চট্টগ্রাম বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

গোলাপি বলে ধূসর বাংলাদেশ

স্পোর্টস ডেস্ক

২৩ নভেম্বর, ২০১৯ | ৬:১২ পূর্বাহ্ণ

টাইগারদের ব্যর্থতায় হতাশা দিয়ে শুরু হল দিবরাত্রির টেস্ট। প্রথমবার গোলাপি বলে খেলতে নামা প্রথম দিনটি বাংলাদেশের জন্য হলো ভুলে যাওয়ার মতো। টস জয় ছাড়া হাসির উপলক্ষ্য মেলেনি সারা দিনে। দুর্দান্ত বোলিং পারফরম্যান্সের পর ব্যাটিংয়ের দৃঢ়তায় ভারত প্রথম দিনেই নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ম্যাচের। ফ্লাডলাইটের আলোয় দুই দলের প্রথম খেলা। আর তাই কলকাতায় ইডেন সেজেছিল নতুন রঙে, নানা আয়োজনে। কিন্তু সব আয়োজন ফিকে হয়ে গেল বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের দৃষ্টিকটু ব্যাটিংয়ে। ভারতীয় পেসারদের তোপে প্রথম ইনিংসে টাইগাররা গুটিয়ে গেছে মাত্র ১০৬ রানে। গত টেস্টেও এমনই হয়েছিল। প্রথম ইনিংসটাই ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছিল বাংলাদেশকে। এবারও তেমন কিছুই অপেক্ষা করছে সামনে, একদিন পেরোতেই সেটা আন্দাজ করা যাচ্ছে। প্রথম দিন শেষে ভারত তুলেছে ৩ উইকেটে ১৭৪ রান। ইতিমধ্যেই তাদের লিড ৬৮ রানের। বিরাট কোহলি ৫৯ আর আজিঙ্কা রাহানে ২৩ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিনে মাঠে নামবেন। একটা ম্যাচ নিয়ে কতো আয়োজন। মাঠে-মাঠের বাইরে কথার ছড়াছড়ি। ইতিহাসের সাক্ষী হবার স্বাদ। দর্শকমনে উচ্ছ্বাসের ছড়াছড়ি। সবকিছুই এলোমেলো করলো বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। যে ভুল শুরুতেই তা থেকে বেরোনো যায়নি পুরো ইনিংসেই। ইমরুল কায়েস গোলাপী বলের প্রথম শিকার হিসেবে ফিরলেন মাত্র ৪ রান করে। অধিনায়ক মুমিনুল, মিথুন কিংবা মুশফিকুর রহিম, বলের মুভমেন্ট বোঝেননি কেউই। একে একে দিয়েছেন আত্মাহুতি। লাফিয়ে আসা বল ছেড়ে দিলেও পারতেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। টেস্ট ক্রিকেটের মেজাজ, নিজের ধৈর্যের পরিচয় কিংবা ক্রিকেটজ্ঞান, সবকিছুই যেন ভুলে গেলেন ব্যাটসম্যানরা। এতোদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা থমকে গেল এক গোলাপী বলের ‘মানসিক আতঙ্কের’ কাছে।

টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেয় বাংলাদেশ। শুরুটা বেশ সাবধানেই করেছিলেন ইমরুল ও সাদমান। ষষ্ঠ ওভারের পঞ্চম বলে ইশান্ত শর্মার ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিটি বুঝতেই পারেননি ইমরুল। সোজা আঘাত হানে প্যাডে, লেগ বিফোরের সিদ্ধান্ত জানান আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে বাঁচতে পারেননি ইমরুল।

রিপ্লেতে দেয়া যায় বলটা সোজা আঘাত হানতো লেগস্টাম্পে। যার ফলে আউটের সিদ্ধান্ত বহাল থাকে। মাত্র ৪ রান করে ফিরে যান ইমরুল। শুরুতেই চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। সেই চাপ কয়েকগুণ বেশি ভারী হয় পরের ৬ ওভারের মধ্যেই। ইনিংসের ১১তম ওভারের প্রথম বলে অফস্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট এগিয়ে দিয়ে সেকেন্ড স্লিপে থাকা রোহিত শর্মার হাতে ধরা পড়েন মুমিনুল হক। এর পর সরাসরি বোল্ড হয়ে যান মোহাম্মদ মিথুন। দুজনের কেউই রানের খাতা খুলতে পারেননি। পরের ওভারের পঞ্চম বলে রানের খাতা খোলার আগেই সোজা বোল্ড হয়ে যান মুশফিকুর রহীম। টেস্ট ইতিহাসে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম ব্যাটসম্যানের শূন্য রানের ফেরার ৫ম ঘটনা এটি। তিন এম খালি হাতে ফিরলেও ভালো খেলছিলেন ওপেনার সাদমান ইসলাম। কাউন্টার অ্যাটাকে একাই করছিলেন দলের সব রান। তাই তো দলীয় ৩৮ রানের মাথায় যখন ফিরে যান তিনি, তখন তার নামেই পাশেই লেখা ২৯ রান। বাকি ৯ রানের মধ্যে আবার ৫ রানই আসে অতিরিক্ত খাত থেকে। এরপর বেশিক্ষণ থাকা হয়নি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। লিটন দাস উইকেটে এসেই জোড়া চার মেরে চাপ সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ তা পারেননি একদমই। যার ফলশ্রুতিতে ২০তম ওভারে ঋদ্ধিমান সাহার দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হয়ে মাত্র ৬ রানে আউট হন তিনি। সাদমানের পর দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে যা একটু লড়াই করছিলেন লিটন দাস। কিন্তু তিনিও ২৪ রানের মাথায় মোহাম্মদ শামির বাউন্সারে মাথায় আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়েন। এরপর ইবাদত হোসেন ফেরেন ১ রানেই, ইশান্ত শর্মার বলে বোল্ড হয়ে।
লিটনের চোটে বাংলাদেশের প্রথম বদলি ব্যাটসম্যান হিসেবে উইকেটে আসেন মেহেদী হাসান মিরাজ। কিন্তু ৮ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি, ইশান্ত শর্মার চতুর্থ শিকার হন তিনি। এরপর ১৯ রান করা নাইম হাসানকে বোল্ড করে ইনিংসে নিজের ৫ উইকেটও পূর্ণ করে ফেলেন ভারতের দীর্ঘকায় এই পেসার।

নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ২৬ রানেই প্রথম উইকেট হারায় ভারত। দীর্ঘ ৫ বছর পর টেস্টে ফেরা আল আমিন হোসেনকে খেলতে গিয়ে গালিতে বদলি ফিল্ডার মেহেদী হাসান মিরাজের ক্যাচ হন মায়াঙ্ক আগারওয়াল। ১৪ রান করেন ভারতীয় এই ওপেনার। এর মধ্যে দিয়ে গোলাপি বলে বাংলাদেশের প্রথম উইকেট শিকারী হয়ে গেলেন আল-আমিন। চা-বিরতির পর সাজঘরে আরেক ব্যাটসম্যান। এবার এবাদত হোসেনের গতিতে পরাস্ত হয়ে উইকেট দেন রোহিত। আম্পায়ার আঙুল দিতে কার্পণ্য করেনিন। রোহিত অবশ্য রিভিউ নিয়েছিলেন। কিন্তু রক্ষা হয়নি। ২১ রানেই থেমেছে তার ইনিংসটি। ৪৩ রানে ২ উইকেট হারানো ভারত এরপর ঘুরে দাঁড়ায় কোহলি-পূজারার জুটিতে। এই উইকেটে তারা যোগ করেন ৯৪ রান। শেষ পর্যন্ত এই জুটিটিও ভাঙেন এবাদতই। হাফ সেঞ্চুরিয়ান (৫৫) পূজারাকে দ্বিতীয় স্লিপে সাদমান ইসলামের ক্যাচ বানান তিনি। এরপর আজিঙ্কে রাহানেকে সাথে নিয়ে অপরাজিত থেকে প্রথম দিনের খেলা শেষ করেন দলপতি বিরাট কোহলি। ক্রিকেট মাঠের খেলা। সেখানেই ব্যর্থ বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। আর মাঠের খেলায় ব্যর্থ হলে ফিকে হয় বর্ণিল সব আয়োজন। ঐতিহাসিক টেস্টের প্রথমদিনেই তাই নান্দনিক ইডেন গার্ডেন বাংলাদেশের কাছে বিষাদের নরক যন্ত্রণা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট