চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

৩৭৪ রানে এগিয়ে সফরকারীরা

লাগাম আফগানিস্তানের হাতে

দেবাশীষ বড়–য়া দেবু

৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:২৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম টেস্ট/ ৩য় দিন
আফগানিস্তান : ৩৪২ ও ৮ উই. ২৩৭
বাংলাদেশ : ১ম ইনিংসে ২০৫

অলৌকিক বলেন, আর অভাবনীয়ই বলেন, সেরকম কিছু না হলে চট্টগ্রাম টেস্টকে বাঁচানো’র জন্য বাংলাদেশের কোন পথই আর খোলা থাকছে না। ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে অসাধ্যই সাধন করতে হবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। চতুর্থ ইনিংসে এত বড় একটি স্কোর তাড়া করে জিততে হবে, ব্যাপারটা ভীষণ কঠিন। এমনকি ড্র করাটাও কষ্টকর হবে টাইগারদের। ম্যাচের ড্রাইভিং সিটে বসে যাওয়া আফগানিস্তান এখন জয়ের স্বপ্ন দেখতেই পারে। তবে এ কথা ঠিক যে এ ম্যাচে সফরকারীদের হারার সম্ভাবনা একরকম নেই বললেই চলে। তাহলে কী, বাংলাদেশের হারটা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এ ম্যাচে জিতলে হলে বাংলাদেশকে রেকর্ড গড়তে হবে। গতকাল ম্যাচে ৩য় দিনে মাত্র ২০ মিনিটেই বাংলাদেশের শেষ ২টি উইকেটের পতন ঘটলে ২০৫ রানে অল – আউট হয় সাকিব বাহিনী। আগের দিনের ১৯৪ রানের সাথে আর মাত্র ১১টি রান যোগ হয়। ১৩৭ রানে এগিয়ে থেকে ২য় ইনিংসে খেলতে নামে আফগানিস্তান। কিন্তু শুরুতেই সাকিব ম্যাজিকে সফরকারীরা ব্যাকফুটে চলে যায় এবং এক পর্যায়ে ২৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বসে। কিন্তু সেখান থেকে সীমাহীন দৃঢ়তায় ম্যাচে ফিরে আসে আফগানিস্তান এবং দিন শেষে ৮ উইকেটে ২৩৭ রান সংগ্রহ করলে তৃতীয় দিনের খেলা শেষে ৩৭৪ রানে এগিয়ে রয়েছে। গতকার আলোকস্বল্পতার কারণে ২০ মিনিট আগে তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করতে হয় আম্পায়ারদের। আজকের খেলা সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এতে ৯৫ ওভারের খেলা হবে বলে জানা গেছে।

কিন্ত আজ ম্যাচে ৪র্থ দিনে আফগানিস্তান ঠিক কোথায় গিয়ে থামবে, তা কিন্তু জানার কোন উপায় নেই। বাকি ২ উইকেটে আর কত রান যোগ করে রশিদ খানের দল, সেটাই এখন দেখার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৪০০ বা তারও বেশি রানের টার্গেট যদি বাংলাদেশের সামনে ছুঁড়ে দিতে পারে আফগানরা, তাহলে সেই রান পাড়ি দিয়ে টাইগারদের ম্যাচ জয় হবে প্রায় অসম্ভব। তবে এই ৪০০ রান করতে আফগানিস্তানকে আরো ২৬ রান করতে হবে। আফসার জাজাই ক্রিজে আছেন বলে সেই আশাটা করতে পারছে সফরকারীরা। আফগানদের নির্ভরতার প্রতীক হয়ে থাকা আফসার জাজাই গতকাল ৬ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ৩৪ রানে অপরাজিত রয়েছেন। তার সঙ্গে আছেন ইয়ামিন আহমদজাই।

গতকাল বাংলাদেশ তাদের প্রথম ইনিংসে কোন রান যোগ না করেই ইনিংসের তৃতীয় বলেই উইকেট হারায়। তাইজুল অহেতুক মারতে গিয়ে বোল্ড হন নবীর বলে। এরপর ২০৫ রানে নাঈম হাসানকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট দখল করেন।

আফগানদের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে নিজের জাত চিনিয়েছেন সাকিব আল হাসান। টানা দুই বলে দুই উইকেট তুলে নিয়ে সফরকরীদের বিধ্বস্ত করেন টাইগার অধিনায়ক। এতে ইনিংসের তৃতীয় বলেই ইহসানউল্লাহ (৪) এবং পরের বলে ১ম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান রহমতউল্লা (০)- কে শুন্য রানে ফিরিয়ে দেন। এরপর দলীয় ২৮ রানে কারিশমা দেখান চট্টগ্রামের ছেলে নাঈম হাসান। সৌম্য সরকারের সহায়তায় তিনি ১২ রান করা হাসমতউল্লাহকে সাজঘরে পাঠান। কিন্তু বাংলাদেশের আর এগুতে দেয়নি সফরকারীরা। সীমাহীন দৃঢ়তায় প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়ে ম্যাচে দারুণভাবে ফিরে আসে আফগানিস্তান ক্রিকেটের নবীশ এই দলটি দেখিয়েছে কিভাবে ধৈর্য্য সহকারে টেস্ট খেলতে হয়। ২৮ রানে তৃতীয় উইকেটের পতনের পর সেখান থেকে ১০৮ রানের অসাধারণ এক পার্টনারশিপে চালকের আসনে চলে যায় আফগানিস্তান। ইব্রাহিম জাদরান এবং আসগর আফগান যারপরনাই দৃঢ়তার সাথে কাজটি দুঃসাহসিকভাবে সম্পন্ন করেছেন। এতে বরাবর ফিফটি করে আউট হন আসগর। দলের রান তখন ১৩৬। তখনো অভিষিক্ত ইবরাহিম জাদরান বাংলাদেশের বোলারদেও রীতিমতো শাসন করছিলেন। একপ্রান্তে ব্যাটসমানরা আসা যাওয়ার পথে থাকলেও ইব্রাহিম অবিচল আস্থায় সামনের দিকে এগুতে থাকেন। পাশাপাশি সচল রানের রাখেন রানের চাকা। অবশেষে দলীয় ১৭১ রানে তিনি ফেরেন ৮৭ রান করে। তার ইনিংসে ৬টি চার ও ৪টি ছক্কার মার ছিল। বল খেলেছিলেন ২০৮টি। তিনি নাঈম হাসানের বলে লং অনে মুমিনুল হককে ক্যাচ দেন। মোহাম্মদ নবী ১ম ইনিংসে ০ রান করার পর ২য় ইনিংসেও ৮ রান করে ব্যর্থ হন। এটাই ছিল টেস্ট ক্রিকেটে তার শেষ ম্যাচ। এরপর ২২ বলে ২৪ রান করে মাঠ ছাড়লেন ১ম ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি করা আফগান অধিনায়ক রশীদ খান। এরপর ২৩৫ রানে কায়েস আহমেদ ২৬ বলে ১৪ রান করে ফিরে যান সাকিবের বলে এলবি হয়ে। দিন শেষে আফগানিস্তানের সংগ্রহ ছিল ৮ উইকেটে ২৩৭ রান। সাকিব আল হাসান ৫৩ রানে ৩টি, তাইজুল ৬৮ রানে ২টি ও নাঈম হাসান ৬১ রানে ২ উইকেট নেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট