চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আদুরে কন্যা ঋতুপর্ণা এখন তাদের গর্ব

নিজস্ব সংবাদদাতা

২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ | ১২:১৬ অপরাহ্ণ

রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের মঘাছড়ি গ্রামে জন্ম সাফ জয়ী দলের মিডফিল্ডার ঋতুপর্ণা চাকমার। ঘাগড়া প্রধান সড়কের প্রায় এক ঘন্টার অধিক পথ হেঁটে যেতে হয় ঋতুপর্ণার বাড়িতে। ২০১৫ সালে বাবাকে ও কয়েক মাস আগে আদরের ছোটভাইকে হারান ঋতু। চার বোনের মধ্যে সবার ছোট। ২০০৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর দরিদ্র পরিবারে জন্ম ঋতুপর্ণা। জেঠিমা নিলোবানু চাকমা বাংলা সিনেমা দেখতে খুব পছন্দ করতেন। আর তাই কলকাতার নায়িকা ঋতুপর্ণার সেনগুপ্তার নামে মায়াকাড়া চেহারার ওই শিশুকন্যার নাম রাখলেন ঋতুপর্ণা চাকমা।

সময়ের পরিক্রমায় ঋতুপর্ণা নাম কুড়িয়েছেন ঠিকই, কিন্তু নায়িকা নয়, ফুটবলার হয়ে। লেফট ব্যাক এবং লেফট উইঙ্গার দুই পজিশনেই চমৎকার খেলতে পারেন সুদর্শনা ঋতু। ২০১২ সালের ঘটনা। পড়েন তৃতীয় শ্রেণিতে। বয়স মাত্র ৯। ওই বয়সেই রাঙামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার মঘাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হয়ে খেলেন বঙ্গমাতা স্কুল ফুটবল। সেবার তাঁর স্কুল রানার্সআপ হয়েছিল। এর পরের দু’বছরও খেলেন। ২০১৩ আসরে তার স্কুল হয়েছিল তৃতীয়।

ভাল খেলার সুবাদে ২০১৭ সালে জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৫ দলে ডাক পান। এরপর অ-১৬, ১৭, ১৮ ও ১৯ দলেও খেলেছেন। সিনিয়র বা জাতীয় দলেও খেলার সুযোগ পেয়েছেন বেশ কয়েকটি ম্যাচে। মহিলা ফুটবল লিগে নাসরিন স্পোর্টস একাডেমির হয়েও খেলেছেন। জাতীয় দলে ১৫ নম্বর জার্সি পড়ে খেলেন ঋতু। দশ বছর আগে যখন খেলা শুরু করেন, তখন ঋতুর এলাকার লোকজন তার ফুটবল খেলা নিয়ে নেতিবাচক কথা বলতো। এদিকে অভাব-অনটনের সংসার।

তবে কৃষক বাবা বরজ বাঁশি চাকমা মেয়েকে সমর্থন-উৎসাহ দিতেন। মেয়েকে ধার করে খেলতে যাবার যাতায়াত ভাড়া এনে দিতেন অনেক কষ্টে। বাবার স্বপ্ন ছিল, মেয়ে একদিন জাতীয় দলে খেলবে। ঠিকই খেলেছে তার মেয়ে। কিন্তু সেটা তিনি দেখে যেতে পারেননি। ২০১৫ সালে মারা যান তিনি। এই আক্ষেপে এখনও পুড়ছেন ঋতু। তবে মেয়ের গর্বে দারুণ খুশী মা বোজপুতি চাকমা।

তিনি বলেন, ‘এলাকার মানুষ ঋতুকে নিয়ে গর্ব করতেছে। তার বাবা যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে তিনি এতই খুশি হতে যা বলার মত না। ঋতুর খেলা দেখেছিলাম। খুবই ভালো লেগেছিলো। এভাবে দেশের ও গ্রামের সুনাম অর্জন ছিনিয়ে আনবে তা কখনও ভাবিনি।’

ঘাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন বলেন, ‘গ্রামের ও দেশের সুনাম অর্জন ছড়িয়ে দিয়েছে ঋতুপর্ণা। সে আমাদের ইউনিয়নের মেয়ে। ছোটবেলা থেকে সে খেলাধুলার প্রতি খুবই মনোযোগী। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’ ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দ্রা দেওয়ান বলেন, ‘ঋতুপর্ণা চাকমা ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে বিকেএসপিতে চলে যান।

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট