চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

 পর্ব-১১ঃ ইউনিভার্সিটি অফ দ্যা ফিলিপাইন্সে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ

মো. ফারুক ইসলাম

১৯ জুন, ২০২০ | ১২:২৭ অপরাহ্ণ

প্রথম দিনের জার্নি শেষে ক্লান্ত শরীর নিয়ে সবাই গভীর ঘুমে অচেতন। প্রথম দিন বলা হয়েছিল সকাল ৬টায় ওঠে নাস্তা করে প্রস্তুত থাকতে। যেহেতু আমাদের ট্যুরটা ছিল প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা সফরের। দ্বিতীয় দিনের শিডিউলে সকাল নয়টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত ছিল প্রশিক্ষণ। আমাদের প্রশিক্ষণের নাম ছিলো মর্ডান স্কুল ম্যানেজমেন্ট প্রাকটিস। প্রশিক্ষণের ভেন্যু ছিল ইউনিভার্সিটি অফ দ্যা ফিলিপাইন্সের কলেজ অফ এডুকেশনে। ইউনিভার্সিটি অফ দ্যা ফিলিপাইন্স ফিলিপাইনের অনেক পুরাতন এবং বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়। এটি মেট্রো ম্যানিলায় অবস্থিত। আমাদের হোটেল থেকে গাড়িতে করে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে ১৫/২০ মিনিট সময় লাগে। পরবর্তী পর্বে ইউনিভার্সিটি অফ দ্যা ফিলিপাইন্স নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। ঘড়ির এলার্ম দিয়ে না ঘুমালেও আমি আর আমার রুমমেট আবদুর রকিব ভাই সকাল হলে একজন আরেকজনকে ডাকতে থাকি। কিন্তু কেউ বিছানা ছেড়ে উঠছিলাম না। এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজেক্ট এসিসটেন্ট এন্না কারিন্না এস. বাতিস্তা সকাল ৬টায় হোটেলে এসে হাজির। আমরা বিছানা থেকে ওঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলাম। আগে থেকেই হোটেলের রেস্টুরেন্টে আমাদের জন্য খাবার প্রস্তুত ছিলো। সবাই খাবার টেবিলে বসে খাবারের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। সকালের যেটা নাস্তা ছিলো সেটা আসলে বাংলাদেশের মতো চা, বিস্কুট পরোটা কিংবা অন্য খাবার না। খাবারের মেন্যুতে ছিলো অল্প ভাত, সেদ্ধ ডিম, আনারসের জুস আর কফি। ভাতগুলো আঁঠালো। কোন প্রকার ঝোল ছাড়া শুকনো খেতে গলায় আটকে যাচ্ছিল। কারণ আমরা বাংলাদেশিরা তরকারির সাথে ঝোল খেতে অভ্যস্ত। অবশ্যই একেক দেশের একেক খাবার। লবণ দিয়ে সাদা ভাত আর ডিম খাচ্ছিলাম আর বাংলাদেশের সকালের নাস্তা মিস করছিলাম। 

ভাত খাওয়া শেষে গরম গরম কফি খেতে খারাপ লাগেনি। নাস্তা শেষে সবাই হোটেলের বাইরে আসলাম। আমাদের আবার ফটো রোগ ছিলো। যেখানে যাই ছবি তুলতেই হবে। তাছাড়া চারদিকের এতো সুন্দর দৃশ্য দেখে ছবি না তুলে উপায়ও ছিল না। প্রথম দিন যে যার যার মতো ছবি তুলতে লাগলেন। সাথে গ্রুপ ছবি তো আছেই। ছবি তোলা শেষে সবাই অপেক্ষারত মিনিবাসে উঠলাম। আমাদের সাথে ছিলেন ইউনিভার্সিটি অফ দ্যা ফিলিপাইন্সের গাইড এন্না কারিন্না এস. বাতিস্তা। গাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলো। আমরা সবাই গাড়িতে গান, গল্পে, আড্ডায় ব্যস্ত। হোটেলের ক্যাম্পাস থেকে মূল সড়কে আসার পর রাস্তার দুইপাশের সৌন্দর্যে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম সবাই। চার লেনের রাস্তার উভয় পাশে সূর্যমুখী ফুলের গাছ। হলুদ রঙের সূর্যমুখী ফুটে আছে গাছে গাছে। যেন আমাদের ফুলেল অভ্যর্থনা জানাতে তারা ব্যস্ত। গল্প, আড্ডায় আর প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে চলে আসলাম ফিলিপাইনের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অফ দ্যা ফিলিপাইন্সে। মনে হয় আমাদের জন্য একের পর এক চমক অপেক্ষা করছিল। এতো সুন্দর পরিবেশ না দেখলে বলে বুঝানো যাবে না। ভিতরে প্রবেশ করেই ঐতিহ্যের নমুনাগুলো অবাক বিস্ময়ে দেখছিলাম। সত্যি অনেক সুন্দর আর অবাক হওয়ার মতো! প্রশিক্ষণ কক্ষে প্রবেশ করে সবাই যে যার যার মতো বসে পড়লাম। আমি একদম পেছনের বেঞ্চে বসেছিলাম। কারণ ছবি তোলার দায়িত্ব ছিল আমার। সামনে বসলে প্রশিক্ষকদের সমস্যা হবে তাই পেছনে বসা। আমাদের সবাইকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপর দুই দেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু হলো। শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন ইউনিভার্সিটি অফ দ্যা ফিলিপাইন্সের কলেজ অব এডুকেশনের ডিন ড. জেরোম বুয়েনভায়েজ। তিনি বক্তব্য শুরু করলেন সবাইকে সুপ্রভাত জানিয়ে। ফিলিপেনো ভাষায় সবার উদ্দেশ্যে বললেন, মাগানডাং ওমাগা। এর অর্থ সুপ্রভাত। প্রথমদিনের প্রশিক্ষণের শুরুতে একটা ফিলিপেনো শব্দ শিখলাম। আর এই শব্দের ব্যবহার চলেছিল পুরো ট্যুর জুড়ে। বাংলাদেশে এসেও আমাদের মেসেঞ্জার গ্রুপে ফিলিপাইন থেকে শিখে আসা অনেক শব্দ আমরা ব্যবহার করি। মিস্টার জেরোম আমাদের সাথে একে একে সবার পরিচয় করিয়ে দিলেন। অনেক স্মার্ট, সদালাপী, হাসোজ্জ্বল ব্যক্তিকে দেখে বুঝতেই পারিনি তিনি কলেজ অফ এডুকেশনের ডিন। কারণ দেখে মনে হবে ৩০/৩৫ বছরের একজন যুবক। বক্তব্য প্রদান শেষে যথারীতি আমাদের প্রশিক্ষণ সেশন-১ শুরু হলো। শুরুতেই টিচিং ইন দ্যা আর্লি গ্রেডস এরিয়া নিয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন প্রফেসর মারি ইভেট্টি কনসেপিয়ন আলকাজার। তিনি খুব সুন্দরভাবে বিদ্যালয়ে প্রথম ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের কিভাবে পড়া এবং লেখার অভ্যাস করা যায় সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলেন। প্রাক-প্রাথমিকের বাচ্চাদের পড়া আর লেখার কাজ করানো সত্যি জটিল এক ব্যাপার। এই বিষয়ে তাঁর সহজ ও বোধগম্য উপস্থাপনা আমাদের পেশাগত জীবনে অনেক কাজে লাগবে বলে আশা করছি। তিনি এক সময় কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক ছিলেন। ইউনিভার্সিটি অফ দ্যা ফিলিপাইন্স থেকে তিনি শিক্ষায় মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন। প্রশিক্ষণের ফাঁকে আমাদের আপ্যায়নও করা হয়েছিল। খাওয়ার আগে প্রজেক্ট এসিসটেন্ট জেসন অর্নিডো’কে জিজ্ঞেস করেছিলাম খাবারগুলো হালাল কিনা। সে বলল, যেহেতু আমরা বাংলাদেশ থেকে এসেছি, তাই তাদের কাছে নির্দেশনা ছিলো আমাদের যেন হালাল খাবার পরিবেশন করা হয়। (বাকি অংশ পরের পর্বে)

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট