চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ম্যাচ জিতেছে ভারত চমক দেখালেন নাইম

স্পোর্টস ডেস্ক

১২ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:৩০ পূর্বাহ্ণ

নাইম শেখের ব্যাট স্বপ্ন দেখাচ্ছিল, কিন্তু ভারতকে তাদেরই মাটিতে আরেকবার হারিয়ে সিরিজ জেতার স্বপ্নটা স্বপ্নই থেকে গেলো। রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ানকে দ্রুত ফেরাতে পারলেও কেদার রাহুলের ৫২ ও শ্রেয়াস আইয়ারের ৬২ রানে ভর করে ভারতের সংগ্রহ ছিল ১৭৪ রান। লক্ষ্যে ছুঁটতে গিয়ে নাইম শেখের অনবদ্য ৮১ রান সত্ত্বেও সতীর্থদের চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায় বাংলাদেশ অল-আউট হয় ১৪৪ রানে, ৩০ রানে হেরে ভারতের হাতে সিরিজ ট্রফিই তুলে দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহরা। দিপক চাহার মাত্র ৭ রানে ৬ উইকেট নিয়ে টাইগারদের স্বপ্নকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পথে বিশ্বরেকর্ড গড়ার সাথে হ্যাটট্রিকও করেছেন।

১৭৫ রান, টি-টোয়েন্টির এই যুগে সে লক্ষ্য অসম্ভব না হলেও টি-টোয়েন্টিতে ‘দুর্বল’ বাংলাদেশের কাছে তা মোটেও সহজ ছিল না। একে তো ভারতের ঘরের মাঠ, তার ওপর সিরিজ জয়ের একটি প্রচ্ছন্ন চাপ। শুরুতেই বোঝা গেল, এই দুই চাপে স্বস্তিতে নেই টাইগাররা। স্কোরবোর্ডে ১২ রান উঠতে না উঠতেই সৌম্য (০) আর লিটনের বিদায় (৯) যেন তারই প্রমাণ। টানা দুই বলে দুই সতীর্থকে চোখের সামনে বিদায় নিতে দেখলেন তরুণ ওপেনার নাইম শেখ। তাতে তার তরুণ মন ভেঙে পড়ারই কথা। তৈরি হওয়ার কথা মনস্তাত্বিক চাপ। কিন্তু না, মোটেও সেরকম কিছু দেখা গেল না। বরং তারুণ্যের উদ্দামতা দিয়ে যেন উড়িয়ে দিলেন সব চাপ। দুই সতীর্থকে হারিয়েও ইস্পাতসম মনোবলে ব্যাট হাতে ঘুরে দাঁড়ালেন নাইম শেখ। ভারতের বোলারদের ওপর স্টিম রোলার চালিয়ে নাগপুরের ওই বিদর্ভ স্টেডিয়ামের হাজার হাজার স্বাগতিক দর্শকের মুখে কুলুপ এঁটে দিলেন। মাথায় তুলে দিলেন হাত। তার প্রতিটি বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারিই যেন তাদের চোখে কাঁটা হয়ে বিধছিল। পক্ষান্তরে বাধভাঙা উল্লাসের উপলক্ষ্য হয়ে আসছিল লাল-সবুজের গ্যালারিতে। দুই টপ অর্ডারকে হারিয়ে তৃতীয় উইকেটে মোহাম্মদ মিথুনকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমে ইনিংস মেরামতের কাজ সারলেন নাইম। এরপর ব্যাট ছুঁটালেন লক্ষ্যের দিকে। সে কী আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং মাত্রই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখা এই তরুণের! ক্রিজের ওপাশে থাকা মোহাম্মদ মিথুনকে সঙ্গে নিয়ে দাপুটে ব্যাটে ছুঁটালেন রান রথ। তাতে ক্যারিয়ারের অভিষেক ফিফটি এল ৩৪ বলে। যেখানে চারের মার ছিল ৭টি, সঙ্গে একটি ছয়ের মার। স্ট্রাইক রেট ১৫৫.৮৮। ফিফটি ছুঁয়েও যেন তৃপ্ত নয় নাইমের ব্যাট, বরং আরও ক্ষুরধার। ছুটছিল সেঞ্চুরির দিকে। তার ঝঞ্ঝা-বিক্ষুদ্ধ ব্যাটে অনেকে বাংলাদেশের জয়ও দেখে ফেলেছিলেন। কিন্তু ১৩ ও ১৪তম ওভারে মুশফিক (০) ও মিথুনের (২৭) বিদায়ে সেই স্বপ্ন হয়ে উঠল দূরের বাতিঘর। চার সতীর্থকে চোখের সামনে থামতে দেখলেন। কিন্তু তবুও থামেনি নাইমের পাগলাটে ব্যাট। শুধুই হাঁকিয়ে গেলেন। তাতে চাহাল, খলিল, ওয়াশিংটন সুন্দররা লাইন-ল্যাংথ হারিয়ে হয়ে পড়লেন দিগি¦দিক জ্ঞানশূন্য। তার পাগলাটে ব্যাটে জয়কে খুব বেশি দূরের বাতিঘর মনে হয়নি। কেবলই যেন হাতছানি দিচ্ছিল টাইগার শিবিরে। অতএব নাইম বধই চাহার, চাহাল, খলিল ওয়াশিংটন সুন্দরদের জন্য পরম আরাধ্য হয়ে উঠেছিল। শেষমেশ শিভম দুবে অবশ্য তা পেরেছেন।

রান-বলের হিসেব মেলাতে চাইছিলেন নাইম। তাই ১৬তম ওভারে তার তৃতীয় ডেলিভারিটি বাঁহাতি নাইম খেলতে চেয়েছিলেন জায়গা বানিয়ে খেলতে। শিভম দুবে কিছুটা বেশি গতিতে করলেন ইয়র্কার। নাইম ব্যাট নামিয়েও থামাতে পারেননি বল। উড়ে গেল বেলস। ১০ চার ও ২ ছক্কায় ৪৮ বলে ৮১ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে ফিরলেন নাইম। বাংলাদেশের সংগ্রহ তখন ৫ উইকেটে ১২৬। এরপরের গল্পটি শুধুই ডোমিঙ্গ শিষ্যদের আসা-যাওয়ার। আফিফ ০, মাহমুদউল্লাহ ৮, শফিউল ইসলাম ৪ আর মুস্তাফিজের ব্যাট থেকে এসেছে ১ রান। ১৯.২ ওভারে ১৪৪ রানে গুটিয়ে গেল বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে পিছিয়ে পড়েও ৩০ রানের জয়ে সিরিজ নিজেদের করে নিল ভারত। পরিতাপের বিষয় হলো, নাইম শেখ একা যে রান করেছেন, বাংলাদেশের বাকি ১০ ব্যাটসম্যান মিলেও তা করতে পারেনি। নাইম যতক্ষণ ব্যাটিংয়ে ছিলেন, ব্যাটিং যাদুতে পুরো মাঠেই মুগ্ধতার এক আবেশ ছড়িয়ে রেখেছিলেন। এমনকি ধারাভাষ্যকারদের মুখেও ছিল নাইম স্তুতি। ক্রিকেটীয় নিয়মে ভারত ম্যাচটি ৩০ রানে জিতেছে ঠিকই। কিন্তু কেউ স্বীকার করুক আর নাই করুক হৃদয় জিতেছেন নাইমই।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট