চট্টগ্রাম বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ইন্দোরে ইনিংস ও ১৩০ রানে জিতেছে ভারত

তিন দিনেই বাংলাদেশ শেষ

হুমায়ুন কবির কিরণ

১৭ নভেম্বর, ২০১৯ | ৩:৪০ পূর্বাহ্ণ

তৃতীয় দিনেই শেষ ইন্দোর টেস্ট। ভারতের বিপক্ষে ইনিংস ও ১৩০ রানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসের মতো নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসেও টাইগার ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিলে শক্তভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন একমাত্র মুশফিকুর রহিম। প্রথম ইনিংসে না পারলেও দ্বিতীয় ইনিংসেও ফিফটি করেছেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। কিন্তু যোগ্য সঙ্গীর অভাবে টাইগারদের ইনিংস পরাজয়ের লজ্জা থেকে বাঁচাতে পারেননি তিনিও। বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক লজ্জার ইন্দোরে পেলেন কিছু ইতিবাচক দিক, কিন্তু লাল-সবুজের এই দেশটির ভক্তরা পেলো শুধুই হতাশা। টেস্ট ক্রিকেটে প্রায় ২০ বছর কাটিয়ে দেওয়ার পরও

উপমহাদেশের ক-িশনেও ইনিংস হারের যন্ত্রণা তাই মুমিনুলদের মতো বইতে হচ্ছে ভক্ত-সমর্থকদেরও। আর বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে লাল বলে বাংলাদেশের সামর্থ্যরে ঘাটতি, সিদ্ধান্ত ও এর বাস্তবায়নে বেশ বড়সড় এক শূন্যতার কথা। আর কতবার ও কিভাবে বললে বিসিবি বুঝবে, টেস্ট ক্রিকেট কচি কাচার নয়-অভিজ্ঞদের খেলা। ইন্দোরে প্রথম ইনিংসে ১৫০ রানে অলআউট হয় সফরকারীরা। পরে মায়াঙ্ক আগারওয়ালের মহাকাব্যিক ডাবল সেঞ্চুরি ও অজিঙ্কা রাহানের ৮৬ রানের বদৌলতে ৪৯৩ রান করে ৩৪৩ রানের পাহাড়সম লিড নেয় ভারত। এই রান টপকে ভারতকে আবার ব্যাটিংয়ে পাঠাতে হলে কিছু ব্যাসিক কাজ করতে হতো টাইগার ব্যাটসম্যানদের। পেসারদের সামলাতে নতুন বল পার করতে হতো টপ অর্ডারকে, ৪০-৪৫ ওভার পরে এসজি বলের সিম নিচু হয়ে যাওয়ার পর ব্যাটিংয়ে একটু সুবিধা হয়- কাজে লাগাতে হতো সে সুযোগ। সঙ্গে ভারতের রিভিউ খরচ করে ফেলা কিংবা ক্যাচ ফেলা- সুযোগ নিতে হতো সেসবেরও। বাংলাদেশ সেভাবে করতে পারলো না কিছুই। মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে দ্বিতীয় সেশনে দুটি জুটি হলো বটে লিটন দাস ও মেহেদি হাসান মিরাজের। তবে যথেষ্ট হলো না সেসব কিছুই। ঘুরেফিরে এলো সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের শূন্যতা।

তবে এ হাহাকার তুলে দিল এক প্রশ্ন, দুজন ক্রিকেটারকে মিস করার সামর্থ্য আদতে আছে বাংলাদেশের? সাকিবকে ছাড়া যে এক বছর খেলতে হবে, সেই বাস্তবতাটা মেনে নিয়ে পারফর্ম করতে ঠিক কতোদিন সময় নেবে বাংলাদেশ? সাকিব-তামিমের ‘অভাব’-এর কথা বাদ দিয়ে যারা খেলছেন তাদের খেলার ধরনের দিকে যদি তাকানো যায়, তবে সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠবে খুব বড় করেই। ওপেনিংয়ে সাদমান ইসলাম ও ইমরুল কায়েস যেমন। প্রথম ইনিংসের মতো দুজনই আউট হলেন ৬ রান করে, ইশান্ত শর্মা ও উমেশ যাদবের মিলিত আক্রমণে তাদের আউট হওয়া আবারও হয়ে দাঁড়ালো সময়ের অপেক্ষা। দুই পেসার দুইদিকে সুইং করে বা মুভমেন্ট আদায় করে খুব সহজেই ধন্দে ফেলে দিলেন সাদমান-ইমরুলকে, দুজনই স্টাম্প হারালেন যথাক্রমে ইশান্ত ও উমেশের বলে। প্রথম ইনিংসে বল ভালভাবে ছেড়ে একটু টিকে ছিলেন মুমিনুল হক, শামি এসে তাকে করা শুরু করলেন স্টাম্প বরাবর। ফল- ইনসুইংয়ে এলবিডব্লিউ বাংলাদেশ অধিনায়ক, যে উইকেট ভারত পেলো রিভিউ নিয়ে। মোহাম্মদ মিথুনের চারে আসা নিয়ে প্রশ্নটা উঠলো আরেকবার। তার বিপক্ষে ভারত রিভিউ খরচ করলেও শামির শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে মোমেন্টামের কিছুই না পেয়ে তিনি ধরা পড়লেন শর্ট মিডউইকেটে। মিথুনের চারে আসার সঙ্গে প্রশ্ন আরেকটি- মুশফিকের পাঁচে আসা। বল পুরোনো হয়ে গেলে দলের সেরা ব্যাটসম্যান এসে স্কোর বড় করবেন- এমন ট্যাকটিকস আদৌ কোনও দলের জন্য কতটা কার্যকরী? দুই ইনিংস মিলিয়ে যা রান করার, তা অবশ্য ওই মুশফিকই করলেন। প্রথম ইনিংসে ফিফটি মিস করলেও গতকাল সেটা পেলেন, ওপাশে সঙ্গীদের যাওয়া আসা দেখে হতাশ হয়ে আশ্বিনকে তুলে মারতে গিয়ে ধরা পড়ার আগে করলেন ৬৪। মাহমুদউল্লাহ টেস্টে নতুন করে খুঁজে ফিরলেন যেন, লাঞ্চের পরপরই শামির অফস্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে স্লিপে ধরা পড়ে। লিটনের ব্যাটিং যেন নতুন প্রেমে পড়ার মতো, শুরুর দিকে মোহ কাটে না। এরপর সে প্রেম ছুটে যেতে চায়, বিষন্নতা জেঁকে বসে। গতকালও তার ইনিংসটি থাকলো তেমনই- দারুণ টাইমিং আর প্লেসমেন্ট যখন অনেক স্বপ্ন দেখাচ্ছিল, হুট করেই আশ্বিনকে বেরিয়ে এসে মারতে গিয়ে ফিরতি ক্যাচ দিলেন তিনি। এরপর মিরাজ একটু সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন মুশফিককে, হাত খুলে ছয়ও মেরেছেন। চা-বিরতিতে ছেদ পড়েছে তার মনযোগে, উমেশের বলে বোল্ড হয়ে ফিরতে হয়েছে তাকে। তাইজুল ৪৩ বল টিকে ছিলেন। এরপর আবু জায়েদ ও এবাদতের আউট হওয়া হয়ে পড়েছিল সময়ের অপেক্ষা। যেটি এবাদত হলেনও, ম্যাচে আশ্বিনের পঞ্চম শিকার বনে গেলেন তিনি। তবে ওপেনার ও লোয়ার-অর্ডার- দুই প্রান্তেই থাকলো সেই অনিশ্চয়তা- আউট হতে পারেন যে কোনও সময়। মিডল অর্ডার ভঙ্গুর। আবু জায়েদ ছাড়া বোলাররা দিকভ্রান্তের মতো এর আগে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়িয়েছেন।

এবার ২২ নভেম্বরের অপেক্ষা, ইডেন গার্ডেনসে সেদিন থেকে শুরু হবে দুই ম্যাচ সিরিজের শেষ টেস্ট। সেই টেস্টটি আরও চ্যালেঞ্জের, কারণ লাল-বলের জায়গায় ইডেন দেখবে ভারত-বাংলাদেশ উভয় দলের জন্যই প্রথমবারের মতো গোলাপী বল। লাল বলেই ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা, গোলাপী বলে টাইগারদের ভবিষ্যত কি আঁচ করা যাচ্ছে। অবশ্য ইন্দোরে যা হলো, ফলাফল কি আর এর থেকে খারাপ হতে পারে ! তারপরও আশা, এই বাংলাদেশ দলের কিন্তু ইন্দোরের চাইতে ভালো খেলার সামর্থ্য অবশ্যই আছে, মাঠে শুধু সেটার প্রতিফলন দরকার।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট