চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

রুপনার বেড়ে উঠার গল্প

নিজস্ব সংবাদদাতা

২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ | ১২:০৮ অপরাহ্ণ

জন্মের আগেই বাবাকে হারিয়েছেন। তারপর সেই মেয়েকে নিয়ে মা কালাসোনা চাকমা অনেক কষ্টে দিনযাপন করছেন। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট রূপনা। আর্থিক অভাবের কারণে ভাল স্কুলে পড়ার সুযোগ হয়নি। অভাবের সংসারে অনাহারে থেকেছেন অনেকদিন। অবশেষে নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে ২০১১ সাল থেকেই স্কুল শিক্ষকের সাহায্য ও অনুপ্রেরণায় ফুটবলে তাঁর পথ চলা শুরু।

রুপনার গ্রামের বাড়িতে যেতে আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে। তিনি হাজাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াকালীন ২০১২ সালে বিদ্যালয় থেকে একটি দল নানিয়ারচর উপজেলা সদরে ফুটবল টুর্নামেন্ট প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।

রূপনা চাকমার খেলা দেখে মন কেড়ে নেয় শিক্ষক বীরসেন চাকমার। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ঘাগড়া এলাকায় নিয়ে যান বীরসেন চাকমা ও শান্তি মনি চাকমা। অভাবের সংসারে মেয়ের ভরনপোষণ করা মায়ের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ায় নিজের ঘরে আশ্রয় দিয়ে সন্তানের মতো লালন করেন বীরসেন ও শান্তি মনি। পাশাপাশি ঘাগড়া স্কুল মাঠে গোলরক্ষকের প্রশিক্ষণ দেন তাঁরা।

সেই শিক্ষকদের পরিশ্রমে নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ির ভূঁইয়াদমের রূপনা আজ দক্ষিণ এশিয়ার সেরা গোলরক্ষক। মেয়ের সেই জীবন যুদ্ধের গল্পটা শোনালেন তাঁর মা কালাসোনা চাকমা।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘ভেবেছিলাম মেয়েকে আর পড়াশোনা করাতে পারবো না। আগে তো বাঁচতে হবে। একদিন বইপত্র সব বস্তায় ঢুকিয়ে ফেলেছি। তবে রূপনার শিক্ষক বীরসেন চাকমা অনেক ভালো। রূপনাকে অনেক সাহায্য করেছেন, ঘাগড়া বহুমুখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়াসহ থাকা খাওয়ার সু-ব্যবস্থা করেছেন।’

তিনি আরোও বলেন, ‘এক পর্যায়ে শিক্ষক বীরসেন চাকমার তত্ত্বাবধায়নে থেকে লেখাপড়া ও খেলাধুলা অনুশীলন চালিয়ে গেছেন। বাচ্চাটারে নিয়ে অনেক কষ্ট করছি। কোনো মতে ডাইল-ভাত খাইয়া বাচ্চাটারে দাঁড় করাইছেন সেই বীরসেন। মাইয়া মানুষ কোন জায়গায় নিরাপদ? দিমু যে দুইডা টাকা, হেই সামর্থ্য আছিল না। আমার জীবনটা একটা কষ্টের সাগর। আমি তো কষ্ট পাইছি। রূপনাও প্রচুর কষ্ট পাইছে। আমাকে অনেক মানুষ সাহায্য করছে আমি তাদের ঋণ কখনও শোধ করতে পারবো না।’

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট