চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

ঐতিহ্যের মোহনবাগানকে হতাশায় ডোবালো ইয়াং এলিফেন্টস

ইয়াং এলিফেন্টস ২- মোহনবাগান-১

দেবাশীষ বড়–য়া দেবু হ

২১ অক্টোবর, ২০১৯ | ২:০৬ পূর্বাহ্ণ

শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু শুরুর আগ থেকে বেশ হাক ডাক শোনা গিয়েছিলো, কিন্তু এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের মাঠে গতকাল তার প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি ভারতের শতবর্ষীয় পুরোনো ক্লাব মোহনবাগান এথলেটিক ক্লাব। উল্টো, মাত্র ৪ বছর আগে জন্ম নেয়া লাওসের ইয়াং এলিফ্যান্টস এফসি তাদের ঘাড়ে গরম নিঃশ^াস ফেলে ক্লাবটিকে দুর্ভাবনার সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছে। খেলার ১৭ মিনিটে গোল হজম করে পিছিয়ে পড়ার পরও অভাবনীয় ক্রীড়া নৈপুণ্য দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে ইয়াং এলিফ্যান্টস এফ সি’র তরুণ তুর্কিরা। এ ম্যাচে মোহনবাগানের জোশেভা কর্তা নিজেকে ক্ষমা করতে পারেন কিনা যথেস্ট সন্দেহ রয়েছে। খেলা শেষ হওয়ার ৩ মিনিট আগে পেনাল্টি থেকে তিনি গোল করতে পারেননি। জোশেভা কর্তা’র শট ঠেকিয়ে দেন ইয়াং এলিফ্যান্টের কিপার জেসাভাত। সেই ফেরানো বল থেকেই পরপরই ইয়াং এলিফ্যান্ট গোল করে মোহনবাগানকে হতাশায় ডুবিয়ে দেন। এ কারণেই জোশেভা কর্তা’র জন্য দিনটি বেশ কঠিনই হয়ে থাকলো। এ জয়ের ফলে সেমিফাইনালে খেলার ক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করলো ইয়াং এলিফেন্টস। অন্যদিকে শেষ চারে খেলার জন্য বেশ চাপের মুখেই থাকতে হলো মোহনবাগানকে। তবে খেলার শুরু থেকেই চাপিয়ে খেলেছিলো মোহনবাগান। এতে ম্যাচের ৬ মিনিটেই

তারা এগিয়ে যেতে পারতো। কিন্তু ফ্রি কিক থেকে জোশেভা কর্তা’র দুর্দান্ত শট এলিফ্যান্ট ক্লাবের কিপার ঠেকিয়ে দেন। ১০ মিনিটে আবারো গোলের সুযোগ হারায় মোহনবাগান। এ সময় ফ্রি কিক থেকে দেনিয়েল নিকোলাস সাইরাস গোল প্রায় করেই বসেছিলেন। ১২ মিনিটে ইয়াং এলিফ্যান্টের বোনপাচান বংকং অবশ্য হতাশই করেন স্থানীয় সমর্থকদের। তার মাটিঘেঁষা শট দ্বিতীয় পোষ্ট ঘেষে বেরিয়ে গেলে প্রথম গোলের সুযোগ তারা হাতছাড়া করে। ১৭ মিনিটে মোহনবাগানের সমর্থকদের আনন্দে ভাসিয়ে দেন হুলেন কলিনেস ওলাজিওলার। কর্তার কর্নার লব থেকে দর্র্শনীয় হেডে বল এলিফেন্টসের জালে জড়ান এই স্প্যানিশ উইঙ্গার (১-০)। ৩৭ মিনিটে ব্যবধান বাড়াতে পারেনি মোহনবাগান। ডানপ্রান্তে শেখ শাহিলের ক্রসে মার্টিনেজের হেড সাইডবার ঘেঁষে বাইরে চলে যায়। এর পরপরই মনে হয়েছে, খেলায় ফিরতে আসতে যেন আক্রমণের ধার বাড়িয়ে দেয় ইয়ং এলিফ্যান্ট। পরপর ৩টি আক্রমণের ২য়টিতে সফলতা পায় এবং এগিয়ে যাবার সুযোগ হাতছাড়া করে। ৪২ মিনিটে সংঘবদ্ধ আক্রমণ থেকে অধিনায়ক ভান্নার দূর্দান্ত শট ক্রসপিচ ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। পরের মিনিটেই সমতা আনে ইয়াং এলিফ্যান্টস। এ সময় বল নিয়ে ক্ষিপ্র গতিতে মোহনবাগানের বিপদসীমানায় ঢুকে পড়েন থিনোলাথ। নিখুঁতভাবে বলটি বাড়িয়ে দেন সোমজে কিওহানাম’কে। তাতে, দেখার মতো এক প্লেসিং শটে সোমজে কিওহানাম মোহনবাগানের জালে বল জড়ান (১-১)। এ গোলে উজ্জ¦ীবিত হয়ে এগিয়ে যাবার মতো সুযোগ নষ্ট করে ইয়াং এলিফ্যন্টস। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে লাথাকচাকের বিপজ্জনক শট কিপার কোনমতে ঠেকায় মোহনবাগান কিপার দেবজিৎ মজুমদার। দ্বিতীয়ার্ধের ১৭ মিনিটে মধ্যমাঠ থেকে মার্টিনেজের উদ্দেশ্যে সতীর্থের নিখুঁত বাড়ানো বল বিপজ্জনক হওয়ার আগেই এলিফ্যান্টের কিপার সময় মত বেরিয়ে এসে নিশ্চিত গোল থেকে দলকে রক্ষা করেন। ২৭ মিনিটে গোলবঞ্চিত হয় এলিফ্যান্ট ক্লাব। বক্সের বাইরে থেকে কিওহানামের জোরালো শটে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো ক্রসবার। এতে কিপার পুরোপুরি পরাস্ত হয়েছিলো। ৭৭ মিনিটে সুযোগ আবারো সুযোগ পায় এলিফ্যন্টস। এ সময় বদলি লুয়াংলিয়াং-ও ক্রসে পা ছোঁয়াতে পারেননি কিওহানাম।

কিন্তু কে জানতো যে, ম্যাচের সব নাটকীয়তা যেন শেষ কয়েক মিনিটের জন্য অপেক্ষা করছিল। এ নাটকটি ‘লাল কার্ড, পেনাল্টি, পেনাল্টি মিস এবং সেই মিস থেকে উল্টো গোল’-এ ভরপুর ছিলো। ৪৭ মিনিটে মোহনবাগানের আক্রমণ ভাগের ওলিওজোলাকে বক্সের ভেতর ফেলে দেন এলিফেন্টস অধিনায়ক ভান্না বোনলোভোংসা। এতে বাংলাদেশি রেফারি মিজানুর রহমান পেনাল্টির নির্দেশ দেন এবং আগে একবার হলুদ কার্ড পাওয়া অধিনায়ককে দ্বিতীয় দফায় হলুদ কার্ডের পর লাল কার্ড দেখান। কিন্তু পেনাল্টি থেকে গোল করতে ব্যর্থ হন জোশেভা কর্তা। তার স্পট কিক ডান পাশে ঝাঁপিয়ে রুখে দেন কিপার জায়াসাভাত। পরের মিনিটেই কাউন্টার এ্যাটাক থেকে গোল করে অবিশ^াস্য ভাবে এগিয়ে যায় এলিফ্যন্টস দল। এ সময় ডানপ্রান্তে থিনোলাথের ক্রসে পা ছুঁইয়ে দ্বিতীয় গোল করেন সোমজে কিওহানাম (২-১)। ম্যাচের বাকি ৩ এবং যোগ করা ৫ মিনিটে সমতা আনার চেষ্টা করেও সফল হয়নি মোহনবাগান। সোমজে কিওহানাম সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন। খেলা শেষে তাকে পুরস্কার বিতরণ করেন চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট