চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আফগান দাপটে চাপে বাংলাদেশ

চট্টগ্রাম টেস্টের ২য় দিন হ আফগানিস্তান : ১ম ইনিংস ৩৪২ হ বাংলাদেশ : ১ম ইনিংসে ৮ উই. ১৯৪

দেবাশীষ বড়–য়া দেবু

৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:২৮ পূর্বাহ্ণ

আপাতত বেশ কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছে আফগানিস্তান। তবুও কেন জানি, আফগানিস্তানকে ঠিক চালকের আসনে বসানো যাচ্ছে না। সেটা সম্ভব হয়েছে, বেশ ভাল বোলিং করার পর, আরো ভাল ব্যাটিং করা তাইজুল ইসলামের সীমাহীন সাহসিকতা এবং মোসাদ্দেক হোসেনের বীরোচিত ব্যাটিং-এর কারণে। আফগানিস্তানের প্রথম ইনিংসে ৩৪২ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে ১ম ইনিংসের এক পর্যায়ে এক ওভারেরই অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও ডিপেন্ডেবল মুশফিক রহিম আউট হয়ে যান। এতে ৮৮ রানে প্রথম সারির ৫ জন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশ। এরপর দলীয় ১০৪ রানে মাহামুদউল্লাহ এবং ১৩০ রানে মমিনুল ইসলাম সাজঘরমুখী হলে খাদের কিনারায় গিয়ে পৌঁছে টাইগারদের ইনিংস। তখনই প্রশ্ন উঠেছিলো এই বুঝি ফলো অনে পড়লো বাংলাদেশ। সেটা কোনমতে কাটানো সম্ভব হলেও রশিদ খানের স্পিন ঘূর্ণিতে ১৪৬ রানেই ৮ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল বাংলাদেশ।

ঠিক সেই ধ্বংস স্তূপ থেকে প্রচ- সাহসিকতায় টেনে তোলার কাজে হাত দেন ঐ মোসাদ্দেক হোসেন ও তাইজুল ইসলাম। বিশ^মানের স্পিন বলের প্রতিরোধ গড়ে দ্বিতীয় দিনের শেষদিকে তারা আর কোন বিপদ হতে দেননি। অবিশ^াস্য দক্ষতায় ৮ম উইকেট জুটিতে অপরাজিত ৪৮ রানের মহামূল্যবান ইনিংস গড়ে, বাংলাদেশ দলকে চরম হতাশার মাঝেও আলোর পথ দেখিয়েছেন। ১৪৮ রানে ৮ম উইকেটের পতনের সময়ে বাংলাদেশ তখনো ১৯৪ রানে পিছিয়ে ছিলো। গতকাল দ্বিতীয়দিনের খেলা শেষে সেটা ১৪৮ রানে এসে দাঁড়িয়েছে। আজ ফাস্ট সেশনে এ দু’জনকে আরো কঠিন পরীক্ষায় মুখোমুখি হতে হবে। মোদ্দা কথা এ দু’জনের উপরই নির্ভর করছে বাংলাদেশের ভাগ্য। আজ মোসাদ্দেক ৪৪ এবং তাইজুল ১৪ রানে অপরাজিত থেকে খেলা শুরু করবেন।

গতকাল আগের দিনের ৫ উইকেটে ২৭১ রান নিয়ে খেলা শুরু করেছিলো সফরকারী আফগানিস্তান। তার সাথে আরো ৭১ রান যোগ করে সফরকারীরা ৩৪২ রানে ১ম ইনিংস শেষ করে। আগের দিনে ৮৮ রানে অপরাজিত থাকা আসগর আফগানকে ৯২ রানে ফিরিয়ে দিয়ে আগের দিনের মতো গতকালও সাফল্য এনে দেন তাইজুুল ইসলাম। এরপর দলীয় ২৯৯ রানে আফসার জাজাই (৪২) কেও সাজঘরে পাঠিয়ে তাইজুল ইসলাম দর্শকদের আনন্দে ভাসান। কিন্তু শেষ দিকে অধিনায়ক রশীদ খানের হাফ সেঞ্চুরির উপর ভর করে ৩৪২ রানে পৌঁছে যায় আফগানিস্তান। রশীদ খান ৬১ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৫১ রান করে আউট হন। এটা টেস্ট ইতিহাসে আফগানিস্তানের দলীয় সর্বোচ্চ রান। এর আগে চলতি বছরের মার্চে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে দেরাদুন টেস্টে ৩১৪ রান করেছিলো আফগানিস্তান।

বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটির আয়ু ছিল মাত্র ৪টি বল। প্রথম ওভারের চতুর্থ বলেই উইকেট বিলিয়ে দেন ওপেনার সাদমান ইসলাম। ব্যক্তিগত ও দলীয় ০ রানে সাজঘরে ফেরেন এই ব্যাটসম্যান। ইনিংসের ২০তম ওভারে ব্যক্তিগত ১৭ রানে অপর ওপেনার সৌম্য সরকারকে বিদায় করেন নবী। এরপর দলীয় ৫৪ রানে রশিদ খানের প্রথম শিকারে পরিণত হন ৬৬ বলে ৩৩ রান করা লিটন। ৫৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে প্রাথমিক বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ৪র্থ উইকেটে অধিনায়ক এসে মমিনুল ইসলামের সাথে জুটি বেধে প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু আগের দিনের কথার সাথে কাজের মিল রেখে মাত্র ১১ রান করা সাকিব আল হাসানকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন রশীদ খান।

রশীদ খান বলেছিলেন, যত তাড়াতাড়ি সাকিবকে সাজঘরে ফেরানোর চেষ্টা তাদের থাকবে। সে পরিকল্পনায় তারা সফল হয়েছেন। একই ওভারে রানের খাতা খোলার আগেই মুশফিকুর রহিমকে ফেরালেন রশিদ। তখন ৫ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৮৮ রান বাংলাদেশের। তবে মুশফিক বেনিফিট অফ ডাইটে বেঁচে গেলেও বেঁচে যেতে পারতেন। এরপর মি. ক্রাইসিস ম্যান মাহামুদউল্লাহ (৭) এবং এক প্রান্ত আগলে রাখা মুমিনুলও (৫২) আগের ব্যাটসম্যানদের পথে হাঁটেন। ৭ উইকেট হারিয়ে দলের রান তখন ১৩০। শেষ পর্যন্ত মোসাদ্দেক হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাটে ভর করে ফলো অন এড়ায় বাংলাদেশ। দলীয় ১৪৬ রানে কায়েসের বলে ব্যক্তিগত ১১ রানে ফিরেন মিরাজ। তারপর থেকে ছিলো তাইজুল ইসলাম এবং মোসাদ্দেক হোসেনের প্রতিরোধ এবং অসামান্য দৃঢ়তায় দলের ইনিংসকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া। আফগানিস্তানের সফল বোলার রশীদ খান ৪৭ রানে ৪টি, মোহাম্মদ নবী ৫৩ রানে ২টি এবং ইয়ামিন ২১ ও কাইস ২২ রানে ১টি করে উইকেট নেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট