চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

অশ্রুসিক্ত নয়নে বিদায় নিলেন ফেদেরার

স্পোর্টস ডেস্ক

২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ | ৬:৫২ অপরাহ্ণ

টানা ২৪ বছর র‌্যাকেট হাতে দর্শকদের মন জয় করেছেন রজার ফেদেরার। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সব যে ছেড়ে যেতে হয় সেটাই মনে হয় চিরন্তন সত্য। তাইতো বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে রজার ফেদেরারকে বলে বোঝাতে হলো, তার খারাপ লাগছে না। বরং আজ তিনি সুখী। এই কান্না আসলে আনন্দাশ্রু!

 

জন ম্যাকেনরোর চোখে যিনি ‘সবচেয়ে সুন্দর টেনিস উপহার দেওয়া একজন’, কিংবদন্তি বিয়ন বোর্গ যার মতো টেনিস খেলার ইচ্ছা পোষণ করেন এখনো, সেই ফেদেরারই ছেড়ে যাচ্ছেন টেনিস কোর্ট! তার বিদায়ের দিনে লেভার কাপের কোর্টে যেন রীতিমতো আবেগের বিস্ফোরণই ঘটে গেল!

 

ম্যাচের পর কোর্টের ধারে রাখা সোফায় বসে কাঁদছেন ফেদেরার। তার পাশে বসে কাঁদছেন গত দু’দশকের প্রবল প্রতিপক্ষ রাফায়েল নাদাল। নোভাক জোকোভিচ, অ্যান্ডি মারেরা পিছনে দাঁড়িয়ে রইলেন শূন্য দৃষ্টি নিয়ে। শিশুর মতো কেঁদেই চলেছেন ফেদেরার। বাধ মানছে না তার চোখের জল। হাত দিয়ে মুখ ঢাকলেন ২০টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিক। তখনও স্থির লেভার কাপে তার দলের সতীর্থরা।

 

হাউ হাউ করে কাঁদছেন। জীবনের প্রথম ভালবাসার সঙ্গে বিচ্ছেদ। বুকের ভিতর থেকে কষ্টটা যেন দলা পাকিয়ে উঠে আসছে। দর্শক ভর্তি স্টেডিয়ামের মাঝে দাঁড়িয়ে একা ফেডেরার। ‘ও-২ এরিনা’-র ধুসর কোর্টের চারপাশ তখন আরও কালো, অন্ধকারে ঢাকা।

 

শুধু সতীর্থরাই নন, টেনিস-জীবনের শেয প্রতিযোগিতার প্রতিপক্ষরাও শোকাচ্ছন্ন। চোখের কোণ চিকচিক করছে তাদেরও। ফেদেরারকে বুকে টেনে নিলেন ‘অবশিষ্ট বিশ্ব’ দলের কোচ জন ম্যাকেনরো।

 

দর্শকরা কাঁদছেন। হাততালি দিচ্ছেন। প্রিয় নায়কের বিদায় মানতে পারছেন না তারা। অনুরাগীদের কাছ থেকে বিদায় চেয়ে নেওয়ার সময়ও আবেগ সামলাতে পারলেন না ফেদেরার।

 

এ বার কিছু বলতে হবে। আনুষ্ঠানিকতা! খানিকটা সামলে নিলেন নিজেকে। কান্না ভেজা মুখেই তখন হালকা হাসির রেখা। ‘রাজা’ কি হাসছেন? না কি কান্না ঢাকছেন?

 

খেলার কোর্ট ছাড়ার পালা হোক না পূর্ব ঘোষিত, পরিকল্পিত— ফেদেরারের সামনে তখন ইউরোপ দলের কোচ বিয়র্ন বর্গ, নাদাল, জোকোভিচ, মারে-সহ বাকি সতীর্থরা। ফেদেরারের যাওয়ার পথ আগলে দাঁড়িয়ে তারা।

 

শেষ ম্যাচ খেলা হয়ে গিয়েছে। ২৪ বছরের টেনিস-জীবন সবে অতীত। প্রাক্তন হয়ে যাওয়া ফেডেরার নিজেকে সামলাতে পারলেন না। ভেঙে পড়লেন কান্নায়। এগিয়ে এলেন মিরকা। তাঁকে শক্ত করে জড়িয়ে স্ত্রী। গালে, কপালে একের পর এক চুমু খাচ্ছেন। কানে কানে কিছু বলছেন। হয়তো বলছেন, ‘নিজের আবেগ সামলাও।’

সব আনুষ্ঠানিকতার পর্বও শেষ। যে দর্শকরা এত বছর ধরে ক্রমাগত উৎসাহ দিয়েছেন, ভালবেসেছেন— তাদের বিদায় জানালেন ফেদেরার। পুরো কোর্ট ঘুরলেন। হাত নেড়ে দর্শকদের ধন্যবাদ জানালেন।

ফেদেরার বার বার বলেছেন, ‘এটা আনন্দের কান্না।’ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, ‘কোনও মতে কেটে গেল, তাই না? আমি খুশি। তোমাদের যেমন বলছিলাম। আমার কোনও দুঃখ নেই।’

 

পূর্বকোণ/পিআর/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট