চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পর্ব-১৩ঃ স্কুল ও প্রাতিষ্ঠানিক ভ্রমণ

মো. ফারুক ইসলাম

২৫ জুন, ২০২০ | ৫:৩৫ অপরাহ্ণ

আমাদের ভ্রমণের তৃতীয় দিনটা ছিলো (২৮ জুন, ২০১৯) ব্যস্ততম একটা দিন। ওইদিন আমাদের প্রশিক্ষণ বন্ধ ছিল। তৃতীয় দিনের শিডিউলে ছিল ফিলিপাইনের শিক্ষা ডিপার্টমেন্টের কেন্দ্রীয় অফিস পরিদর্শন, ফিলিপাইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টিগ্রেটেড স্কুল, নিনয় একুইনো এলিমেন্টারি স্কুল পরিদর্শন এবং সবশেষে ফিলিপাইনের ঐতিহ্যবাহী আরেক বিশ্ববিদ্যালয় নিউ এরা বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন। এবার দিনের শুরুতে আসা যাক। সকাল বেলা ইউপি হোটেলের রেস্টুরেন্টে নাস্তা করতে গেলাম। এবার খাবারের মেন্যুতে পরিবর্তন দেখলাম। মানে ডিমের সাথে মাছ পরিবেশন করা হয়েছে। ঝোল ছাড়া তেলে শুকনো মাছ দেখে মনে মনে খুশি হলাম। কিন্তু সে খুশি কিছুক্ষণের মধ্যে বিলীন হয়ে গেলো মাছ-ভাতে মুখ দিয়ে। কারণ মাছে মুখ দিয়ে বুঝলাম এই মাছ বাংলাদেশের মাছের মতো তেলে ভাজা না। কিছুই নাই মাছে। ভেতরে অনেকটা কাঁচা। স্বাদও নেই। কি করা যায় চিন্তায় পড়ে গেলাম। হঠাৎ খাবার টেবিলে দেখলাম বাংলাদেশের এক নম্বর সরিষার তেলের বোতল। সবাই সাদা ভাতের সাথে সরিষার তেল মেখে, পেঁয়াজ, মরিচ দিয়ে খাচ্ছিলেন। আমিও বাদ যাবো কেন। তাদের দেখাদেখি মাছ খাওয়া বাদ দিয়ে সাদা ভাতের সাথে সরিষার তেল, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ মিশিয়ে খেতে আরম্ভ করলাম। উফ! যেন দেশি খাবারের স্বাদ মুখে পেলাম। মাছের চেয়ে দেশি সরিষার তেলের চাহিদাটা তখন বেড়ে গিয়েছিল আমাদের কাছে। ভেবেছিলাম সরিষার তেলের বোতলটা রুনা লায়লা আপা নিয়ে গেছেন। কিন্তু এক বছর পর আমাদের মেসেঞ্জার গ্রুপে তেল নিয়ে আলাপ করতে গিয়ে তেলের মালিকের নাম আবিষ্কার করলাম। তিনি আর কেউ নন, আমাদের সহযাত্রী বড় ভাই কমল সরকার। যিনি অভিমানের সুরে বললেন, খাঁটি সরিষার তেল খাওয়ানোর পরেও মালিকের নাম এক বছর পরে জানলাম বলে।

যদি ট্যুরের কাহিনীটা না লিখতাম তাহলে সরিষার তেলের মালিকের নাম আদৌ কতোদিনে জানতাম সেটা ছিল ভাববার বিষয়। ওইদিন অনেকটা পেট ভরেই খেলাম। এছাড়া নিজের থেকে আরও ৪৫ পেসো বেশি দিয়ে অতিরিক্ত ভাত কিনে খেয়েছিলাম সরিষার তেল পেয়ে। সকালের খাবার খেয়ে সবাই হোটেলের রিসিপশনে আসলাম। আমাদের যাত্রা এবার ফিলিপাইনের শিক্ষা বিভাগের কেন্দ্রীয় অফিসে। হাতে কিছুটা সময় থাকায় সবাই হোটেলের মনোরম লোকেশনে ছবি তোলা আরম্ভ করে দিলাম। ছবি তোলা যেন শেষই হচ্ছে না। সবাই আনন্দচিত্তে একের পর এক ছবি তুলছিলেন। ২৫ জন মানুষের ছবি তোলার ধরন আলাদা আলাদা। আসলে ইউপি হোটেলের পরিবেশটা এতোই সুন্দর যে, যে কেউ দেখে মুগ্ধ হবেন। তাই মুগ্ধতা আমাদেরকেও ছুঁয়ে গিয়েছিল। আর এই ছুঁয়ে যাওয়াকে ফ্রেমে বন্দী করতে আমরা কার্পণ্যবোধ করিনি। বাহারুল ইসলাম আর ফারুক আলম স্যারের নির্দেশনা ছিল গ্রুপের সকল ছবি আমি তুলবো। আর মেসেঞ্জারে আমাদের একটা গ্রুপ খুলে সে ছবি গ্রুপে শেয়ার করবো। গ্রুপ থেকেই সবাই ছবি ডাউনলোড করে নিবে। ছবি উঠানোর দায়িত্ব যেহেতু আমার উপর অর্পিত হয়েছে তখন ফটোগ্রাফারের কাজটা আমাকেই করতে হচ্ছিল। তবে ফাঁকে ফাঁকে নিজের ছবি উঠাচ্ছিলাম। এক্ষেত্রে আমার একটা পরিকল্পনাও ছিল। কুঁড়িগ্রামের ভুরুঙ্গমারী উপজেলার শিক্ষিকা চৌধুরী শারমিন মনি আপাকে ছবি তোলার ক্ষেত্রে আমাকে সাহায্য করতে বলেছিলাম। এরপর থেকে আপার, গ্রুপের ছবি তুলতাম আমি। আর আমার ছবি তুলে দিতেন মনি আপা। ওনার মোবাইলেই ট্যুরের অধিকাংশ ছবি তোলা। আর সে ছবিই এখন আমাদের ফিলিপাইন ভ্রমণের স্মৃতি হয়ে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।-(চলবে)

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট