চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ইনজুরি থেকে ফেরার লড়াই তৌহিদুলের

দেবাশীষ বড়–য়া দেবু

২০ মে, ২০১৯ | ১:২৬ পূর্বাহ্ণ

একজন ফুটবলারের ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে ইনজুরি। এই ইনজুরির কারণে অকালেই ঝড়ে গেছে দেশের অগনিত ফুটবলার। ভুল চিকিৎসা এবং অর্থের অভাবেও অনেকে ফের মাঠে ফিরতে পারেন নি। কেউ কেউ ফিরেও আসেন। তাদেরই একজন চট্টগ্রামের তৌহিদুল ইসলাম। তিনি ইনজুরির বিরুদ্ধে রীতিমতো লড়াই এবং কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে ফেরার যুদ্ধে রয়েছেন। একবার নয়, একবছরের মধ্যে দু-দুবার একই পায়ে (বাম) আঘাত পান। এদিকে দ্বিতীয় দফায় অপারেশন শেষে ফুটবল ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেন নি। ছাড়তে পারেন নি ফুটবলের মায়া। ফেরার ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি নিজের সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছি। আমাকে মাঠে ফিরতেই হবে। আশা করি, একসময়ের দেশ সেরা মোহামেডানের সাদা-কালো জার্সিতে আগের মতো খেলতে পারবো। তবে তার এই ফিরে আসার পেছনে দুই কোচ মারুফুল হক ও আব্দুল কাইয়ুম সেন্টুর অনুপ্রেরণার কথা তৌহিদ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ওনার আমাকে সাহস জুগিয়েছেন, আশার আলো দেখিয়েছেন। একদিন সকালে সিআরবি সিরিসতলা মাঠে সাবেক এই জাতীয় ফুটবলার তৌহিদুল ইসলামকে দেখে কিছুটা অবাক হলাম। মর্ণিং ফিটনেস জোন’র ব্যানারে আমরা বুড়ো’রা (সবাই সাবেক ফুটবলার) সিআরবি’তে যাই ফুটবল খেলার মাধ্যমে শরীরকে সুস্থ্য রাখার জন্য। ম্যাচ শেষে জানলাম সে এসেছে ভয় কাটাতে। ইনজুরি থেকে ফিরে এই প্রথম প্রতিযোগিতা মুলক কোন খেলায় সে অংশ নিলো। এতোদিন সে বল ছাড়াই মাঠে লং রান, স্প্রিন্ট, স্ট্রেচিং, গ্রাউন্ড পিটি ইত্যাদি করেছে। এবারই বলের সংস্পর্শে এলেন। সে দোয়া চেয়ে বললেন, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের সেকেন্ড শ্লটে খেলার জন্য ঢাকা মোহামেডানে যোগ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে মোহামেডানের ২টি খেলা হয়ে গেছে। কিন্তু ১৮ জনের লিস্টে নাম থাকলেও এখনো মুল দলে ঢোকা হয়নি। কোচ তার ফিটনেস নিয়ে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন তৌহিদ। চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর ছেলে তৌহিদুল ইসলাম। মেসি মারাডোনার মতো বা’পায়ে রছেছে তার নিখুত কারিশমা। এলাকায় কয়েকদিনের মধ্যে তার নাম এপাশ ওপাশে ছড়িয়ে পড়ে। বোয়ালখালী ছেড়ে একবছর পাইওনিয়ার লিগে খেলার পর ২০০৩ সালে চট্টগ্রাম প্রথম বিভাগে মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া চক্রের হয়ে অংশ নেন। ২০০৫ সালে আবাহনীতে খেলে পরের বছর সিটি কর্পোরেশনে যোগ দেন। ২০০৬/৭ সালে ফেনী সকারের হয়ে বি-লীগে দারুণ নৈপূণ্য দেখান। তারই সুবাদে ঢাকা মোহামেডানের মতো দলে ২০০৮ সালে সুপার কাপে অংশ নেন। সে সুপার কাপে সেমিফাইনালে শেখ রাসেল এবং ফাইনালে আবাহনীর বিরুদ্ধে গোল করে রীতিমতো হিরো বনে যান। ২০১১ সালে ফেনী সকার ছেড়ে ঢাকা মোহামেডান এবং ২০১২ সালে ঢাকা আবাহনীতে যোগ দেন। আবাহনীতে ৪ বছর খেলে প্রথমবারে শিরোপা জয়ে স্বাদ পান। ২০১৬ সালে মুক্তিযোদ্ধায় যোগ দিয়ে ৫ গোল করেছিলেন এবং পরের বছল ঢাকা আবাহনী মোহামেডান ও রহমতগঞ্জের বিরুদ্ধে ৩ গোল করেছিলেন। ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে তার জীবনে ভয়াবহ একটা দিন হয়ে হাজির হয়। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বি লিগের খেলায় মুক্তিযোদ্ধার হয়ে চট্টগ্রাম আবাহনীর বিরুদ্ধে মারাত্মকভাবে আহত হন। প্রায় বেশ কয়েক মাস বিছানায় পড়ে ছিলেন বা পায়ে পাস্টার নিয়ে। সেরে উঠে মাঠে ফিরলেও দুর্ভাগ্য যেন তার পিছে লেগেই ছিলো। ২০১৮ সালের ৫ জানুয়ারী তারিখে আবারো ঢাকা মোহামেডানের বিরুদ্ধে মারাত্মকভাবে আহত হন। এবারেও সেই বঙ্গবন্ধু মাঠে এবং একই দল মুক্তিযোদ্ধার হয়ে। পরদিনই এপোলো হাসপাতালে অপারেশন করেন। উল্লেখ্য চট্টগ্রামের তৌহিদ ২০১১ সালে প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের খেলার সুযোগ পান। জাতীয় দলের জার্সিতে এ পর্যন্ত ১০টি ম্যাচ খেলেছেন এবং মালয়েশিয়া, ভুটান, নেপাল ভারত ও শ্রীলংকা, সফর করেছেন। এছাড়া বয়সভিত্তিক ২৩ দলেও ছিলেন। ২০১০ সালে শ্রীলংকায় অনুষ্ঠিত বীচ ফুটবলের সেরা খেলোয়াড় হয়ে গোল্ডমেডেল প্রাপ্তির কথা এখনো তৌহিদকে আবেগী করে তোলে। ঐ টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো। ব্যক্তিগত জীবনে স্ত্রী ও দেড়বছরের ছেলেকে নিয়ে তৌহিদের সুখের সংসার। আসুন আমরা দোয়া করি, সে যাতে আবারো মাঠে ফিরতে পারেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট