চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সল্ট লেকে বাংলাদেশের চোখ রাঙানি দেখেছে ভারত

ড্রয়ে শেষ হলো ম্যাচ

স্পোর্টস ডেস্ক

১৬ অক্টোবর, ২০১৯ | ৩:২২ পূর্বাহ্ণ

৮০ হাজার দর্শকে ঠাসা সল্ট লেক স্টেডিয়াম থেকে একটি পয়েন্ট নিয়ে ফিরছে লাল-সবুজ পতাকা। প্রাণবন্ত ফুটবলের পশরা সাজিয়ে ভারতকে ১-১ গোলে রুখে দিয়েছে বাংলাদেশ। ফিফা র‌্যাংকিংয়ে দুই দলের ব্যবধান বিশাল। ভারত ১০৪ আর বাংলাদেশ ১৮৭ নম্বরে। তবে র‌্যাংকিংকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জেমি ডে’র শিষ্যরা লড়াই করেছেন বুক চিতিয়ে। শুধু লড়াই নয়, ভারতের ফরোয়ার্ডদের বোতলবন্দি করে রেখেছেন সাফল্যের সঙ্গে। গতকাল স্বাগতিক দর্শকে গ্যালারি কানায় কানায় পূর্ণ। ম্যাচের শুরুর দিক থেকে চারিদিকে ‘ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া’ ধ্বনি। ভারতীয়দের কাছে ‘ফুটবলের মক্কা’ হিসেবে খ্যাত যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে হুট করে নিশ্চুপ নীরবতা। বিশাল এই স্টেডিয়ামে ছড়িয়ে থাকা নানা প্রান্তে উল্লাস করছে লাল-সবুজ জার্সি পরা সমর্থকরা। যদিও এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে কোনও শব্দ আসে না। ৪২তম মিনিটে বাংলাদেশের হয়ে গোল করলেন মো. সাদ উদ্দিন। বিরতিতে গেল লাল-সবুজরা। গতকাল বিশ্বকাপ ও এশিয়ান বাছাই পর্বের এই ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের পুরোটাও খেলেছে

বাংলাদেশ। ম্যাচের ৮৮তম মিনিট পর্যন্ত ম্যাচে স্পষ্ট আধিপত্য ছিল বাংলাদেশের। আক্রমণ আর রক্ষণে দুর্দান্ত খেলেছেন জামাল ভূঁইয়া আর ইয়াসিন। সুযোগ ছিল ১৬ বছর পর ভারতের বিপক্ষে জয় তুলে নেওয়ার। কিন্তু শেষ দিকে গোল আদায় করে ভারত দলকে হার থেকে বাঁচিয়েছেন আদিল খান। শেষ মুহূর্তের ওই গোলেই ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ যাবার মিশনে গ্রুপ ‘ই’র ম্যাচে ১-১ গোলের ড্র নিয়ে ফিরলো জেমি ডে’র শিষ্যরা। গতকাল খেলা শুরুর মাত্র দ্বিতীয় মিনিটের মাথায় ভারতের ডি-বক্সের বাঁ দিক থেকে আক্রমণে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের ইব্রাহিম। সেখানে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন ভারতের ডিফেন্ডার ভিকি। বাংলাদেশ পেনাল্টির আবেদন জানালেও রেফারি তাতে সাড়া দেননি। অষ্টম মিনিটে ফের একবার পেনাল্টির দাবি করে বাংলাদেশ। এবারও ভারতের ডি-বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়েছিলেন ইব্রাহিম। আর এবারও তাকে ফেলে দিয়েছিলেন সেই ভিকি।

কিন্তু রেফারি এবার গোল কিকের ইশারা করেন। ৩১তম মিনিটে আদিলের ভুলে গোল খেতে বসেছিল ভারত। কিন্তু আনাসের দক্ষতায় ব্যর্থ হন বিপলু। প্রথমার্ধের খেলার অধিকাংশ সময় বল নিয়ন্ত্রণে ছিল ভারতের। বেশ কয়েকটি সুযোগও পেয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানার দারুণ কিছু সেভ স্বাগতিকদের গোল বঞ্চিত করে। আর মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়েও অসাধারণ কিছু হেডে দলকে বিপদমুক্ত করেন ইয়াসিন। তবে মাঝ মাঠে পুরোটাই ভারতের আধিপত্য বজায় ছিল। কিন্তু লড়াইয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে দেন সাদ। তবে এই গোলে তার চেয়ে বড় ভূমিকা জামালের লম্বা ও বাঁকানো ফ্রি-কিকের। তার দূরের পোষ্টে পাঠিয়ে দেওয়া বলের সুইং বুঝতে না পেরে এগিয়ে গিয়েছিলেন স্বাগতিক গোলরক্ষক গুরপ্রিত সিং।

বল চলে যায় ডান পাশে থাকা সাদের দিকে। বাঁকানো ও নিচু হেডে বল জড়িয়ে দেন এই ফরোয়ার্ড। স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো সল্টলেক স্টেডিয়াম। এরপর দ্বিতীয়ার্ধে আরও দুর্দান্ত খেলা দেখিয়েছেন লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। ৫১তম মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছিলেন জীবন। সোহেল দারুণ ড্রিবলের পর কাট করে বল পাঠিয়েছিলেন বক্সের ভেতরে থাকা জীবনের পায়ে। কিন্তু তার শট প্রতিহত হয়। ৬০তম মিনিটে সুযোগ পেয়েছিল ভারতও। থাপার কর্নার কিকে হেড নিয়েছিলেন আনাস।

কিন্তু গোল লাইন থেকে বল ক্লিয়ার করেন ইব্রাহিম। ৭৩তম মিনিটে স্বাগতিকদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিলেন জীবন। ডিফেন্সকে বোকা বানিয়ে ভারতীয় গোলরক্ষক গুরপ্রিতের মাথার ওপর দিয়ে চিপ করেছিলেন তিনি। বল গুরপ্রিতের আঙুল ছুঁয়ে ফাঁকা পোস্টে প্রবেশ করার ঠিক আগ মুহূর্তে বল ক্লিয়ার করেন আদিল খান। শেষ বাঁশি বাজার ঠিক ২ মিনিট আগে এই আদিল খানের হেডেই হতাশায় পুড়তে হয় বাংলাদেশকে। ব্র্যান্ডনের কর্নার কিকে রকেট গতির হেড করেছিলেন আদিল, ঠেকানোর কোনো সুযোগই ছিল না আশরাফুলের হাতে। এই ড্র’র পর গ্রুপ ‘ই’র পঞ্চম স্থানে নেমে গেল বাংলাদেশ। ৩ ম্যাচে ১ ড্র ও ২ হারে জেমি ডে’র দলের পয়েন্ট মাত্র ১। অন্যদিকে সমান ম্যাচ খেলে ২ ড্র ও ১ হারে ২ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে ভারত।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট