চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

আফগান বোর্ড থেকে শিখতে পারে বিসিবি

টাইগারদের ব্যাটিংয়ে লজ্জা পেলো বৃষ্টিও

হুমায়ুন কবির কিরণ

১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:৩৫ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশকে লজ্জা থেকে বাঁচাতে পারতো বৃষ্টি কিংবা সাকিব- সৌম্যদের ক্রিজ আঁকড়ে উইকেটে টিকে থাকার মানসিকতা। বৃষ্টি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল কিন্তু টাইগার ক্রিকেটাররা সেই সাহায্য গ্রহণ করতে জানলেতো? লজ্জা থেকে তাই নিস্তার মিলেনি। টেস্ট ক্রিকেটে মাত্র ৩ ম্যাচ বয়সের আফগানিস্তানের কাছে ১১৫ ম্যাচ বয়সের বাংলাদেশের হারটা লজ্জারই।

সাগরিকায় গতকাল সৌম্য আউট হতেই রশিদ খান যেন ফেটে পড়বেন আরেকটু হলেই। তার উল্লাস তখন বুনো, কান পাতলে হয়তো কাবুল থেকেই কেউ শুনতে পাবেন সেটি। শেষ দিনের তিন সেশনের আড়াই সেশনই প্রায় গিয়েছিল বৃষ্টির কবলে, বাংলাদেশের বাকি ৪ উইকেট নিতে আফগানিস্তানের হাতে ছিল ৭০ মিনিটের মতো সময়, ১৮ ওভারের মতো। ১৫ ওভার ও ঘন্টাখানেকের কম সময়ের মাঝেই দুর্দান্ত রশিদ খানে কাজ সেরে ফেলল আফগানিস্তান। ২য় জয় পেতে মাত্র ৩ টেস্ট সময় লাগলো আফগানদের, অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ডে ভাগ বসাল তারা, পেল নিজেদের প্রথম ‘অ্যাওয়ে’ জয়। টেস্টে ২য় জয়ের স্বাদ নিতে বাংলাদেশের লেগেছিল ৬০ ম্যাচ। রশিদ খানরা যেভাবে চট্টগ্রাম টেস্টের শুরু থেকে স্বাগতিকদের উপর ছড়ি ঘুরিয়েছে তাতে ১৯ বছর টেস্ট আঙ্গিণায় বিচরণের পরও বড় শিক্ষনবীশ দল মনে হয়েছে টাইগারদের। লজ্জার চট্টগ্রাম টেস্টে চারদিনই ব্যাকফুটে ছিল সাকিব আল হাসানের দল। গতকাল ৫ম দিনে মাত্র একটি সেশনের প্রয়োজন ছিল অতিথিদের। কিন্তু ভোর থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টির দাপট বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পক্ষই যেন নিয়েছিল। প্রায় পুরো দিন বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পর শেষ বিকেলে শুরু হয় খেলা। ১৮.৩ ওভার টিকতে পারলেই ম্যাচটা ড্র করতে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় যেন বৃষ্টিও লজ্জা পেল! রশিদ খানের ঘূর্ণিবলে ১৭৩ রানেই প্যাকেট হয়ে গেল সাকিব এন্ড কোং। ২২৪ রানের বিশাল জয় পেল আফগানিস্তান। মাত্র তৃতীয় টেস্ট খেলতে নামা একটি দেশ প্রথম মোকাবেলায় ১৯ বছর টেস্ট খেলা একটি দেশকে হেলায় হারিয়ে বিশ্বজয়ের আনন্দ করলো মাঠে। তাতে বিসিবি কি হুঁশ ফিরে পেলো। প্রতিটি সিরিজ, টুর্নামেন্ট বা ম্যাচের আগে দল পরিবর্তন, যখন তখন লাইন আপে ছুরি চালানোর ফল যে ভালো হয় না সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখালো টেস্টে নবীশ আফগানরা। চট্টগ্রাম টেস্টে বাজে হারের পরও মানতেই হবে, টাইগারদের এই একাদশই আফগানদের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে। শুধু পরিকল্পনায় গলদ আর একদিনেই সাফল্য পাওয়ার বাজে মানসিকতা দলের সাথে জাতিকেও লজ্জায় ফেলে দিয়েছে। বিসিবি কর্তরা আফগান বিপর্যয়ের পর নিশ্চিতভাবেই একে বাদ দিবেন, ওকে একাদশে আনবেন। তবে যত যাই হোক টেস্ট ক্রিকেট মানে অভিজ্ঞতা এবং লড়াকু মানসিকতা, কচি কাঁচার মেলা নয়। আফগান লজ্জায় এখন ক্রিকেটারসহ টিম ম্যানেজম্যান্টের সবার শিক্ষা পেলেই হয়। তাছাড়া মাত্র ৩টি টেস্ট খেলা আফগানিস্তান ক্রিকেট দেখে সেদেশের বোর্ড থেকে চাইলে শিখতে পারে বিসিবিও।

গতকাল শেষ বিকেলে মাত্র এক ঘণ্টা ২০ মিনিটের জন্য খেলার সুযোগ করে দিলো বৃষ্টি, মাত্র ১৮.৩ ওভার। হাতে ৪ উইকেট। ছিলেন সাকিব আল হাসান এবং সৌম্য সরকার। টাইগার ভক্তরা ভেবেছিল অনায়াসেই হয়তো এই কয়টা ওভার কাটিয়ে দিতে পারবেন সাকিব-সৌম্য। কিন্তু পারলেন না তারা। আর মাত্র ১০ মিনিট টিকতে পারলেই ম্যাচ ড্র। কিংবা আর মাত্র ৩ ওভারেরও কম। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা পারলেন না। আফগানদের এই জয়ে অবদান আছে আম্পায়ারেরও। একটি দল যখন চরম লজ্জার মুখোমুখি। তখন আম্পায়ারের এমন ভুলও কি মেনে নেয়া যায়? তাইজুল ইসলামকে করা রশিদ খানের বলটি ডিফেন্স করলেন ব্যাটসম্যান। ব্যাটে লেগে প্যাডে গেলো বল। কিন্তু আম্পায়ার আঙুল তুলে দিলেন। রিভিউ বাকি ছিল না বাংলাদেশের। ফলে দুর্ভাগ্যই বরণ করতে হলো টাইগারদের। হার এমনিতেই অবধারিত ছিল। বৃষ্টি সেটাকে বিলম্বিতই করলো শুধু। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে সৌম্য সরকার আউট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যেন লজ্জায় অধোবদন হলো বাংলাদেশ। শেষ দিনে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২৭৪ রানের। জয়টা একেবারেই অসম্ভব। কিন্তু টাইগারদের মনে আশা ছিল অন্তত ম্যাচটাও যদি বাঁচা যায়! বৃষ্টি সেই আশা বাড়িয়ে দিয়েছিল কয়েকগুণ। মাঝে একবার মাঠে গড়িয়েছিল খেলা। কিন্তু ১৩ বল পর আবারও বৃষ্টি নামায় খেলা বন্ধ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত বিকাল সাড়ে ৩টা নাগাদ বৃষ্টি থামে এবং ৪টা ২০ মিনিটে খেলা শুরু হয়। আগেরদিন বড় গলায় সাকিব বলেছিলেন, তিনি আর সৌম্য মিলে ম্যাচটা জিতেই ফেলবেন। সাকিব নিজে ১৫০ আর সৌম্য করবেন ১২০ রান। যদিও কথাটা ছিল হাসিচ্ছলে। কিন্তু বিষয়টা মোটেও ঠাট্টা-বিদ্রুপের ছিল না। টাইগার ভক্তদের আশাবাদী মন কিন্তু তাতেও আশা রেখেছিল। অন্যদিকে আফগান অধিনায়ক রশিদ খান আশায় ছিলেন এক ঘণ্টা খেলা হলেও তারা জিতে যেতে পারবেন। আফগান মিডিয়া ম্যানেজার সৈয়দ সাদাত হোসেন প্রেসবক্সে এসে এই আশাবাদের কথা জানান। শেষ পর্যন্ত আফগানরাই পেরেছে। ১ ঘণ্টা ১০ মিনিটের সুযোগ পেয়েছে তারা এবং ১ ঘণ্টার মধ্যেই তুলে নিয়েছে বাকি চার উইকেট। অথচ, এই লজ্জা এড়াতে পারতেন সাকিব আল হাসান। যদি না তিনি শেষ মুহূর্তে মাঠে নেমেই শটটা খেলতে না যেতেন! দেখে-শুনে খেলে বলগুলো কাটিয়ে দিলেই হয়তো বাঁচানো যেতো এই টেস্ট। বৃষ্টির কল্যাণে পাওয়া সুযোগটাকে হেলায় হারিয়ে ফেললেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট