চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পাকিস্তান সফরে প্রথম টি-টোয়েন্টি

মুশফিকের অভাবের সাথে সঙ্গী আক্ষেপ

হুমায়ুন কবির কিরণ

২৫ জানুয়ারি, ২০২০ | ৩:৪৭ পূর্বাহ্ণ

এক ম্যাচে কত কিছুর আক্ষেপ করবে বাংলাদেশ? অথচ শুরু থেকেই সব নিজেদের পক্ষে আসার কথা। টস জিতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ অর্ধেক কাজ তো করেই দিয়েছিলেন। তবুও কেন ব্যাটিংয়ে এ দশা! আবার বোলিংয়ে কেন একই ভুল? শেষটা তো বেদনাবিধুর। লোপ্পা ক্যাচ মিস। তিন বিভাগেই যেন ওলটপালট বাংলাদেশ। এমন পারফরম্যান্সে জয় কি মানায়? মানায় না বলেই গতকাল লাহোরে প্রথম টি-টোয়েন্টি জিতেছে পাকিস্তান। বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেছে স্বাগতিকরা। টস জিতে বাংলাদেশ স্কোরবোর্ডে তোলে ৫ উইকেটে ১৪১ রান। পাকিস্তান সেই লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে ৩ বল আগে, ৫ উইকেট হাতে রেখে। দুই দলের মন্থর ব্যাটিংয়ের প্রথম কারণ উইকেট। ধীরগতির উইকেটে সহজাত ব্যাটিং করা সম্ভব ছিল না। বল ব্যাটে আসছিল ধীরে। বল উঁচু-নিচু হচ্ছিল। তাইতো চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছোটেনি দুই ইনিংসেই। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৩৯.৩ ওভার খেলা হলো। অথচ ছক্কা হয়েছে মাত্র ৩টি। সেটাও বাংলাদেশের ইনিংসে। পাকিস্তানের ইনিংসে ছিল না কোনো ছক্কা! টি-টোয়েন্টি র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দল প্রমাণ করল ছক্কা ছাড়াও টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জেতা যায়। তামিম ইকবালের নতুন সঙ্গী নাঈম শেখ। দুই বাঁহাতির উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৭১ রান। মন্থর ব্যাটিংয়ে দুজন দৃষ্টি কাড়েন। পাওয়ার প্লের সুবিধা নিতে পারেননি। ৬ ওভারে রান মাত্র ৩৫। ধীরগতিতে ব্যাটিং করা তামিম উইকেটে থিতু হয়েছিলেন ভালোভাবেই। কিন্তু বিপিএলের ধারা বয়ে নিয়ে গেলেন পাকিস্তানেও। শুধু তামিমই কেন, কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে নাঈমকেও।

ম্যাচ হারের পর সংবাদ সম্মেলনে ক্রিকেটীয় দৃষ্টিতে মাহমুদুল্লাহ ম্যাচটাকে ভালো প্রতিযোগিতা বলছেন। কিন্তু তার মনে আক্ষেপ আছে ভালো রান করতে না পারার। আক্ষেপ আছে ভালো ফিল্ডিং দিতে না পারার। উইকেট-কন্ডিশনের কথা বলে কিছু দায় দুই ওপেনারের ওপরও কী চাপালেন মাহমুদুল্লাহ? না চাপানোর কারণ নেই। শুরুর দ্ইু ওপেনার উইকেটে জমে থেকেও ১১ ওভারে তোলেন ৭১ রান। ম্যাচ শেষে মাহমুদুল্লাহ তাই বলেন, উইকেট আমাকে কিছুটা বিস্মিত করেছে। বল পুরনো এবং নরম হয়ে যাওয়ায় শট খেলা বেশ কঠিন হয়ে যায়। আমাদের ১৫ রান কম হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। পাকিস্তান সফরে বাংলাদেশের টি- টোয়েন্টি অধিনায়ক বলেন, ফিল্ডিংটাও ভালো হয়নি। কিছু বাউন্ডারি বেশি দিয়েছি। তবে বোলিংটা ভালো হয়েছে বলতে হবে। স্পিনার আমিনুল ইসলামের সঙ্গে পেসাররাও ভালো করেছে। ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা হওয়া শোয়েব মালিকের সুরও মাহমুদুল্লাহ মতো। যা তামিম-নাঈমকে কাঠগড়ায় তুলবে, নতুন বল খুব ভালো ব্যাটে আসছিল। কিন্তু পুরনো বলে কাজটা সহজ ছিল না। গ্যাপ খুঁজে রান বের করতে হচ্ছিল। শোয়েব মালিক এবং মাহমুদুল্লাহর বক্তব্য অনুযায়ী, শুরুতে তামিমদের জন্য ব্যাট করা বেশ সহজ ছিল। পাকিস্তান বোলাররাও শুরুতে তাদের আউট করার তেমন সুযোগই তৈরি করতে পারেননি। কিন্তু তামিম-নাঈম উইকেটে সেট হয়েও বড় শটের জন্য ব্যাট চালাননি। দুই ওপেনার উইকেট বাঁচিয়ে রাখলেও তার সুবিধা তাই পুরনো এবং নরম বলে নিতে পারেননি মাহমুদুল্লাহ-আফিফরা। আফিফ এখনও নবীন, ভালো করলে বাহ্বা পাবেন তবে না করলেও ক্ষতিবৃদ্ধি হয় না। কিন্তু অভিজ্ঞরা যদি ব্যর্থ হন, তাহলে কি আর ম্যাচ জেতা যায়? শুধু তামিম- নাঈম-এর মাঝে ভুল না খুঁজে পরের দিকের ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বের ব্যর্থতাও হারের বড় কারণ। লিটন দাস ১২ করলেন আর সৌম্য করলেন ৭। অথচ এ দুজনের একজন ক্লিক করলেই মাহমুদউল্লাহ পেয়ে যেতেন তার ‘১৫’ রান।

পাকিস্তানও হাঁটছিল বাংলাদেশের পথে। তবে তাদের একজন শোয়েব মালিক ছিলেন। বাংলাদেশ দলের শোয়েব মালিক হতে পারতেন মুশফিকুর রহিম। কারণ, গত বিপিএলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন তিনি। খুলনা টাইগার্সের হয়ে ১৪ ম্যাচে ৭০.১৪ গড়ে তিনি রান করেছিলেন ৪৯১, স্ট্রাইক রেট ১৪৮। এর মধ্যে দুই ম্যাচে সেঞ্চুরির খুব কাছে গিয়ে থেমেছিলেন তিনি আর ফিফটি করেছিলেন ৪টি। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মুশফিক শেষ মুহূর্তে নিজেকে পাকিস্তান সফর থেকে সরিয়ে নেন। কারণ হিসেবে পাকিস্তানের নিরাপত্তা নিয়ে পরিবারের দুশ্চিন্তার কথা জানান তিনি। সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।

কিন্তু তার মতো অভিজ্ঞ একজনের অভাব ঠিকই বোধ করছে টাইগাররা। কারণ, তিনে ব্যাট করার মতো কেউ এই দলে নেই। তাছাড়া উইকেটের পিছনে থেকে মুশফিকের ম্যাচ দর্শন অভিজ্ঞতা মিস করেছে বাংলাদেশ। টাইগার একাদশে ৫ ওপেনার, এর মধ্যে ব্যাটিং অর্ডারে পরে নামা লিটন, আফিফ, সৌম্য সবাই-ই ওপেনার। কিন্তু দলে এত বেশি ওপেনার থাকায় বাধ্য হয়ে সবার ব্যাটিং অর্ডার পাল্টে গেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, টিম ম্যানেজম্যান্ট কিভাবে একজন ওপেনারকে কখনও একে-দুইয়ে আবার দুম করে পাঁচে বা তারও পরে নামিয়ে দেয়। এই ‘জুয়া’ হয়তো একদিন ক্লিক করে, নিশ্চিতভাবে লম্বা সময়ের সমাধান হতে পারে না। গতকাল এই পরিকল্পনায় কাজের কাজ কিছুই হয়নি। পাকিস্তানি পেসারদের গতির ঝড় সামলে টি-টোয়েন্টির গতিতে রান তোলার মতো মাহমুদউল্লাহ ছাড়া তেমন কেউ এই দলে কি আছেন?

প্রথম ম্যাচের ব্যাটিং দেখে আপাতত ‘নেই’ বলাই যায়। শুরুর দিকে দ্রুতগতিতে রান তুলতে না পারলে টি-টোয়েন্টিতে পরে সেই ‘গ্যাপ’ পূরণ করা কঠিন। তামিম আর নাঈমের ‘স্লো’ ব্যাটিং সেটাই দেখিয়ে দিয়েছে। আজ নিশ্চিতভাবেই একই পথে হাঁটবেন না তাঁরা। একথাও সত্য, মুশফিকের বিকল্প আদতে এই দলে নেই। মাহমুদউল্লাহ নিজে চারে নামলেও তিনের শূন্যতা থেকেই যাচ্ছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট