চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ভাবমূর্তি ফেরানোর আর্তি ক্লাবগুলোর

অনলাইন ডেস্ক

২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:৫১ অপরাহ্ণ

মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় র‌্যাব পুলিশের চিরুনি অভিযানের পর থেকেই স্পোর্টিং ক্লাবগুলোর বহুদিনের সম্মান এখন নিঃশেষ হওয়ার পথে। কালো টাকার কড়াল গ্রাসে যেনো ভূলুণ্ঠিত দেশের ক্লাবগুলোর বহু বছরের ঐতিহ্য। অনেকের অভিযোগ, একটি প্রভাবশালী চক্র রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে ছ’টি ক্লাবের (মোহামেডান, ভিক্টোরিয়া, আরামবাগ, ইয়ংমেন্স ফকিরেরপুল, দিলকুশা এবং ওয়ান্ডারার্স) কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে এতদিন অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনা করে এসেছে। শুধু ক্যাসিনোই নয়, এই ক্লাবগুলো পরিণত হয়েছিল মাদকের আখড়ায়। প্রতি রাতে কোটি কোটি টাকার জুয়া হয়েছে এসব ক্লাবে। আর সবকিছু জেনেও এ নিয়ে টুঁ শব্দটি করেননি ক্লাব কর্তারা। একে তো রাজনৈতিক পরিচয়ধারী প্রভাবশালীদের চোখ রাঙানি, তার ওপর ক্যাসিনো থেকে পাওয়া ভাড়া ছিল একটি বড় আয়ের উৎস। যদিও ভাড়ার এই টাকা ক্লাব ফান্ডে জমা না দিয়ে কতিপয় কর্তা নিজেদের পকেট ভারী করেছেন এমন আলোচনাও হচ্ছে ক্লাবপাড়ায়। এ অবস্থায় সার্বিকভাবেই একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে। স্পোর্টিং ক্লাবগুলো তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনায় কেন ক্যাসিনো ভাড়ার আশ্রয় নেবেন এই প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে অনেকের মনে। এর মধ্যেই এসব ক্লাবের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কিছু নাম খোঁজার চেষ্টা করেছেন হারানো গৌরব ফেরানোর পথ।

আগের দিনই মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে পুলিশের অভিযান হয়েছে। যেখানে মিলেছে ক্যাসিনোর সব ধরনের উপকরণ। ক্যাসিনো কক্ষের পাশে দাঁড়িয়ে এক সময় মোহামেডানের জার্সিতে দেশ কাঁপানো ফুটবলার প্রতাপ শংকর হাজরা সাফাই গাইলেন ক্লাবের হয়ে, ‘ক্লাবগুলোর এতটাই দুরবস্থা শুধু ব্যক্তি অনুদান আর কার্ড রুমের ভাড়ায় এখন আর ক্লাব চালানো সম্ভব নয়। তাই তারা (ক্যাসিনো পরিচালনাকারীরা) যখন ভাড়া নিতে এসেছিল, তখন ভাড়া  দিয়েছিলাম। সেখান থেকে কালো টাকা আমরা খেলার জন্যই খরচ করেছি। ও সময় ভাড়া না দিয়েও উপায় ছিল না। কারণ তারা ছিল অনেক ক্ষমতাধর। আমি এটাকে বন্ধ করে দেয়ার জন্য সাধুবাদ জানাই। এর পাশাপাশি ক্লাবগুলোকে একটা স্থায়ী আয়ের পথও নির্ধারণ করে দেয়া উচিত।’ মোহামেডানের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক হেলাল গত তিন বছর ধরে ক্লাবমুখী হননি। তার অভিযোগ, সেখানে নিয়মিত যাওয়ার সেই পরিবেশ আর নেই। এর জন্য ক্লাবের দায়িত্বে থাকা কর্তাদের দায়ী করেছেন তিনি, ‘ক্লাবের পরিবেশ যারা নষ্ট করেছে দিনের পর দিন, আমি মনে করি তাদেরও কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। আমি প্রায় তিন বছর ধরে ক্লাবে যাই না। কারণ সেই পরিবেশ নেই। আমার মতো অনেকেই আর ক্লাবমুখী হয় না। ক্যাসিনোর মতো অবৈধ ব্যবসা যারা ক্লাবে করতে দিয়েছে তাদেরকেও শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’ ক্লাবের পরিবেশ ভালো হলে মোহামেডান ক্লাবকে অনুদান দেয়ার লোকের অভাব হতো না বলে মনে করেন হেলাল, ‘এ থেকে উত্তরণের উপায় হচ্ছে ক্লাবের আগের পরিবেশ ফিরিয়ে আনা। জুয়া, ক্যাসিনো ছাড়া আরো অনেক বিকল্প রয়েছে উপার্জনের। অতীতে তো এভাবেই ক্লাবগুলো পরিচালিত হয়েছে। মোহামেডান ক্লাবকে অনুদান দেওয়ার লোকের অভাব হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এই ঘটনার ফলে ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অনেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। আমি মনে করি দেরিতে হলেও যেটা হচ্ছে সেটা ক্রীড়াঙ্গনের ভালোর জন্যই হচ্ছে।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়ে সাবেক ফুটবলার এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহ-সভাপতি বাদল রায় জানান, ‘আমি এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। একই সঙ্গে আমি মনে করি যেসব স্বার্থান্বেষী ক্লাব কর্মকর্তার ইন্ধনে এতদিন ক্যাসিনোর মতো ঘৃণিত কারবার চলেছে ক্লাবগুলোতে, তাদেরও কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। অভিযান এখানেই থামিয়ে দিলে চলবে না।’ মোহামেডান, ভিক্টোরিয়ার মতো দলের হয়ে এক সময় নিয়মিতই খেলেছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন যে উদ্দেশে ক্লাবগুলো এতদিন এই অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনা করতে দিয়েছে, সেই উদ্দেশের সাফল্য নিয়ে, ‘যে কারণে এই কাজগুলো করতে দেয়া হতো, সেই ভাড়ার টাকা কি সত্যিই ক্রীড়াঙ্গনের প্রয়োজনে ব্যয় হয়েছে! আমি মনে করি জুয়ার মতো হারাম অর্থকে হালাল করার দায় ক্রীড়াঙ্গনের নয়। অসাধু পথে আয় করা অর্থ দিয়ে খেলা চালানোর প্রয়োজন আমি দেখি না।’

জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার সৈয়দ গোলাম জিলানীর হাতেখড়ি হয়েছিল ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে জড়ানো আরেক ক্লাব আরামবাগ ক্রীড়া সংঘে। প্রাণের ক্লাব এভাবে আলোচনায় আসবে কখনো ভাবেননি তিনি, ‘আরামবাগের সাবেক ফুটবলার হিসেবে এই ঘটনায় সত্যি খুব মর্মাহত। একই সঙ্গে একটা স্বস্তিও পাচ্ছি এর ফলে। কারণ যেই ক্লাবে আমরা দিনের পর দিন থেকেছি সেই ক্লাবে ক্যাসিনোর কারণে আমরা ঠিকভাবে যেতেই পারতাম না। সার্বিকভাবে আমি মনে করি, একটা নেতিবাচক প্রভাব পুরো ক্রীড়াঙ্গনেই পড়বে। তবে সেটা দূর হয়ে যাবে যদি ক্লাবগুলো সত্যিকার অর্থেই খেলাধুলার চর্চা করে। আর এর জন্য সরকারের সহায়তা প্রয়োজন। ক্লাবগুলোর সৎ পথে স্থায়ী উপর্জানের ব্যবস্থা থাকলে আমি মনে করি কোনো ক্লাবই আর এই পথে হাঁটবে না।’

 

 

 

 

 

পূর্বকোণ/ম

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট