চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বৃষ্টিও বাঁচাতে পারল না বাংলাদেশকে

দেবাশীষ বড়–য়া দেবু

১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:০৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম টেস্ট
আফগানিস্তান : ৩৪২ ও ২৬০
বাংলাদেশ : ২০৫ ও ১৭৩
ফল : আফগানিস্তান ২২৪ রানে জয়ী

কোনভাবেই চট্টগ্রাম টেস্টকে বাঁচানো গেল না। বৃষ্টি আর্শীবাদ হয়ে এলেও শেষ রক্ষা হয়নি। এ বৃষ্টিই যেন পুরোপুরিই অবিচার করে যাচ্ছিলো সফরকারী আফগানিস্তানকে। টানা বর্ষণে আকাশের গুমরো মুখের সাথে রশীদ-ইব্রাহিমের মুখটা যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। অবশেষে অভিশাপ থেকে পরিত্রাণের জন্য মাত্র ৭০ মিনিটের সময় বেঁধে দেয়া হয় আফগানিস্তানকে। তাতেই বাংলাদেশকে ২২৪ রানে হারিয়ে রূপকথার ইতিহাস রচনা করার পাশাপাশি বাজিমাত করলো টেস্ট আঙিনায় নবাগত যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তান।

আগের দিনসহ সকালে অবিরাম বর্ষণে গতকাল যখন মাঠে গড়ানোর মতো কোন সুযোগ মিলছিলো না, এরই এক ফাঁকে আফগান দলপতি রশীদ খান বলেছিলেন, বাংলাদেশকে হারাতে আমরা কেবল ১ ঘণ্টার মতো সময় চাই। কাকতালীয়ভাবে সেটাই শেষ পর্যন্ত প্রতিফলিত হলো। অধিনায়ক রশিদ খানের দুর্দান্ত বোলিংয়ে সেটুকু সময়ই যেন যথেষ্ট ছিলো। অসাধারণ মানসিক দৃঢ়তা ও স্কিলের প্রমাণ রেখে অবিশ^াস্য দক্ষতায় ম্যাচটি বের করে নিয়েছে। অবিশ^াস্য এক পরাজয়ে বাংলাদেশ দল কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়লো। গতকাল টেস্টেও ৫ম ও শেষ দিনের প্রায় পুরোটাই ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে। আফগানদের আশাও ছিল ভেস্তে যাওয়ার মতো পর্যায়ে। তবে শেষ বিকেলে প্রকৃতি কিছুটা উদায় হয়ে খানিকটা সুযোগ দিল। আফগানরা সেটুকুই লুফে নিয়ে বাংলাদেশকে ২২৪ রানে হারিয়ে দিয়ে অবস্মরনীয় জয় আদায় করে নিলো। মাত্র তৃতীয় টেস্টেই আফগানদের এটি দ্বিতীয় জয়। ঐতিহাসিক এ জয়ে আফগানিস্তান এখন অস্ট্রেলিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে। অস্ট্রেলিয়াই প্রথম দল হিসেবে এ কৃতিত্ব আগেই দেখিয়েছে।

গতকাল দুপুরের দিকে দীর্ঘ বিরতির পর এক দফা খেলা হলেও সেখানে মাত্র ১৩ বল পর আবারও বৃষ্টি নামায় খেলা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আবারো বৃষ্টি বিরতি। শেষ দিকে ফের খেলা শুরু হলে ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট সময় বেঁধে দিয়ে ১৮.৩ ওভার খেলা বাধ্যতামুলক (মেন্ডেটরি ওভার) করা হয়। তখনো বাংলাদেশের হাতে ছিল ৪ উইকেট। এর মধ্যে একটি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, অন্যটি ড্যাসিং সৌম্য সরকার এবং বাকি ২ জন ছিলেন তাইজুল ইসলাম ও চট্টগ্রামের ছেলে নাঈম হাসান। এতো অনায়াসেই কাটিয়ে দেবার মতো। কিন্তু সম্ভব হলো না। সম্ভব হলো না, আর মাত্র ১০ মিনিট বা ২.৩ ওভার টিকে থাকা। ড্র করার মতো এর চেয়ে অবিশ^াস্য সুযোগ আর কিছু হতে পারে না। বৃষ্টির পর খেলা শুরু হলে চ্যালেঞ্জটা ছিল ৭০ মিনিটের। কিন্তু অবিশ্বাস্য ভাবে বাইরের বল খোচা মারতে প্রথম বলেই রশীদ খানের বলে কিপার জাজাইকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাকিব (৪৪)। এতে দলীয় ১৪৩ রানে ৭ম উইকেটের পতন ঘটে। পাশাপাশি বাংলাদেশের সম্ভাবনার কবর যেন ওখান থেকেই খোঁড়া শুরু হয়। সাকিব আল হাসান যেভাবে আউট হয়েছেন, তাতে বাইরে থেকে মনে হয়েছে, এ বলটি ধরার কোন প্রয়োজনই ছিলা না। অফ স্ট্যাম্পের বাইরে দিয়ে বলটি বেরিয়ে যাচ্ছিলো। বলটি সাকিব আল হাসানের ব্যাটের নিচের কানায় লেগে যায়। কিপার জাজাই এতে বেশ ভাল ক্যাচ তালুবন্দী করেন।

১৬৬ রানে রুদ্রমূর্তি ধারণ করা রশীদ খানের বলে এলবি হয়ে সাজঘরমুখী হন মেহেদী মিরাজ (১২)। এরপর একই রানে তাইজুল ইসলামকে দেয়া এলবি’র আউটটি ভুল ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায় টিভি রিপ্লেতে। রিভিউ না থাকায় আমপায়ারের ভুল সিদ্ধান্ত মাথায় নিয়েই ০ রান করা তাইজুল ফিরে আসেন। এক্ষেত্রে বোলারও সেই রশীদ খান। পরবর্তীতে ৫৮ বল খেলে থিতু হয়ে যাওয়া সৌম্য সরকার শেষ পর্যন্ত আশার আলো দেখিয়েছিলেন। লড়াই করে সতীর্থ নাঈম হাসানকে নিয়ে ম্যাচকে ড্র-এর দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সৌম্য সরকারও পারেননি দলকে উদ্ধার করতে। তিনিও কিছুতেই থামাতে না পারা রশীদ খানের দুর্দান্ত বোলিং-এর মুখে আত্মাহুতি দেন। অল-আউট হওয়া বাংলাদেশ দলের রান তখন ১৭৩।

এদিকে সৌম্য সরকারের উইকেট পতনের পর রশীদ খান যেভাবে দৌড় দিলেন, তাতে সতীর্থরা কিছুতেই থামাতে পারছিলেন না। বিশ্বজয়েও এমন আনন্দ হয় কি না সন্দেহ আছে, যে আনন্দটা রশিদ খান আর ইবরাহিম জাদরানরা করলেন। রশীদ খানের এভাবে উল্লাস করার অন্য আরেকটা কারণও রয়েছে। এক টেস্টে ১০ উইকেটের পাশাপাশি ফিফটি করা টেস্ট ইতিহাসে তিনিই প্রথম ব্যাটসম্যান। টেস্ট নেতৃত্বের অভিষেকে এই কীর্তি আর কারো নেই। তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন। খেলা শেষে চট্টগ্রামের সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বিজয়ীদের মাঝে ট্রফি প্রদান করেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট