একেকটি ম্যাচ যাচ্ছে আর বল হাতে আরও বেশি মুগ্ধতা ছড়িয়ে যাচ্ছেন আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। তাতে তার আসল সত্তাই যেন চাপা পড়ে যাচ্ছে।
সেটিই মনে করিয়ে দিলেন রাসেল ডোমিঙ্গো। আমিনুলের মূল পরিচয় তো ব্যাটসম্যান! জাতীয় দলের কোচ অবশ্য মুগ্ধ তরুণ এই ক্রিকেটারের প্রাণশক্তি দেখে। গত সেপ্টেম্বরে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজে অভিষেক ম্যাচে ২ উইকেট নিয়েছিলেন আমিনুল। এরপর ভারত সফরের দুটি টি-টোয়েন্টিতেও নিয়েছেন ২টি করে উইকেট। নজর কেড়েছেন লেগ স্পিনে তার নিয়ন্ত্রণ, প্রচেষ্টা আর সাহসিকতা দিয়ে। অথচ বয়সভিত্তিক পর্যায়ে তিনি ছিলেন মূলত ব্যাটসম্যান, যে টুকটাক লেগ স্পিন করে। গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ব্যাট হাতে করেছিলেন ৪৪০ রান। লিগের পর হাই পারফরম্যান্স (এইচপি) স্কোয়াডে তার জায়গা পাওয়ার মূল কারণও ছিল ব্যাটিং। গত জুলাইয়ে আচমকাই আফগানিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষে একটি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে আমিনুলকে নেওয়া হয় বাংলাদেশ ‘এ’ দলে। সেই ম্যাচেও ভালো বোলিং করেন তিনি। সেপ্টেম্বরে ত্রিদেশীয় সিরিজের আগে জাতীয় দলের নেটে তাকে আনা হয়েছিল আফগান লেগ স্পিনারদের খেলার প্রস্তুতির জন্য। নেটে তাকে দেখে ভালো লাগে জাতীয় দলের ম্যানেজমেন্টের। লেগ স্পিনার হিসেবেই সুযোগ পেয়ে যান বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলে। এরপর তো স্পিন দিয়েই এগিয়ে চলা। ভারত সফরের ম্যাচ দুটিতে ভালো পারফরম্যান্সের পর আমিনুলকে নিয়ে দেশের ক্রিকেটে চলছে বড় স্বপ্নের বুনন। সেসবে লাগাম দিতেই কিনা, তৃতীয় টি-টোয়েন্টির আগের দিন বাস্তবতা মনে করিয়ে দিলেন ডোমিঙ্গো। পাশাপাশি, আমিনুলকে নিয়ে তার ভালো লাগার জায়গাটির কথাও বললেন জাতীয় কোচ। ‘আমি সবসময়ই লেগ স্পিনারদের পছন্দ করি এবং আমি জানি, বিপ্লব মূলত ব্যাটসম্যান, যে লেগ স্পিন করতে পারে। তবে আমি ওর প্রাণশক্তি, ইচ্ছাশক্তি ও ওয়ার্ক এথিকে মুগ্ধ। ওর মতো একজনকে দলে পাওয়া দারুণ।’ রাজকোটের টি-টোয়েন্টিতে রোহিত শর্মার রুদ্র মূর্তির সামনেও দারুণ বোলিং করেছিলেন আমিনুল। ২০ বছর বয়সী ক্রিকেটারের সেই পারফরম্যান্স দাগ কেটেছে কোচের মনে। ‘গত ম্যাচে রোহিতের সামনে বোলিং করেও ৩.৫ ওভারে ২৩ রানে ২ উইকেট ছিল তার।
পরে শেষ বলে একটি ছক্কা হজম করেছে। তরুণ একজন হয়েও চাপের মুখে অমন বোলিং, সে সত্যিই ভালো বোলিং করেছে।’ ভারত সফরের দুই টি-টোয়েন্টিতে খারাপ করেননি আরেক ২০ বছর বয়সী মোহাম্মদ নাঈম শেখও। অভিষেক ম্যাচে ২৬ করেছিলেন বাঁহাতি ওপেনার, পরের ম্যাচে করেন ৩৬। তরুণদের পারফরম্যান্স ভবিষ্যতের জন্য আশা জাগানিয়া, বলছেন ডোমিঙ্গো। ‘নাঈমের টি-টোয়েন্টি রেকর্ড খুব ভালো ছিল না। কিন্তু নতুন কিছু চেষ্টা করার এবং পরের ধাপের ক্রিকেটারদের পরখ করার জন্য এই সংস্করণই দারুণ সুযোগ। তামিম, মুশফিক, রিয়াদরা কতদিন খেলবে, আমরা জানি না। তরুণদের জন্য এটি তাই ভালো সুযোগ। টেস্ট দলে সাইফ হাসান সুযোগ পেয়েছে। ওকেও আমরা দেখব, ট্রেনিংয়ে কেমন করে।’ ‘তবে শুধু পারফরম্যান্সই তাদের নিয়ে মুগ্ধতার কারণ নয়। ওদের প্রাণশক্তি, মানসিকতা, কাজের ধরণ, সবকিছুই দারুণ।’ এদিকে গত ম্যাচে ওপেনারদের ভালো শুরুর শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়েও দলকে বড় সংগ্রহ এনে দিতে না পারায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন আফিফ হোসেন ও মোসাদ্দেক হোসেন।
ডোমিঙ্গো পাশে দাঁড়িয়েছেন দুই তরুণ অফ স্পিনিং অলরাউন্ডারের। মনে করিয়ে দিলেন, তাদের সাম্প্রতিক সাফল্যের কথা। রাজকোটে ভারতের বিপক্ষে ইনিংসের শেষদিকে তাদের এমন ধীর ব্যাটিং অবশ্য বাংলাদেশ কোচকে বিস্মিত করছে না। তার মতে, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে খুব বিধ্বংসী ইনিংস আশা করা বাস্তবসম্মত নয়। বরং বড় শট খেলার চেয়ে রান তোলার অন্য দিকগুলো কাজে লাগানোর পক্ষে তিনি। ‘আমার মনে হয় না, আমরা কখনও ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা ইংল্যান্ডের মতো ব্যাটিং ইউনিট হতে পারব যেখানে ব্যাটসম্যানরা নিয়মিত বল মাঠের বাইরে পাঠাবে।
শারীরিকভাবেই আমরা সে ধরনের দল নই।’ ‘আফিফ, মোসাদ্দেক এবং লিটন- তিন জনই ছোটখাটো গড়নের। তবে আমরা বলের গতি কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি, দ্রুত রান নেওয়া, গ্যাপ বের করা, ডাবল নেওয়া, এগুলো চেষ্টা করছি। এক ওভারে ছয়টা ডাবল আর দুটো ছক্কা একই কথা।’
আমার মনে হয়, টি-টোয়েন্টির ব্যাটিং লাইনআপে ৬ ও ৭ হচ্ছে সবচেয়ে কঠিন পজিশন।’ তবে নিজেদের ভুল থেকে নেওয়া শিক্ষাগুলো দলকে আরও সমৃদ্ধ করবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ কোচ। ‘আমরা ১২.২ ওভারে ১০০ রান করেছিলাম, সেখানে ভারত ১০০ করেছে ১১ ওভারে। তারা আমাদের চেয়ে এক ওভার এগিয়ে ছিল। এটা আফিফ, সৌম্য, মোসাদ্দেকের মতো ব্যাটসম্যানদের জন্য একটা শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা। আমরা প্রতিটি ভুল থেকেই শিখছি। যখন আমরা আগামী বছরের বিশ্বকাপে যাব, তখন এরকম পরিস্থিতিতে আরও ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো অবস্থানে থাকতে চাই আমরা। আশা করি, পরের ম্যাচে আমরা এই ভুলগুলো কাটিয়ে উঠতে পারব।’