-২৪ঃ পোর্ট সান্টিয়াগো দর্শন

মো. ফারুক ইসলাম

৬ জুলাই, ২০২০ | ১২:২৮ অপরাহ্ণ

সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে আমরা ফিলিপাইনের ম্যানিলায় অবস্থিত ঐতিহাসিক স্থান পোর্ট সান্টিয়াগো দেখতে এলাম। এই স্থানটি ফিলিপাইনিদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এই দুর্গ সম্পর্কে জানা যায়, ফোর্ট সান্টিয়াগো ফিলিপিন্সের নতুন প্রতিষ্ঠিত শহর ম্যানিলার জন্য স্প্যানিশ নৌ চালক ও গভর্নর মিগুয়েল ল্যাপেজ দে লেজাজপি নির্মিত একটি দুর্গ। প্রতিরক্ষা দুর্গটি ম্যানিলার প্রাচীরযুক্ত শহর ইন্ট্রামুরাসে অবস্থিত। দুর্গটি ম্যানিলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান। স্পেনিয় সাম্রাজ্য এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এর কারাগারে বেশ কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছিলেন। ফিলিপাইনের জাতীয় নায়কদের একজন জোসে রিজাল ১৮৯৬ সালে মৃত্যুদন্ডের আগে এখানে বন্দী ছিলেন। রিজাল শ্রাইন জাদুঘরটি তাদের সংগ্রহে বীরের স্মৃতিচিহ্ন প্রদর্শন করে। দুর্গটির নামকরণ করা হয়েছিল সেন্ট জেমসের (স্পেনিয় সান্টিয়াগো) নামে। দুর্গটির পরিধি ২ হাজার ৩০ ফুট (২০২০ মিটার) এবং এটি ত্রিভুজাকার। ২২ ফুট উঁচু দেয়াল, ৮ ফুট দৈর্ঘ্যসহ প্রয়োজনীয় যোগাযোগের জন্য রাস্তা রয়েছে এটিতে। লিমাহংয়ের নেতৃত্বে চীনা জলদস্যুরা যখন আক্রমণ করেছিল তখন শহরটির বেশিরভাগ অংশ ধ্বংস হয়ে যায়। এক সময় দুর্গটির সামনে নদী দ্বারা বেষ্টিত ছিল। শক্ত পাথর দিয়ে ইন্ট্রামুরোসের মূল দুর্গ প্রাচীরের সাথে একত্রে ১৫৯০ সালে ফোর্ট সান্টিয়াগোর নির্মাণ শুরু হয়েছিল এবং গমেজ পেরেজ দশ মরিয়াসের রাজত্বকালে ১৫৯৩ সালে শেষ হয়েছিল। ১৮৮০ সালের জুলাইয়ের ভূমিকম্পে দুর্গের সম্মুখভাগটি ধ্বংস হয়েছিল। ১৭১৪ সালে, ফোর্ট সান্টিয়াগোয়ের অলঙ্কৃত ফটকটি কয়েকটি সামরিক ব্যারাক সহ একসাথে খাড়া করে নির্মিত হয়েছিল। ১৮৮০ সালের লুজন ভূমিকম্প পুরো ম্যানিলা শহরকে অনেকাংশে ধ্বংস করে দিয়েছিল। এতে দুর্গটির অনেক অংশ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে দুর্গটি সাধারণত বন্দি শিবির হিসেবে ব্যবৃহত হয়েছিল। ১৯৪৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ম্যানিলার যুদ্ধে আমেরিকান এবং ফিলিপিনো সামরিক মর্টার শেলে দুর্গটির ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়। এছাড়াও ফোর্ট সান্টিয়াগোর অন্ধকারে কোয়ার্টারে বন্দী থাকার কারণে প্রায় ৬০০ আমেরিকান যুদ্ধ বন্দী শ্বাসরোধ ও ক্ষুধায় মারা গিয়েছিলেন। ফিলিপাইন ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করার পর দুর্গটিকে নতুন করে নির্মাণ করা হয়। তবে এখানকার ঐতিহাসিক চিহ্নগুলো এখনো স্পেন, ব্রিটিশ, জাপান আর আমেরিকার নিষ্ঠুর অত্যাচারের স্মৃতি বহন করছে।

আমরা যখন দুর্গের ভেতরে প্রবেশ করছিলাম সূর্য তখন খাড়াভাবে কিরণ ছড়াচ্ছিল। ভেতরে যতই যাচ্ছি, ততই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো দেখে অবাক হচ্ছি। কিছুদূর যাওয়ার পর পরিত্যক্ত একটা কামানের সামনে গিয়ে সবাই দাঁড়ালাম। সেখানে একজন গাইড আমাদের পোর্ট সান্টিয়াগোর করুণ ইতিহাস সম্পর্কে বলতে লাগলেন। এরপর আমরা সামনের দিকে হাঁটতে লাগলাম। দেখলাম মূল দুর্গের গেটের সামনে একটি লেক। মনে হয় এটি ইতিহাসে উল্লেখিত সেই পুরনো নদী। কালের বির্বতনে এখন ভরাট হয়ে লেকে পরিণত হয়েছে। আস্তে আস্তে আমরা ভেতরে প্রবেশ করতে লাগলাম। ভেতরে প্রবেশ করেই দেখলাম ফিলিপাইনের জনগণের জাতীয় বীর জোসে রিজালের ম্যুরাল। সবুজ ঘাসে ভরা একটা মাঠের এক কোণে ম্যুরালটি বসানো। আমরা ম্যুরালের সামনে দলগত এবং একক কয়েকটা ছবি উঠালাম। এরপর দুর্গের ভেতরে যেতে লাগলাম। সেখানে একটি যাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে। যাদুঘরে প্রবেশ করতেই নির্দেশনা আসলো গুরুত্বপূর্ণ স্থান হওয়ার কারণে কিছু কিছু নিদর্শনের ছবি তোলা যাবে না। কে শোনে কার কাহিনী। যে, যেদিকে পারছে ছবি উঠাচ্ছে। আমি আর চৌধুরী শারমিন আপা সুন্দর সুন্দর স্থাপনা দেখলেই ছবি তুলছিলাম। যাদুঘরের আলো আঁধারি পরিবেশটা খারাপ লাগছিল না। তাই হেঁটে হেঁটে ঐতিহাসিক এই যাদুঘরে রক্ষিত জিনিসপত্রগুলো দেখছিলাম। যাদুঘরে কেউ প্রবেশ করলে একই পথ দিয়ে বের হতে হয় না। হাঁটতে হাঁটতে বের হবার পথও আবিষ্কার হয়ে যায়। যাদুঘর থেকে এক সময় বের হয়ে এলাম। এবার একটা সরু পথ ধরে হাঁটতে লাগলাম। হাতের বাম পাশে দুর্গের ধ্বংসাবশেষ আর ডানপাশে বিশাল গলফ খেলার মাঠ। মূল দুর্গ থেকে বের হয়ে আমরা দুর্গের এরিয়ায় নির্মিত কিছু দোকানে ঢুকলাম। দোকানগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন আইটেমের জিনিসপত্র। আমরা দেখছিলাম আর ছবি তুলছিলাম। কেউ কেউ পছন্দসই কিছু জিনিস কিনলেন। পোর্ট সান্টিয়াগো থেকে যখন বের হলাম তখন হালকা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। গাড়িতে উঠার আগে কেউ কেউ মাথার ক্যাপও কিনলেন। এবার আমাদের যাত্রা ফিলিপাইনের নামকরা স্থান ওশান পার্কে। ফিলিপাইন সাগরের কূল ঘেঁষে গড়ে উঠা সামুদ্রিক জীব বৈচিত্র্যের এই পার্ক দেখতে যাবার পূর্বে দুপুরের লাঞ্চ ব্রেকে যেতে হবে।-(চলবে)

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট