চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

পর্ব-৪ঃ থাইল্যান্ডের হাতছানি

মো. ফারুক ইসলাম

১২ জুন, ২০২০ | ১২:২২ অপরাহ্ণ

সিএনজি থেকে নেমে দেখলাম আমার আগেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষিকা হালিমা খাতুন ম্যাডাম, ওনার স্বামী, বাগেরহাট জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক কমল কৃষ্ণ বৈদ্য দাদা পৌঁছে গিয়েছেন। একটু পর সবাই এয়ারপোর্টে আসতে শুরু করলেন। আমাদের গ্রুপে আমরা মোট সদস্য ছিলাম ২৫ জন। ২৫ জনের মধ্যে বাংলাদেশের ১৪ জেলার মোট ২৩ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ছিলাম। বাকি দুইজনের একজন ছিলেন আমাদের টিম লিডার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক বাহারুল ইসলাম স্যার। অপরজন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব ফারুক আলম স্যার। বলে রাখা ভালো, অসম্ভব মিশুক, ভালো মনের মানুষ ছিলেন আমাদের দুই স্যার। পুরো ট্যুরটা দুইজন স্যারের কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এয়ারপোর্টে একত্রিত হবার পর সবাই ইমিগ্রেশনের কাজে ভেতরে প্রবেশ করলাম। ভেতরে ঢুকে সারিবদ্ধভাবে সবাই পাসপোর্ট আর বিমানের টিকিট হাতে নিয়ে ইমিগ্রেশনের কাজ সম্পন্ন করে আমাদের লাগেজ নিয়ে থাই এয়ারওয়েজের কাউন্টারে গেলাম। সেখানে ওজন ও চেকিং শেষে আমাদের লাগেজ আর ব্যাগ বিমানে তোলার জন্য নিয়ে গেলো। উল্লেখ্য, আমাদের সবার ভিসা ছিল অন এরাইভল ভিসা। আর যাত্রা পথে আমাদের থাইল্যান্ডে দুই ঘণ্টার ট্রানজিট ছিল। সব কাজ শেষে হাতের ব্যাগ থেকে বাংলাদেশের পতাকাটা বের করে সবাই কয়েকটা ছবি তুললাম।

দেশের পতাকা দেখে সবাই অনেক উৎফুল্ল ছিলেন। প্রত্যেকে পতাকা নিয়ে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। আসলে দেশের বাইরে গেলেই বুঝা যায় দেশের জন্য মায়া। দেশের জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা দেশের বাইরে খেলতে নামলে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের সময় অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি হয়। তেমনি আমাদের গ্রুপে জাতীয় পতাকা পেয়ে সবার দেশের প্রতি মমত্ববোধ জাগ্রত হয়েছিল। কারণ ফিলিপাইনে থাকলেও প্রিয় মাতৃভূমির লাল সবুজের পতাকাটা আমাদের সাথে থাকবে। আর ফিলিপাইনের বুকে প্রিয় পতাকা হাতে সবাই ছবি তুলবো এ যেন অন্যরকম অনুভূতি!

আগেই বলেছি, আমাদের ফ্লাইট রাত ২টায়। তাই বাকি সময়টা এয়ারপোর্টের ভেতরের দৃশ্য দেখে, সবার সাথে পরিচিত হয়ে এবং আড্ডা দিয়ে কাটাতে লাগলাম।

রাত দেড়টায় ঘোষণা আসলো থাইল্যান্ডগামী থাই এয়ারওয়েজের টিজি-৩৪০ বিমানটি রাত ২টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। বুকের ভেতরটা খুশিতে ভরে গেল। কারণ জীবনের প্রথম বিমান ভ্রমণ বলে কথা। প্রথম কোন ট্যুরে দেশের বাইরে যাচ্ছি, তাই এক ধরনের চাপা উত্তেজনা কাজ করছিল মনে। হাতে পাসপোর্ট আর বিমানের টিকিট নিয়ে সবাই বিমানে উঠার জন্য হাঁটা শুরু করলাম। বিমানে উঠার আগে পড়লাম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। কারণ পায়ের জুতা থেকে শুরু করে কোমরের বেল্ট, ঘড়ি, মানিব্যাগ, মোবাইল যা কিছু আছে সবকিছু খুলে আলাদা ট্রেতে রাখতে হয়েছে। এরপর ফাইনাল চেক শেষে আমাদের বিমানে উঠার অনুমতি মিলল।

বিমানের দরজায় যাওয়া মাত্র থাই এয়ারওয়েজের বিমানবালারা সব যাত্রীদের থাই ভাষায় অভ্যর্থনা জানিয়ে ভেতরে ঢুকালেন। টিকিট নম্বর দেখে সবাইকে সিট খুঁজে দিচ্ছিলেন কেবিন ক্রুরা।

আমার বিমানের টিকিট নম্বর ছিল ২১৭৩৪২৯৬৫৬৭৮৫। আমরা ছিলাম ইকোনমি ক্লাসের যাত্রী। বিমানের সিটে বসার পর দেখলাম আমার ডানপাশের সিটে বাহারুল ইসলাম স্যার, বাম পাশের সিটে গাইবান্ধা জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষিকা ইফতিয়া বানু ম্যাডাম, তার পাশেই ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব ফারুক আলম স্যার। অর্থাৎ এক সারিতে ৪টি সিট ছিল। আমাদের চারজনেরই একই সারিতে সিট পড়েছিল। একটু পরেই ঘোষণা আসলো সিট বেল্ট বাঁধার। আমরা সিট বেল্ট বাঁধলাম। অল্প কিছুক্ষণ পর বিমান আস্তে আস্তে রানওয়েতে চলতে শুরু করলো। এরপর দ্রুত গতিতে রানওয়ে ছেড়ে আকাশে উড়াল দিল। আকাশে বিমান স্থির হবার পর খাবারের ট্রে নিয়ে হাজির কেবিন ক্রু। জিজ্ঞেস করলেন কি খাবো। আমি ভাত আর মুরগি বললাম। সাথে কমলার জুস। পাশাপাশি পানি আর থাই বনও দিলেন। যেহেতু গভীর রাতে আমাদের যাত্রা, তাই সবাই ক্ষুধার্ত ছিলাম।

আমাকে বাহারুল ইসলাম স্যার বললেন, ফারুক একেকবার একেক খাবার অর্ডার করবা, তাহলে থাইল্যান্ডের বিভিন্ন খাবারের স্বাদ নিতে পারবা। আসলে স্যার ছিলেন অভিভাবকের মতো। শুরু থেকেই আমার এবং পুরো টিমের সবার খুব কেয়ার নিচ্ছিলেন। সিটের সামনে ভাঁজ করে রাখা ট্রেতে খাবার রেখে খেতে শুরু করলাম। খাবার ছিল অনেক সুস্বাদু খাবার। প্লাস্টিকের চামচে খেতে মন্দ লাগছিল না। আমাদের বিমান থেকে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৪ হাজার ফুট ওপরে ঘণ্টায় ৫৮১ কিলোমিটার বেগে ছুটছিল। বিমানে এসি চলার কারণে শীত বেশ ঠাণ্ডাও লাগছিল। তবে বিমানে ওঠার পরপরই সবাইকে বালিশ আর কম্বল দেয়া হয়েছিল। বালিশে মাথা রেখে, কম্বল গায়ে জড়িয়ে জীবনের প্রথম আকাশ ভ্রমণ উপভোগ করতে লাগলাম। আমার সিটের সামনে ছিল টিভি স্ক্রিন। আমি গান কিংবা কোন মুভি না দেখে ম্যাপ দেখছিলাম। ম্যাপে দেখলাম চট্টগ্রামের উপর দিয়ে যাচ্ছি। তখন অনুভূতিটা কেমন ছিল তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। আস্তে আস্তে বাংলাদেশের আকাশসীমা ছেড়ে বিমান প্রবেশ করলো মায়ানমারের আকাশ সীমায়। মায়ানমার রাষ্ট্রটা যে অনেক বড় তা সে দেশের আকাশসীমায় ঢুকলে বুঝা যায়। বিমান চলছেই তো চলছে, কিন্তু মায়ানমারের আকাশসীমা যেন শেষই হয় না। ফাঁকে ফাঁকে বাহারুল ইসলাম স্যারের সাথে বিভিন্ন বিষয় শেয়ার করছিলাম। স্যার কানে হেড ফোন লাগিয়ে কিছুক্ষণ ছবি দেখেন, কিছুক্ষণ গান শুনছিলেন। আমি অবশ্য অনেকটা ক্লান্তি বোধ করছিলাম। যেহেতু ২৪ তারিখ রাতে ট্রেনে ঘুম হয়নি। ২৫ তারিখ রাতেও ঘুম নাই। তাই কখন যে চোখে ঘুম এসে গিয়েছিল বুঝতেই পারিনি। (চলবে)

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট